রাজনগর ৩১ শয্যা হাসপাতাল-হাসপাতাল নয় যেন ভুতুড়ে বাড়ি, স্বাস্থ্য সেবা বলে নেই কোন জিনিস
বিশেষ প্রতিনিধি॥ হাসপাতালে ভর্তি (আছলাম) ছিলাম। একবার ডাক্তার (আইয়া) এসে দেখলো না। কোন ঔষধও পাইলাম না। অতারলাগি (এরজন্য) সিট ছাড়িয়া যাইয়ার গি (চলে যাচ্ছি)। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামের আব্দুল মুমিন। তিনি জানান. স্ত্রীর প্রচন্ড জ¦র হয়েছিলো। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কোন রকম স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ক্ষোভে দু:খে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবার এই বেহাল দশা মৌলভীবাজার জেলা সদরের পাশর্^বর্তী উপজেলা রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজন জানান, জেলা সদরের কাছাকাছি হওয়ায় এই হাসপাতালে কোন প্রকার চিকিৎসা মুশকিল। কাটা ছেড়া, কিংবা দুর্ঘটনার রোগি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার আগেই রেফার্ড করা হয়, জেলা সদর হাসপাতালে। আর জটিল কিংবা মারাত্মক দুর্ঘটনা হলে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগিদের প্রশ্ন সরকারি বরাদ্ধকৃত ঔষধগুলো যায় কোথায়?
সরেজমিন হাসপাতালে গেলে আর করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। হাসপাতালে প্রবেশ করলেই প্রথমে মনে হবে, হাসপাতালতো নয় -এটা কোন ভুতুড়ে বাড়ি। শেওলা আর ময়লার সখ্যতায় এক উদ্ভট দুর্গন্ধ প্রথমে স্বাগত জানায়। মেইন গেইট ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে চোখে পড়ে কুকুরের নিরাপদ ঘুমের দৃশ্য। প্রবেশ পথের এই দৈন্যদশা ভেতরের ভয়াবহ চিত্রের যেন একটা আগমনী।
রাজনগর উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের জন্য নির্মিত এই ৩১ শয্যা হাসপাতালটির পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের করুণ চিত্র। গন্ধে সেখানে অবস্থান করাই মুশকিল। এরমধ্যেও গরীব অসহায় মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবার আসায় ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগিদের সবাই জ¦র, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। পূরুষ ওয়ার্ডের বারান্দায় ভাঙা সিট, পরিত্যক্ত ফোম আর বেড শীট মিলে গোটা বারান্দা জানান দিচ্ছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের থেকে শুরু বড়কর্তার কাজ শুধু চাকরি করা আর কোনমতে মাস শেষ হলে বেতন উত্তোলন। হাসপাতাল ঘুরে কোন ডাক্তারের দেখা না পেয়ে দ্বারস্থ হতে হয় হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদের। তিনি ব্যস্ত তথ্য প্রদান কাজে। কথা বলার সময় নেই।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর পরিচয় দিয়ে কর্তব্যরত হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি পরিসংখ্যানবিদ নিজের নাম প্রকাশ না করে জানান, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সভায় আছেন। আবাসিক মেডিক্যাল ছুটিতে। হাসপাতালের ১০ ডাক্তারের বিপরীতে ২ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন।
পরিসংখ্যানবিদের সাথে কথার ফাঁকে মিটিং থেকে ফিরে আসেন ভারপ্রাপÍ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ উত্তম কুমার শর্মা। তিনি জানান, ১০টি মেডিকেল অফিসার পদের মধ্যে ৪টি পদ শূণ্য। কর্মরত আছেন ৬ জন। এরমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্নালী দাস রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ডা. শুভাশীষ গুপ্ত পারিবারিক ছুটিতে। ডাঃ শামসুন্নাহার ইভা প্রেষণে আছেন হবিগঞ্জ সদরে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ডাক্তার সঙ্কট আগে থেকেই। এটা সবার জানা। এই সঙ্কট নিয়ে আমরা মানুষকে সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে হাসপাতাল ভবনের। জরাজীর্ণ এই ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করাই দুষ্কর।
মন্তব্য করুন