রাজনগর বালিগাওয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পালন হচ্ছে বিজয় উৎসব
স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজনগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বালিগাও সেখানে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধের একজন শহীদ দানু মিয়ার নামে ৩ দিনব্যাপী বিজয় উৎসব পালন করা হচ্ছে। এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রামীণমেলা, লোকজ উৎসব এবং প্রায় হারিয়ে যাওয়া সকল ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্যের এক চমৎকার সমন্বয় হয়ে ওঠেছে এই উৎসব।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বিজয় অর্জন হয়েছিলো সেই বিজয় দিবসকে ঘিরে বালিগাও গ্রামের কিছু উদ্যেমি শিক্ষিত তরুন-তরুনীদের আয়োজন ও শ্রমে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিন দিন ব্যাপি বিজয় উৎসব পালন করে আসছে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও ২২,২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর বালিগাও শহীদ দানু মিয়া স্মৃতি পাঠাগার বিজয় উৎসব পালন করে। এই বিজয় দিবস শুধু বালিগাও গ্রামে নয় পুরো উপজেলার সাহিত্য,সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মোদীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
প্রায় হারিয়ে যাওয়া সকল ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলা কাবাডি,গোল্লাছুট,হাড়িভাঙ্গা সহ সকল ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয় এখানে, জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেকেই এসে অংশগ্রহন করেন।
তিন দিনের এই উৎসবে কাজ করেছেন ৫০জন সেচ্ছাসেবক নানজিবা খাতুন, রুবেল আহমেদ, তিতু হোসেন। তারা এক মাস ধরে কাজ করে গেছেন এই উৎসবকে সফল করার লক্ষ্যে। মঞ্চ সজ্জা সহ সব ধরনের কাজ নিজেরাই করেছেন, কিভাবে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে সবগুলো তারা পরিকল্পনা মাফিক করেছেন।
সিদরাতুল মুনতাহা, রনি রহমান বলেন এই ধরনের অনুষ্ঠানের কারনে গ্রামের তরুন-তরুনীরা উচ্ছসিত, তারা এই অনুষ্ঠান থেকে অনেক কিছু শিখছে জানিয়ে জানান মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র দেখে অনেক ভালো লেগেছে এবং খেলাধুলা বাশ পারাপার, কলাগাছ খেলা, সহ গ্রামিণ খেলাধুলা।
এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষন ছিলো মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরন, ৭১এর যুদ্ধস্থান, বধ্যভুমি ও শহীদ পরিবারের বিভিন্ন ধরনের ছবি নিয়ে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়। আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ৭১ এ নির্যাতনের শিকার ৫ জন বীরাঙ্গনা। বীরাঙ্গনা, মায়ারানী শব্দকর,তিলুয়া রুহি দাস, রাজিয়া বেগম এই বীরমাতারা বলেন বিজয় উৎসবে উপস্থিত হতে পেরে তারা আনন্দিত। তাদের ডেকে এনে এ রকম সম্মান দেওয়ায় তারা খুশি হয়েছেন বলে জানান।
এ ছাড়া উৎসবে বসে বসে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় উপকরন সহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা শিশু ও তরুন-তরুনিদের আকর্ষন করে এবং সাংস্কৃতিক পর্বে সিলেটি ধামাইল গান সহ আমাদের লোকায়ত সংস্কৃতির চমৎকার উপস্থাপনা ছিলো এখানে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান ও নাটিকা উপস্থিত সকলকে আকর্ষন করে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক জুবায়ের আহমদ জুবের জানান, এই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানবে এবং হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলার সাথেও তারা সম্পৃক্ত থাকবে।
শহীদ দানু মিয়ার সন্তান মোঃ আতাউর রহমান মধু জানান, গ্রামের কিছু উদ্যোমি শিক্ষিত তরুন-তরুনীদের আয়োজন ও শ্রমে এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান ধারাবাহিক ভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন তাদেরকে সবসময় সহযোগিতা করে যাবেন।
মন্তব্য করুন