রাস্তা খুলে দেয়ার দাবীতে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গলে দুই বাগানের চা শ্রমিকদের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে ফিনলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ায় দুই বাগানের ৫ সহশ্রাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন। রাস্তা খুলে দেয়ার দাবী জানিয়ে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেও প্রতিকার না পেয়ে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভুগী চা শ্রমিকরা। রাস্তাটি দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের দাবীতে বুধবার ১৩ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পুটিয়াছড়া চা বাগান এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক চা শ্রমিক ও স্কুল শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
জানা গেছে, ফিনলে চা কোম্পানীর অধীন উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়ন এর লাখাই চা বাগান থেকে বার্ণিশ বাড়ি চা বাগান ও ছনখলা চা বাগান রাস্তা দিয়ে দুই বাগানের শতাধিক পরিবারের ৫ সহশ্রাধিক শ্রমিকরা দীর্ঘকাল ধরে চলাচল করে আসছিলেন। শ্রমিকদের অভিযোগ নানা ছুঁতায় বাগান কর্তৃপক্ষ প্রায় সময় চৌকিদার বসিয়ে বাঁশ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। গত সোমবার থেকে বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি স্থায়ীভাবে চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে করে শ্রমিকরা দৈনন্দিন কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াতে বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শ্রমিকরা বলেছে, রাস্তা বন্ধ থাকায় এখন ৩-৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। স্কুল শিক্ষার্থী বা জরুরী প্রয়োজনে রোগী হাসপাতালে নিতে বেগ পেতে হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া বার্ণিশবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক উজ্জল রায় বলেন, হঠাৎ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা স্কুল যেতে পারছে না। ঘরে গর্ভবতী মেয়ে আছে- হাসপাতালে নিতে পারছি না। এনিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন সুরহা হয়নি। নারী চা শ্রমিক অঞ্জনা ভৌমিক বলেন, চা বাগান ম্যানেজার শান্তনু পুরোকাস্ত আমাদের অনেকদিনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের অপরাধ কি যে আমাদের বাচ্চা-কাচ্চার স্কুল যাওয়া বন্ধ হবে? এ রাস্তা দিয়ে আমরা হাট-বাজারে যেতে হয়, আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি যেতে হয়-সেই রাস্তা কেন বন্ধ করবে। অঞ্জনা ভৌমিক বলেন, কর্তৃপক্ষ রাস্তা খুলে না দিলে আমরা আন্দোলনে যাবো। চা শ্রমিক সুমন তাঁতি বলেন, এ রাস্তা দিয়ে আমাদের পূর্ব পরুষরা চলা ফেরা করেছে। আমরা এখন করছি। কিন্ত হঠাৎ করে বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে।
আরেক চা বাগান শ্রমিক বিজয় হাজরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে বাগানের ম্যানেজার, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে অভিযোগ করেছি, ইউএনও সাহেবকে এবং থানায় জানিয়েছি, কিন্তু কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিজয় হাজরা বলেন, দাবী না মানলে আগামীতে কর্মবিরতি পালন করবে শ্রমিকরা।
রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ অস্বীকার করে পুটিয়াছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, রাস্তাটি সীমান্ত এলাকা ঘেষা। এদিক দিয়ে অনেক অবৈধ মালামাল যাচ্ছে। এনিয়ে প্রশাসন কতটা কি করছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। এটি একেবারেই বাগানের প্রাইভেট সড়ক। তাই আমাদের বাগানের এবং শ্রমিকদের স্বার্থেই মাঝেমধ্যে বন্ধ করি। এই রাস্তা দিয়ে প্রায় সময় বাহিরের গাড়ি ঢুকে পড়ে। যেহেতু রাস্তাটি বাগানের নিজস্ব তাই এই রাস্তা দিয়ে সর্বসাধারণের চলাচল সীমিত। তিনি আরো বলেন, বার্নিশবাড়ি ও ছনখলার লোকজন পুটিয়াছড়া চা বাগানের শ্রমিক। পুটিয়াছড়া ও খেজুরিছড়ার দুটি বিকল্প রাস্তা রয়েছে- সেগুলো দিয়ে শ্রমিকরা যাতায়াত করতে পারে। এর আগেও তারা ওই রাস্তাগুলির ব্যবহার করেছে। শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য শিপন তাঁতির সাথে এরিমধ্যে কথা হয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এখন যেহতু জেনেছি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন