রাজনগরে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন আতংকে কৃষক
হোসাইন আহমদ॥ রাজনগর উপজেলার গড়গাঁও গ্রামের ইউনুছ হোসনে (৩০) ছয় বিঘা জমিতে বিআর-২৮ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ঘরের পিছনের জমিতে চাষ করায় প্রতিদিনই জমিতে গিয়ে ধান দেখতেন। সব জমিতেই ধানের ছড়া এসেছে। ভালো ফলনের জন্য তিনি কৃষি বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন ধরনের সার-বল দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বৃহস্পতিবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। ধানের ছড়ার গোড়ায় পছন ধরায় ছড়া গুলো মরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি এটিকে ব্লাস্ট রোগ বলে চিহ্নত করেছেন। এছাড়াও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ‘ধলিয়ার বন্দ’ ও ‘ডিগলার গাং এর বন্দে’ও ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।
জানা যায়, রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামের ইউনুছ হোসেন এবার ছয় বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। এসব জমিতে বিআর-২৮ ধানের চারা রোপন করেছেন। কিছু জমিতে বিআর-২৯ ও লাগিয়েছেন। ধানের চারাগলোও বেশ ভালো ছিল। ফলন বেশি পাবেন বলে ছয় বিঘা জমিতে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা খরচ কেরেছেন। কিছু দিনের মধ্যে ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। সবকটি গোছার ছড়ায় ধান মরে গেছে। ইউনুছ হোসেন বলেন, গত তিনটি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে পারিনি। এবার ভাবছিলাম ভালো ফলন হবে। জমিতে ৩৭ হাজার টাকা খরচ করেছি কিন্তু এখন ১০মন ধানও পাব বলে মনে হচ্ছে না।
এদিকে উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ধলিয়ার বন্দে ও ডিগলার গাং এর আশে পাশের বেশ কিছু জমিতের ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। ধানের ছড়াগুলো বেশ বড় হলেও এসব ছড়ার ধানে চাল হবে না বলে জানান কৃষকরা। মনসুরনগর ইউনিয়নের তারাচুং গ্রামের ঝুনুর মিয়া (৫০) হাওরের ধলিয়ার বন্দে ১০ বিঘারও বেশি জমিতে এবার বোরো ধান রোপন করেছেন। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে তার ৫-৬ বিঘা জমির ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ধানে যে হারে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে এক বিঘা জমিতে ২-৩ মন ধানের বেশি পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। একই ইউনিয়নের বানারাই গ্রামের জুবেদ মিয়া ওই বন্দে প্রায় ১৩ বিঘা জমি চাষ করেছেন। তার ধানেও এর মধ্যে যেসব ধানের ছড়া এসেছে ওই সব ধানে মড়ক দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এবছর ক্ষেতে প্রচুর খরচ করেছি। যদি ধানে কোন সমস্যা হয় তাহলে বাঁচার উপায় থাকবে না। গত তিন মৌসুমে ঘরে ৪০ কেজি ধানও তুলতে পারিনি। এবার ধান না পেলে ঋণের কারণে বাড়ি ছাড়তে হবে।
এবিষয়ে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি। এটি ব্লাস্ট রোগের আক্রমন। সব মিলিয়ে আক্রান্ত জমির পরিমান বেশি হবে না। এটির প্রতিকারের ঔষুধ বলে দিয়েছি। একসপ্তাহ স্প্রে করলে রোগ সেড়ে যাবে। তবে এটি ফলনের লক্ষ্যমাত্র অর্জনে সমস্যা হবে না।
ইউটিউবে দেখুন পাতাকুঁড়ির ভিডিও গ্যালারি
মন্তব্য করুন