রাজনগরে পানিতে ডুবে মরে যাওয়া শিশুর লাশ উত্তোলন আবার কবরে লাশ দাফন
স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজনগর উপজেলার সুনামপুর গ্রামে পানিতে ডুবে মরে যাওয়া শিশুর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিসেট্রট আদালতের এক আদেশে রাজনগর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান এর উপস্থিতিতে আদালতের মাধ্যমে সাড়ে ৫ বছর বয়সী সোহান আহমদ ইমাদ এর লাশ উত্তোলন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন-রাজনগর থানার ওসি (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিয়াউল ইসলাম, উত্তরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিকসহ অনেকেই।
পরে মঙ্গলবার ১০ জুলাই বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামপুর গ্রামের হান্নান মিয়া ও শামীমা বেগম (খুশিয়ারা) এর পুত্র ইমাদ প্রতিদিনের মত খেলার সাথী মরইয়মের সাথে পুকুর পাড়ের নিকটবর্তী একটি খালের উপর নৌকাতে জাম খেতে খেতে উঠে। তাৎক্ষনিক নৌকায় নড়া-চড়া শুরু হলে ওই সাথী লাফ মেরে পাড়ে উঠলে সে নৌকা থেকে পড়ে ডুবে যায়। পরে স্বজনরা খুজাখুজি করে ওই খাল থেকে তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ঘটনাস্থলের পশ্চিমের বাড়ির ছুফান মিয়ার শিশু ছেলে জাবেল জানায়, ঘটনার সময় ইমাদ খেলার সাথী মরইয়ম এর সাথে ঘটনার কিছুক্ষণ আগে নৌকাতে উঠে। এক পর্যায়ে নৌকায় নড়াচড়া শুরু হলে মরইয়ম লাফ দিয়ে পাড়ে উঠে যায় ও ইমাদ নৌকা থেকে পাড়ে যায়।
নিহতের চাচাতো ভাই আজমল আলী ও চাচাতো বোন পুষ্প বেগম ও আরেক চাচাতো ভাই রেদওয়ান মিয়া জানান, সাঁতার না জানায় নৌকা চড়তে গিয়ে পানিতে ডুবে সে মারা গেছে। ওই দিন বিকেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে অবহিত করে তাকে দাফন করা হয়েছে। এদিকে নিরীহ এক পক্ষকে ফঁসাতে আদালতে মামলা করেছেন নিহতের মা শামীমা বেগম ।
নিহতের চাচা ফারুক মিয়া, ইলিয়াছ মিয়া, চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম, আলমগীর কবীর, রেদুয়ান মিয়া, আজমল আলী, আব্দুর রকিব, আতাউর রহমান, আব্দুর রশীদ, আব্দুর রহিম, আব্দুল কুদ্দুছ ও নিহতের পিতা হান্নান মিয়া, মাতা শামীমা বেগমের অনুমতিক্রমে স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক ও ওয়ার্ড সদস্য হুমায়ুন কবীর কে জানিয়ে তাদের অনুমতিক্রমে ওইদিন লাশ দাফন করা হয়। ওই দিন বাদ আছর সুনামাপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাজার ইমামতি করান নিহতের চাচাতো ভাই মাওলানা আব্দুল আলিম।
বাড়ির নিকট আতœীয়রা জানিয়েছেন, লাশ দাফনের পরদিন শামীমা ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে একই উপজেলার ফতেপুর ইউপির শাহাপুর গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখানে গিয়ে ভাইদের প্ররোচনায় রাজনগর থানায় মিথ্যা মামলা করতে গেলে থানা ঘটনার সত্যতা না পেয়ে স্থানীয় চেয়াম্যানের মাধ্যমে সমাধান করতে বলেন।
পরবর্তীতে শামীমা গত ১৮/০৬/২০১৮ ইং তারিখে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমল আদালতে আব্দুল মালিকসহ মোট ৫ জনকে আসামী করে একটি পিটিশন মোকদ্দমা দায়ের করেন (মামলা নং-১৭৫)।
এদিকে ঘটনার দিন পাশ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমাদকে নিয়ে দুবার পৃথক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার কাগজ পত্র তার স্বজনদের কাছে সংরক্ষিত আছে বলে জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজনগর থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম বলেন, লাশ ময়না তদন্ত শেষে আবার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাবার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উত্তরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক জানান, কোন বাচ্চার প্রতি কেউ নির্দয় হতে পারেনা। এলাকায় খুজখবর নিয়ে জেনেছি সে নৌকাতে উঠে খেলা করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। পরবর্তীতে তার লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন