রাজনগর প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমনঃ এ যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা

February 18, 2017,

রাজনগর প্রতিনিধি॥ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশ সামনে নিয়ে রাজনগর প্রেসক্লাব এক সভায় আনন্দ ভ্রমনের উদ্যোগ নেয়। প্রেসক্লাবের ওই সভায় আনন্দ উপভোগ ও হৈ হুল্লোর করতে আমি ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহমান সোহেল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যাবার জন্য পরামর্শ দেই। কিন্তু সমুদ্র সৈকত দুরে থাকায় এবং অধিকাংশ সাংবাদিকদের কচি কচি বাচ্চা থাকায় মত পাল্টানো হয় যে পাশের কোথাও ঘুরে আসা হইক। বিশেষ করে মাষ্টার শংকুর দুলাল দেব তার কচি দুটি বাচ্চা রেখে দুর পাল্লায় মেতে উঠবেনা পারবেনা বলে জানান। তবে কি আর করা? আমরা সিদ্ধান্ত নেই পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ-এর মাধবপুর লেইকে যাওয়া যাক। যাত্রা শুরু হলো ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবসে রাজনগর বাজার থেকে। তবে এ যাত্রায় মনে হলো ভালবাসা দিবসে বিয়ে করা উপস্থিত ছয় সাংবাদিক তাদের সহধর্মীদের সঙ্গে আনতে না পেরে ভালবাসা দিবসের কিছু নজির দেখাতে অক্ষম হলেন। তবে মনে হয়েছে, হয়তো উন্মুক্তভাবে এভাবে ঘুরতে থাকার মধ্যে লাজ-লজ্জার কোন বিষয় থাকতে পারে। সকাল ১১টায় একটি মাইক্রোবাস যোগে শুরু হলো যাত্রা। আমি আর মাসুদ ভাই মৌলভীবাজার থাকায় চৌমূহনায় এসে সবাই মিলিত হই। এর আগের দিন প্রেসক্লাবের সম্পাদক আব্দুল আজিজ ভ্রমনের যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করেন। আমরা এগারো জন সাংবাদিক পানসী রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতি করে সকালের নাস্তা পর্ব শেষ করি। এখান থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে সমশেরনগর সড়ক দিয়ে মাধবপুর লেইকের উদ্যেশ্যে শুরু হয় আমাদের আনন্দ ভ্রমন। পথিমধ্যে মাইক্রোতে শুরু হয় দেশের গান,বাউলগান ও কৌতুকসহ নানান আয়োজন। প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আউয়াল কালাম বেগ মুঠা গলায় গান ধরলে সবাই অট্রহাসিতে মেতে উঠেন ওই কারণে তার প্রতিটি গানে ভুলে ভরা। আউয়াল ভাই একজন সাদামনের মানুষ যে কেউ কিছু বললে তিনি রেগে যাননা। তিনি একসময় আমার দেশ পত্রিকার রাজনগর প্রতিনিধি ছিলেন। এখনও স্থানীয় ও অনলাই পোর্টালে কাজ করেন। আমরা দুপুর ১টায় মাধবপুর লেকে পৌছে গেলাম। আমাদের সহযোগীতা করতে ওখানকার স্থানীয় মানবজমিনের সাংবাদিক সাজু ভাই মিলিত হলেন। লেকে পৌছে আমরা টিলা এলাকায় ঘুরতে থাকলাম। এ সময় যারযার মত করে ফটোতোলার জগতে হারিয়ে গেলেন সাংবাদিকরা।

মাধবপুর লেইকটি পড়েছে মুলত সীমান্তবর্তী এলাকায়। পাশে মাধবপুর চা বাগান। দক্ষিণ পার্শ্বে বাংলাদেশের ধলাই সীমান্ত ভারতে ত্রীপুরাস রাজ্য। প্রায় ৩০ একর ভুমি জুড়ে মাধবপুর লেইক। এ লেইকে ডানকান কোম্পানী পোনা মাছ অবমুক্ত করে। লেকের জল দেখলে আপনার প্রান জুড়িয়ে যাবে একটু পান করতে। এ লেইকে সিলেট বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত ভ্রমন পিপাসু ছুটে আসেন এবং প্রকৃতির সাথে খেলা করেন। আমরা প্রায় ৩ ঘন্টা ঘুরে টিলার নীচে প্রতিযোগীতায় ফিরে যাই। প্রথমে শুরু হয় হাড়ি ভাঙ্গা প্রতিযোগীতা। এ প্রতিযোগীতায় মানবজমিনের রাজনগর প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সোহেল ও যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন নিমিষেই হাড়ি ভেঙ্গে ফেলেন। বাকিরা এর কিনারায় ও যেতে পারেননি। পরে শুরু হয় ফুটবল খেলা। খেলায় বিবাহিত ও অবিবাহিত সাংবাদিকদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। বিবাহিত সাংবাদিকদের মধ্যে খেলোয়ার ছিলেন মাসুদ আহমদ (সাবেক সভাপতি রাজনগর প্রেসক্লাব),প্রেসক্লাব সভাপিত আউয়াল কালাম বেগ,সাধারণ সম্পাক ও নয়াদিগন্তের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ, নয়াদিগন্তের রাজনগর প্রতিনিধি শংকর দুলাল দেব, যায়যায়দিনের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াদুদ,মানবজমিনের রাজনগর প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সোহেল। অবিবাহিতরা হলেন আহমদ ফয়ছল আজাদ,ফরহাদ হোসেন,এ.আর.ইমরান,ফুয়াদ আহমদ,কামরুল আহমদ। দীর্ঘ ৩০ মিনিটের লড়াইয়ে ৩-১ গোলে বিবাহিত সাংবাদিকরা বিজয়ী হন। খেলা শেষে লেকে সবাই যার যার মত করে হাত মুখ ধুয়ে জোহরের নামাজ সম্পন্ন করে দুপুরের খাবার শেষ করেন খোলা আকাশের নীচে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদেও মাঝে পুরস্কার বিতরণ শেষে নিজ গন্তব্যে ফিরে যাই আমরা। রাজনগর প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমনের সেই স্মৃতিগুলো এখনো মনে নাড়া দেয়। এভাবে যেন আরো আনন্দ ভ্রমন করে আমরা প্রকৃতিকে জানতে পারি এবং সমাজকে আরো জানাতে পারি এটাই মনের বৃহৎ প্রত্যাশা ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com