রাজনগরে মনু নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যা হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি
আউয়াল কালাম বেগ॥ কয়েক দিনের টানা বর্ষনে উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
৪ জুন রোববার ভোর রাতে তারাপাশা ও টেংরা ইউনিয়নের ভোলানগর , কোনাগাঁও, দস্তিদারের চক হরিপাশা সহ বেশ কয়েকটি স্থানে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৩০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পরেছেন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। অব্যাহত বারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মনু কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন দুর্গত এলাকার লোকজন।
বন্যা কবলিত এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের রাজনগরে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে রাজনগর উপজেলার তারাপাশা ইউনিয়নের কোনাগাঁও, ভোলানগর, দস্তিদারেরচক ও টেংরা ইউনিয়নের হরিপাশা সহ বেশ কয়েকটি স্থানে গত ৪ জুন রোববার দিবাগত ভোররাতে মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁেধ ভাংগনের সৃষ্টি হলে রাজনগর উপজেলার তারাপাশা ও টেংরা ইউনিয়নের ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারাপাশা ইউনিয়নের প্লাবিত গ্রাম গুলো হলো- কোনাগাও, চাটিকোনাগাঁও, মুর্তিকোনা, মশাজান, ভোলানগর, মিটিপুর, দস্তিদারের চক, ইসলামপুর ও খাসপ্রেমনগর, প্রেমনগর, মেলাগড়, শান্তকুল, পঞ্চানন্দপুর, একাসন্তোষ, মৌলভীরচক, হাটিকরাইয়া, তেঘরি, এবং টেংরা ইউনিয়নের মিটিপুর, আকুয়া, কোনাগাঁও, টগরপুর, ভাঙ্গারহাট ইত্যাদি। প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্য সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন মনু প্রতিরক্ষা
বাঁধের উচু জাগায় আবার অনেকে পার্শ্ববর্তী আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ও বুষ্টির পানিতে উত্তরভাগ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম বন্যি কবলিত হয়ে পড়েছে ব্রীজ কালবার্ট রাস্তা ঘাট ফসলের মাট তলিয়ে গেছে। উউপি সদস্য জুয়েল আহমদ ও মুখলু মিয়া জানান কালাসুয়া ছড়া ড্রেজিং বাথঁ নির্মান করা হলে মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাগব হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ১০টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কে বারবার তা মেরামতের আবেদন জানালে পাউবো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি একেবারেই আমলে নেয়নি। তাদের এই খামখেয়ালিপনার কারণে আজ প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবান্দ এবং এসব এলাকার গবাধিপশু ও কৃষি ফসল চরম ক্ষতির সম্মুখিন।
কোনাগাঁও গ্রামের জামাল (৩৫) জানান, গত রোববার দিবাগত ভোর রাতে কোনাগাঁও এলাকায় মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ৩টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্ঠি হলে এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে বাঁশ ও মাটির বস্তা ফেলে ভাঁঙ্গন রোধের চেষ্টা করেও ভাঁঙ্গন ঠেকাতে পারেননি। শেষ রাতে একই এলাকার ৩টি স্থানে প্রতিটি প্রায় ৫’শ ফুট দীর্ঘ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পানি প্রবল বেগে প্রবেশ দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামকে প্লাবিত করে। দুর্গত এলাকার সহ¯্রাধিক পরিবারের লোকজন বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, দুর্গত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসক মারফত নগদ ২০ হাজার টাকা ও ৫ মেঃ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রুত এগুলো দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।এছাড়াও দুর্গতদের স্বার্থে যা করার সব ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন