রাজনগরে প্রবাসীর স্ত্রী বাবলী আখতার হত্যাকান্ড- আগের দিনই করা হয় হত্যার পরিকল্পনা
বিশেষ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় প্রবাসী স্ত্রী বাবলী আখতারকে খুনের আগের দিনই করা হয় হত্যার পরিকল্পনা। জ্যা রুমা বেগম, তার প্রেমিক তুহিন মিয়া ও ননদ মিলন বেগম ছিল হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নেয়। রিমান্ডকালে এমনটাই নিশ্চিত হয় পুলিশ। এছাড়াও আসামীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার ব্যবহৃত দা, ছুলফির সিক, জিআই পাইপ, শ^াশুড়ীর রক্ত মিশ্রিত শাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসামীদের রিমান্ড শেষে ২০ জুন মঙ্গলবার বিকালে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের তাহারলামু গ্রামের সৌদি প্রবাসী সুরুক মিয়ার স্ত্রী গৃহবধু বাবলী আখতার (২৬) হত্যার ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার জ্যা রুমা বেগম (৩০), শাশুরী মাখন বিবি (৫৫), ননদ মিলন বেগম (৩৫), তুহিন মিয়া (৩১) ও লেছু মিয়াকে (৫০) রিমান্ডে নিলে বেরিয়ে আসে বিভিন্ন তথ্য। বাবলীর স্বামী সৌদিআরব প্রবাসী সুরুক মিয়া সৌদিআরবে বীমায় পাওয়া অর্থ পরিবারের অগোচরে ব্যাংকে জমা রাখেন। এ বিষয়টি বাবলী আখতারের শ^শুরবাড়ীর লোকেরা জেনে যান। এনিয়ে তাদের মধ্যে বেশ বিবাদ ছিল। নির্যাতন করা হতো বাবলী আখতারকে। বাবলী বেগম তার মাকে ফোনে বলতো তাকে মেরে ফেলা হবে। এখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এদিকে জ্যা রুমা বেগমের পরকিয়া সম্পর্ক ছিল পাশের বাড়ির দেবর তুহিন মিয়ার সঙ্গে। তারা প্রায়ই একত্রে থাকতেন। তুহিনকে আটকের সময় তার বিছানার নিচে একটি ‘ইউ এন্ড মি’ ব্র্যান্ডের কন্ডম পাওয়া যায়। এছাড়াও তার (তুহিন মিয়া) মানি ব্যাগে এবং জ্যা রুমা বেগমের বিছনার নিচেও একই ব্র্যান্ডের দুটি কন্ডম পাওয়া যায়। এ থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয় তাদের মধ্যে ছিল। বিষয়টি তুহিন স্বীকার করলেও রুমা বেগম স্বীকার করেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের পরকিয়ার বিষয়টি কোন ভাবে বাবলী আখতার জেনে যান। রুমা বেগমের স্বামী হাবিব মিয়া সৌদিআরব থেকে দেশে ফেরার কথা আছে ঈদের পরে। তিনি আসলে বাবলীর মাধ্যমে বিষয়টি জেনে গেলে রুমার সংসার ভেঙ্গে যাবে এমন আশঙ্কা ছিল রুমা বেগমের। ব্যাংকের টাকা ও রুমার পরকিয়া-এ দুটি কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আসামীদের দেয়া বক্তব্য এবং বিভিন্ন পরিপাশির্^ক অবস্থা থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, বাবলীকে হত্যার আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকালেই এ পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার সেহরী শেষে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে হত্যায় অংশ নেয়া তুহিন ও অন্যরা। তাদেরকে দরজা খুলে দেয় জ্যা রুমা বেগম। বিষয়টি বুঝতে পেরে বাবীল ঘর থেকে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে দৌড় দিয়ে সামনের দিকে চলে আসে। এসময় পেছন থেকে থাকে ধরে ফেলে আসামীরা। এসময় তুহিন পেছন থেকে তাকে আঘাত করে মাথায়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য রুমা লেচু মিয়া তার হাতেপায়ে ধরে রাখে। পুলিশ বলছে ঘটনা আড়াল করার জন্য বাড়ির সামনের গেটে বিছানা চাদর দিয়ে পর্দা দেয়া হয়। পর্দা দেয়া হয় ঘরের গ্রীলেও। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আলা উদ্দীন জানান, আসামীদের দেয়া বক্তব্য ও তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের পর পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে তারাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবলী আখতারকে হত্যা করেছে। মুকিত নামে একজন আসামী পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে পারলে পুলিশ অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে।
মন্তব্য করুন