রাষ্ট্রীয় ইসলামী জলসা আর মঙ্গল শোভাযাত্রার ট্রামকার্ড
মুনজের আহমদ চৌধুরী॥ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগের দিনই দেশে অনুষ্টিত হলো ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ‘ইসলামিক’ রাষ্ট্রীয় শোডাউন। ভারতের কাছে দেশ বেচঁবার (!) অভিযোগকারীদের মাঝে হুজুররাও আছেন।হুজুরদের ‘দ্বীল’ এ একটু দ্বীনি শান্তির পরশ দেবার বোধকরি বাহারী আয়োজন। বৃহস্পতিবারের একদিনের তুঘলকি আয়োজনে রাষ্ট্রের খরচ হলো ৩৫ কোটি টাকার বেশি।
সন্মেলনটি যখন অনুষ্ঠিত হলো তখন সুনামগঞ্জ আর মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় লাখো কৃষকের সর্বস্ব তলিয়ে গেছে পানির নীচে। ভাটি অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক সর্বস্ব হারিয়েছেন বন্যায়। বন্যায় সেখানে নেমেছে মানবিক বিপর্যয়।গতকাল আগত হুজুররা জনপ্রতি দেড় হাজার টাকা করে পেলেও দুর্গত কৃষকরা মাথাপিছু কত টাকা সরকারী সাহায্য পেলেন সেটি এখনো খুজেঁ পাইনি খবরের কাগজে। অবশ্য, আমাদের সরকার বাহাদুর ইলিশ রক্ষায় জেলেদের জাল পোড়াতে যেখানে শতকোটি টাকা বরাদ্ধ দেন, সেখানে এমন কথা নিতান্তই বাতুলতা।
২দুই লাখ আলেমের অংশগ্রহণে সম্মেলনটি না করে আজ শুক্রবার ছুটির দিনেও করা যেত। তাহলে রাজধানীর ২৫টি রাস্তা বন্ধ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলতে হতো না। সাধারণ মানুষও ছুটির দিনে বাড়িতে বসে টিভিতে বক্তাদের বক্তৃতা শুনতে পারতেন। জনবিরক্তির বদলে জনসম্পৃক্ততা হতো। জঙ্গিবাদ বিরোধী ও জঙ্গিবাদের তাত্ত্বিক যুক্তিখন্ডনকারী বক্তব্যগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতো বেশী করে। হ্যা,ঠিক মানি সব হতো। খালি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগের দিনে দেশে এত বিশাল ইসলামী ‘জাগরন’ হতো না।
পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম হলেন ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস ও মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর সিনিয়র ইমাম হলেন শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফি। আগত মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুজাইম এবং ড. আবদুল মহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম মক্কা ও মদীনার ইমাম নন। যাহোক সেটি ভিন্ন আলোচনা। তবে, ইসলামের নামে বিরোধ সৃষ্টির মূলে সালাফী হানাফী বিবাদ ও সৌদি আরব কিন্তু ভিন্ন বিষয় নয়।
প্রশ্ন হলো ৫ বছরে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামীক ফাউন্ডেশন কি কোন কার্যকর ভুমিকা রাখতে পেরেছে ? বাস্তবতা হলো,রাজনৈতিক সরকারগুলোর নির্লজ্জ চাটুকারীতা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রকৃত আলেম সমাজের যেমন আস্থা হারিয়েছে। তেমনি পরিনত হয়েছে অর্থব প্রতিষ্ঠানে।
৩ দেশে সরকারীভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোকে নির্দেশনা দেয় সরকার। আবার ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে রাষ্ট্রীয় ইসলামীক জলসারও আয়োজন করে। অন্যদিকে,পাঠ্যপুস্তকে প্রবেশ করানো হয় সাম্প্রদায়িকতা। পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিশ বছরেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনো সরকারের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়ী করছেন সন্তু লারমা।
শাপলা চত্বরের ঘটনার পর শফি হুজুরের ছেলেকেও সুবিধার দামে সামলানোর খবর আমরা পড়েছি সংবাদমাধ্যমে।
৪
সার্বিক বিচারে কৌশল আর সরকারী পদক্ষেপের এমন অদ্ভুত আর অনৈতিক বৈপরীত্য বোধহয় বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যত্র অসম্ভব। কি সুনিপুন খেলা রেস আর রেসিজমের। একই সাথে সম্প্রদায় আর অসাম্প্রদায়িকতার এ ক্ষমতা টেকানোর খেলায় ঠেকানো যাবে তো জঙ্গি সন্ত্রাসীদের?
মুনজের আহমদ চৌধুরীঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক,সংবাদ বিশ্লেষক।
মন্তব্য করুন