রাজনগরে সাম্প্রতিক বন্যায় দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়-ক্ষতি ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৭শ ২৮ কোটি টাকা
শংকর দুলাল দেব : রাজনগরে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠছে। বাড়িঘর, রাস্থাঘাট, কৃষিক্ষেত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নদীর ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাঁধ, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সর্বত্রই বন্যার ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন রাজনগরের দরিদ্র কৃষককুল। বন্যায় তাদের স্বপ্নে বুনা ফসলের মাঠ পুরোটাই বিরান ভুমিতে পরিণত হয়েছে। নিহত হয়েছে একজন।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে মনু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডাইক ও বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে রাজনগর উপজেলার কামারচাক, মনসুরনগর, টেংরা ও রাজনগর সদর ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে এসব ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এদিকে এ চারটি ইউনিয়নের বন্যার পানি কাউয়াদীঘি হাওরে পতিত হওয়ায় উপজেলার পাঁচগাঁও, ফতেহপুর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকার মানুষ বন্যা পরবর্তী সময়ে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আকস্মিক এ বন্যায় দুর্গত মানুষের বাড়িঘর, রাস্থাঘাট, কৃষিক্ষেত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মনু নদীর ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাঁধ, সুপেয় পানি, গোখাদ্য, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সর্বত্রই বন্যার ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন রাজনগরের দরিদ্র কৃষককুল। বন্যায় তাদের স্বর্পেন ফসলের মাঠ পুরোটাই বিরান ভুমিতে পরিণত হয়েছে। বানের পানিতে নিহত হয়েছে একজন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এবছর ১৩ হাজার ১৪৫ হেক্টর আমন আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কাউয়াদীঘি হাওরের অতিরিক্ত পানির কারণে ১০ হাজার ৮৭০ হেক্টর আবাদ করা হয়। কিন্তু বন্যার কারণে ৬ হাজার ৫২০ হেক্টর আমনের মাঠ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার হেক্টর সম্পূর্ন এবং ২ হাজার ৫২০ হেক্টর আমন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমনের বীজতলা ৩৪ হেক্টর নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকার ৯১০ জন কৃষকের সবজি ক্ষেত সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের হিসাব অনুযায়ী অর্থমূল্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৮ কোটি টাকা। এদিকে বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হওয়ায় দ্রুত কৃষকদের সহায়তার জন্য ৭ মেট্রিকটন বীজধান ১৪শ কৃষককের মধ্যে শীঘ্রই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ টন ব্রি-৭৫ ও বিনা-১৭ ধানের বীজ রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানায়, এবারের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলা প্রায় ১০২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অর্থমূল্যে এসব ক্ষতির পরিমান প্রায় ১হাজার ৭শ কোটি টাকার মতো।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানায়, সাম্প্রতিক বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৬০টি ঘর পুরোপুরি এবং প্রায় ৩ হাজার ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ২০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়াও ৪৫ কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উপজেলার ২২টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১২শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। অনেকের বসতঘর সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এখনো তারা আশ্রয় কেন্দ্রে রয়ে গেছে। এদিকে রাজনগর উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আকস্মিক পানি ঢুকে পড়ায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যায়লের প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
এবাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, আকস্মিক বন্যায় রাজনগরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পুরিমান নিরুপন করছি। এখনো পুরোপুরি করা সম্ভব হয়নি। সকল বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে বসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হবে এবং পূনর্বাসনের প্রস্তাব সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মন্তব্য করুন