রাজনগরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
আউয়াল কালাম বেগ: রাজনগরের সার্বিক অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে উদ্ভেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে আছেনএই উপজেলার মানুষ। এছাড়া নৌকার সংকট থাকায় উদ্ধার কাজে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। আবার কোন কোন উপদ্রুত এলাকায় নৌকাট মাঝি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত কামারচাক, মনসুরনগর ও টেংরা ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষকে উদ্ধার করেছে। এছাড়াও কবলিত এলাকায় বেড়েছে চোরের উপদ্রুব। এখন পর্যন্ত উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসন থেকে মোট ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।চারদিন ধরে মৌলভীবাজার শহরের সাথে এই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কদমহাটা এলাকায় শুক্রবার বাঁধ ভেঙ্গে কদমহাটা, শ্বাসমহল, আশ্রাকাপন, মহলাল, দক্ষিন মহলাল, মালিকোনা, চাটুরা, বনমালী পঞ্চেশ্বর, পঞ্চেশ্বর, সরখরনগর, খাসপ্রেমনগর, বরকাপনসহ ১৫টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টেংরা ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট, সৈয়দ নগর, আকুয়া, আদিনাবাদ, কোনাগাঁওসহ ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কামারচাক ইউনিয়নের মশাজান, কামারচাক, ভোলানগর, দস্তিদারের চক, ইসলামপুর, জালালপুর, তেঘরি, করাইয়া, মৌলভীরচক, আদমপুর, মেলাগড়, শান্তকুল, পঞ্চানন্দপুর, একাসন্তোষ, হাটিকরাইয়া, চাটিকোনাগাঁও, মুর্তিকোনাসহ ২৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এদিকে ছোট ছোট ক্যানেলগুলো দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রাজনগর সদর ইউনিয়নের দক্ষিন খারপাড়া এলাকার মুজিবনগর গুচ্চগ্রাম তলিয়ে গেছে। পুরো উপজেলায় আকস্মিক এই বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কদমহাটা উচ্চ বিদ্যালয়, তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, পোর্টিয়াস মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মহলাল উচ্চ বিদ্যালয়, কামারচাক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসহ ১০ টিরও বেশি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ধলাই ও মনু নদীর ভাঙ্গনে এসব এলাকায় এই বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মনু নদীতে গতকাল শনি বার পর্যন্ত পানি কমলেও বিপদসীমার ৯০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া চুরি হওয়ার ভয়ে অনেকে গবাধিপশু রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। আশ্রাকাপনের মামুন ও বক্কর জানান গত শনিবার দিবাগত রাতে তাদের বাড়ি থেকে ৩টি টিভি ও ৩টি ফ্রীজ চোরেরা লুট করেছে।ভাঙ্গারহাট এলাকায় শনিবার রাতে ওয়াবদার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল কাদির ফৌজি ও ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সাম্মুসহ স্থানীয়রা মাটির বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকান। এদিকে কোনাগাঁও এলাকায় ওয়াবদার বাঁেধ ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থানীয়রা মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ উঁচু করেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৬ জুন শনিবার টেংরা ইউনিয়নের সৈয়দনগর গ্রাম থেকে মৃত ইসমাইল উল্লার অসুস্থ স্ত্রী কর্পুল বিবিকে (৮০) স্পিড বোটে করে পানিবন্দী অবস্থা থেকে জীবিত উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। গত ১৩ জুন বুধবার উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের হাটিকরাইয়া গ্রামের মো. মিছবা মিয়ার ছেলে ইমন মিয়া (১০) বুধবার করাইয়া জামে মসজিদে ইফতার মাহফিলের উদ্দেশ্য বাড়িতে থেকে বের হয়ে যায়। ইফতার শেষে সবাই যার যার গন্তব্যস্থানে চলে গেলেও ইমন আর বাড়ি ফিরেনি। বুধবার ইফতারের পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এলাকার সব জায়গায় খোজা হলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায় একটি বাড়ির পাশে। স্থানীয়রা ধারনা করছেন বন্যার পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে পানি দেখতে তারাপাশা বাজার ও মৌলভীবাজার কুলাউড়া মহাসড়কে উৎসুক মানুষের ভীর সামলাতে আইনসৃংখলা বাহিনীকে তৎপর হতে দেখা গেছে। বিউটি( ১৫) বলেন জীবনের প্রথম বহু দুর থেকে এসেছেন বন্যা দেখতে। দেখা গেল শারিরিক প্রতিবন্ধি রুবেল( ১৭) প্রবল স্রোতের মধ্যে বাশের খুটি মধ্যে ভর করে হেটে যাচ্ছেন তিনি বলেন জীবনের প্রথম বন্যা দেখতে এসেছেন।
টেংরা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান বলেন, মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছে। আমার ইউনিয়নে শনিবার পর্যন্ত ২২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজও সেনাবাহিনীর উদ্ধার কাজ চলছে।
মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, বন্যা দূর্গতদের উদ্ধারে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম বলেন, আমার ইউনিয়নের বন্যার চিত্র ভয়াবহ। কোনো কোনো ঘরের ছাদ ও টিনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সড়িয়ে নিতে সেনাবাহিনী সহায়তা করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার বলেন এ পর্যন্ত মোট ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন