রাজনগরে বন্যায় ৭১টি গ্রাম প্লাবিত, ৪০ হাজার লোক পানিবন্দি
![](https://i0.wp.com/www.patakuri.com/wp-content/uploads/2024/06/Flood-20-June-2024.00_18_31_17.Still005.jpg?fit=800%2C445&ssl=1)
আউয়াল কালাম বেগ॥ কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের ৭১ টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ডুবে গেছে নিম্নঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। এছাড়াও উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক হেক্টর জমির আউশধান ও গীস্মকালীন শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। রাজনগরে প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দুদিকে বহমান মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্যার আশংকা তীব্র হচ্ছে। মনু ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নদীর পানি সমান থাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে টেংরা ইউনিয়নের উজিরপুর ও কান্দিকুল এলাকায় বাঁধ ভাঙ্গনের আশংখায় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ টিপু খান স্থানীয়দের নিয়ে বাঁধ মেরামতের প্রানপন চেষ্টা করছেন। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ন এলাকা।
উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন যাবৎ প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে উপজেলার ফতেহপুর, টেংরা, উত্তরভাগ, কামারচাক ও রাজনগর সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মনু ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্লাবিত এলাকা গুলো হচ্ছে- ফতেহপুর, ইউনিয়নের জাহিদপুর, চরকারপাড়, আব্দুল্লাহপুর, রশিদপুর, কাশিমপুর, সোনালুয়া, শাহপুর, বেড়কুড়ি, লামা বিলবাড়ি, সাদাপুর, তুলাপুর, উত্তরভাগ ইউনিয়নের ছিক্কাগ্রাম, কামালপুর, নয়াটিলা, আমনপুর, সুরিখাল, জুগিকোনা, কেশরপাড়া, সোনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, রুস্তমপুর।
রাজনগর সদর ইউনিয়নের নন্দীউড়া, ভূজবল। কামারচাক ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর, হাটি করাইয়া, তেঘরি, টেংরা ইউনিয়নের রাউবাড়ি ম্যাথিউড়া,কান্দিরকুল, ইলাশপুর, উজিরপুর, একামধু,আকুয়া, আদিনাবাদ, কোনাগাও।
প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্য সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন কষ্টকরে নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে নতুন নতুন এলাকায় বন্যার আশংকায় রয়েছেন অসহায় লোকজন।
দীর্ঘদিন ধরে উভয় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে স্থানীয়রা দায়ী করছেন মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে কারন তারা প্রতিরোধে যথা সময়ে ব্যবস্থা নেয়না। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষজন বর্ষা মৌসুমে চরম বন্যা আতংখে দিনাতিপাত করেন এবং সঠিক সময়ে ভাঙ্গন রোদ না কয়ায় অনেকের বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়। স্থানীয়রা আরো জানান, এলাকার লোকজন নিয়ে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোপূর্বে নিজে উদ্যোগ নিয়ে দুটি ভাঙ্গন মেরামত করেছি। এরপরও শুধু ফতেহপুর ইউনিয়নে প্রায় ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন ১০ টির মত আশ্রয় কেন্দ্রে এক হাজার ৫’শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। জন প্রতিনিধি ও স্থানীয়দের নিয়ে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন