রাজনগরে মৌরশী মালিকদের পাউবো’র জমি দেদারছে বিক্রি : ৪ কোটি টাকার ক্ষতি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা

August 31, 2022,

স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাটবাজারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাউবো’র) জমি দেদারছে বিক্রির পর রেজিস্ট্রি কিংবা পজিশন দখল না দেয়াতে হট্রগোলের সৃষ্টি হয়েছে। পাউবোর এসব জমি কিভাবে বিক্রি করা হলো কিংবা ক্রেতারাও কিভাবে ক্রয় করলেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুশিয়ারা নদীর পাড়ে অবস্থিত ওয়াপধা সড়ক সংলগ্নের খেয়াঘাট বাজারে ব্যবসা-বানিজ্য গড়ে উঠায় দোকান কোঠার দাম চরম পর্যায়ে বেড়ে যায়। ঠিক এই কারণে বাজারের ওয়াপধা সড়কের পাশের পানি ভর্তি পাউবোর নালার জমি সাবেক মালিকরা লাখ লাখ টাকায় চড়া দামে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে এসব ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করে পাঁকা দালান কোঠা তৈরি করেন অনেকে। পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশের সাথে মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে পাউবো’র অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাজারে গুড়িয়ে ফেলা হয়। খেয়াঘাটবাজারের প্রায় ৫/৬টি পাঁকা স্থাপনা গুড়িয়ে ফেলে পাউবো। এসব স্থাপনা ভ্রাম্যমান মালিকেরা জানান, ওই বাজারে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার স্থাপনা গুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
অঙ্গিকারনামা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের মানিক দাশ নিজেকে মৌরশী সূত্রে দখলদার বানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দুটি অঙ্গিকার নামা করে গেল ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর একই ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের মিন্নত আলীর কাছে বেড়কুড়ি মৌজার ১১ নং জেএল এর ৩৭৭ খতিয়ানভূক্ত ৩৬৯৫/৬২৮৭ দাগে ২ শতক ভূমি ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। মানিক দাশ একই গ্রামের জার্মান প্রবাসী রহমত আলী’র কাছে একই খতিয়ানের ৭৫ পয়েন্ট জমি অঙ্গিকারনামা করে বিক্রি করেন। এছাড়াও বাজার সংলগ্ন বিলবাড়ি গ্রামের পৃথ্বিশ রঞ্জন দাশ গংরা ৭৯১ নং খতিয়ানের ৩৭৩৮/৬২৮৭ দাগে মোঃ রহমত আলী’র কাছে ৭ শতক ভূমি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। একই গ্রামের সত্যরঞ্জন দাশ বেড়কুড়ি মৌজার এলএ কেইস নং ৩১/৭৬-৭৭ এর ৬ শতক ভূমি ৬০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি বিক্রি করার পর পজিশন দিতে না পাওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। সম্প্রতি এ মামলাটি (সি,আর মামলা নং-১৬৫/২০২২) (রাজ) দায়ের করেন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পুত্র আক্তার হোসেন।
মামলা সূত্র জানায়, উপজেলার বেড়কুড়ি মৌজার ৩৭৭ খতিয়ানের জেএল নং-১১ এর এসএ দাগ নং ৩৬৯৫,আরএস দাগ নং ৬২৮৭ এ প্রস্থ ৩ ফুট ১০ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৬৬ ফুট জমি ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেন যাত্রাপুর গ্রামের মৃত রাইমোহন দাশ’র পুত্র মানিক দাশ। পরবর্তীতে মামলার বাদী জমি দখল করতে না পারায় চলতি বছরের গেল মাসের ১৮ তারিখ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্র আরো জানায়, টাকা নেবার পর আসামী মানিক দাশ মামলার ১ নং স্বাক্ষী জার্মানী প্রবাসী মোঃ রহমত আলী’র বরাবরে নোটারি পাবলিক,মৌলভীবাজার নুর”ল হুদা চৌধুরী’র কার্যালয়ে ১৩৬৫ নং অঙ্গিকারনামায় রেজিস্ট্রি করেন। অঙ্গিকারনামায় বলা হয়, আসামী ভূমি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে প্রবাসী রহমত আলী’র বরাবরে সাফকাবালা দলিল রেজিষ্ট্রারীসহ দখল সমজিয়ে দিবেন। অন্যথায় ১ লাখ টাকা ফেরৎ দিবেন। কিন্তু এর কোনটাই তিনি দেননি। পরবর্তীতে বাদী মানিক দাশকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এতেও কোন কাজ না হলে তিনি আদালতের স্মরণাপন্ন হন। মামলায় স্বাক্ষী দেয়া হয়েছে ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের মোঃ রহমত আলী,মাতাব আলী,হোসেন মিয়া ও জাহিদপুর গ্রামের মাধব চক্রবর্তীকে। মামলায় অভিযুক্ত মানিক দাশের সাথে বুধবার বিকেলে আলাপচারিতা হলে জানান, তিনি রহমত আলীর কাছে ৯০ হাজার টাকা মূল্যে কিছু জমি দখলীয় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, মিন্নত আলীর কাছে কোন জমি অঙ্গিকারনামায় বিক্রি করেননি। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তার”জ্জমান বুধবার বিকেলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি কে কিনলো আবার কে বিক্রি করলো এটা বিষয় না। মূলকথা হলো কেউ অবৈধভাবে জমি দখল করলে তাদের বির”দ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com