রাজনগরে ব্যুরো ধান উৎপাদনে কৃষকের মুখে হাসি
শংকর দুলাল দেব॥ জেলার শষ্যভান্ডার খ্যাত রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরে এবারের উৎপাদিত ব্যুরো ফসল নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করা গেছে। ফসল তোলার মুহুর্তে অনুকুল আবহাওয়ার কারণে এবার ব্যুরো ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হবে বলে কৃষক ও রাজনগর কৃষি বিভাগ মনে করছেন। জেলার বৃহত্তম হাওর কাওয়াদীঘি সহ উজানের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে চাষকৃত স্বপ্নের ব্যুরো ফসল অনুকুল আবহাওয়ার কারণে যথা সময়ে ঘরে তুলতে সর্বস্তরের কৃষক এখন একযোগে মাঠে কর্মরত।
রাজনগর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অনুকুল আবহাওয়া ও যথাসময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশরোধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এবার ব্যুরো ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক হবে। এবার হাওর কাওয়াদীঘি সহ উজানে চাষকৃত মোট ব্যুরো আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩০ হেঃ। এর মধ্যে হাইব্রিড আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬৮০ হেঃ, স্থানীয়- ৭০ হেঃ ও উফসি- ৯ হাজার ৯৮০ হেঃ। এবার ব্যুরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ৭৫ হাজার ২৩৭ মেঃটন (ধান)। এর মধ্যে হাইব্রিড উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৬০ মেঃটন, স্থানীয়-১৫০ মেঃটন ও উফসি- ৪৯ হাজার ৩২৭ মেঃটন। যার অর্থমূল্য ৭৫ কোটি ৭১লাখ ১০হাজার টাকা। সম্ভাব্য প্রতিকুল আবহাওয়ায় যাতে কৃষকের লালিত স্বপ্নের ব্যুরো ফসল বিনষ্ট নাহয় এজন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ধান কাটার জন্য ৭টি কম্বাইন্ড হার্বেস্টার মেশিন ও ১১টি রিপার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। মাঠের পাঁকা ধান দ্রুত ঘরে তুলতে গত ৭ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান হাওর পাড়ের সোনাটিকি এলাকায় ধান কাঁটা উদ্বোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজনগর উপজেলা সহকারি কর্মকর্তা (ভূমি) ঊর্মি রায়, মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগের সহকারি পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহাদুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও শ্রমিক সংকট ও বৈশ্বিক এ দুর্যোগের মুহূর্তে কৃষকের মনোবল চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ মাঠে ধান কাঁটতে সহযোহিতা করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত চাষকৃত মোট ফসলের ৩৮ ভাগ কর্তন করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ফসল আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কর্তন করা সম্ভব বলে জানায় কৃষি বিভাগ। কোন প্রতিকুল আবহাওয়া পরিলক্ষিত হলে দ্রুত ধান কাঁটার জন্য রাজনগরের চাবাগান শ্রমিকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কেওলা গ্রামের বুরো চাষি লনি মিয়া জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবার তীব্র আশংকা নিয়ে ব্যুরো জমি চাষ করি। কারণ প্রতি বছরই ফসল ঘরে তোলার মূহুর্তে কুশিয়ারা নদী থেকে ফাটাসিংড়া বিলে মাছ আনয়নের নামে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল হাওরের হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্নের ফসল পানিতে তলিয়ে দিয়ে কৃষককুলে স্বপ্ন ধূলিষ্যাৎ করে দিত। এবারও এ আশংকার উর্ধ্বে ছিলামনা। কিন্তু সরকারের যথাযথ উদ্যোগের কারণে এসব স্বার্থান্বেষী মহল সুবিধা করতে নাপারায় কৃষককুলের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রায় একই কথা বলেছেন রেতাহুঞ্জা গ্রামের কনা মিয়া, সুপ্রাকান্দি গ্রামের শাহজাহান মিয়া, যাত্রাপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ ব্যুরো চাষি।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদুল ইসলাম জানান, অনুকুল আবহাওয়া, ব্যুরো আবাদের সময় মনু ব্যারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে পানির যোগান এবং ধান কাঁটার পূর্ব মুহূর্তে হাওরে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশ রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এবার ব্যুরো ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক হবে বলে আশা করছি। তিনি আরো জানান, জেলার বৃহত্তম হাওর কাওয়াদীঘি সহ উজানের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে চাষকৃত ব্যুরো ফসল শতভাগ ঘরে তুলতে কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এতে রাজনগরের কৃষককুল ভীষন আনন্দিত।
মন্তব্য করুন