রেডিও পল্লি কণ্ঠের অগ্রগতি ও সমাজ উন্নয়ন
দেওয়ান মোনকিব চৌধুরী॥ ২০১১ সাল। কোন এক মাসের বিকেল বেলা, আমি আমার মেয়েদের নিয়ে সমশেরনগর সড়ক ধরে পূর্ব দিকে হেঁটে চলেছি। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি সাইন বোর্ড। লিখা রয়েছে “রেডিও পল্লি কন্ঠ এফ.এম.৯৯.২। আবেগ আপ্লত হয়ে আমার মেয়েদের নিয়ে সাহস করে সাথে সাথে ঐ বিল্ডিং এ ঢুকে পড়লাম। ঢুকা মাত্র দেখা হয়ে গেল পল্লি কন্ঠের সিনিয়র ষ্টেশন ম্যানেজার জনাব মেহেদি হাসান সাহেবের সাথে। উনি আমাদেরকে সাদরে স্বাগত জানালেন। পরিচয় পর্ব ও কুশল বিনিময়ের পর আমাদেরকে রেডও পল্লি কণ্ঠের প্রতিটি বিভাগ ভালো করে ঘুরিয়ে দেখালেন। পল্লি কন্ঠ তখন নিয়মিত সম্প্রচারে আসেনি। পরিক্ষামূলক সম্প্রচার চলছিল। অপক্ষোয় ছিল উদ্ভোধনের।
২০১২ সাল। ১২ ই জানয়ারি, সেই মহেন্দ্রখনের সময় মহাসমারহে জাক জমক ভাবে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত ভাবে পল্লি কন্ঠ সম্প্রচার শুরু করে। অবশ্য প্রথম দিকে চার ঘন্টা সম্প্রচার করে। এর মাত্র দুই বৎসরের ভিতরে বারো ঘন্টায় সম্প্রসারে চলে যায়। এটা পল্লি কণ্ঠের জন্য বিরাট অগ্রগতি। যাইহোক, প্রথম দিন থেকেই পল্লি কণ্ঠ পল্লি অঞ্চলে বাজিমাত করে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান শ্রোতাদের কানে পৌছে দিচ্ছে।
এই ধরনের শ্রোতা নেহায়েত শহরে ও কম নয়। রেডিও পল্লি কণ্ঠের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান সকল শ্রেণির শ্রোতারা খুব ভালো ভাবে আনন্দের সহিত গ্রহণ করে চলেছেন। যা বিভিন্ন ধরনের লাইভ অনুষ্ঠান গুলো শুনলে বুঝা যায়। এছাড়া আমি বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেছি এবং কথা বলে জেনেছি যার যার পছন্দের অনুষ্ঠান শুনার জন্য যার যার সময়মত মোবাইলে অথবা রেডিও সেট অন করে তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান শুনতে বসে যান।
দিন দিন পল্লি কণ্ঠের শ্রোতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রেডিও পল্লি কণ্ঠ এই অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থ নীতি, স্থানীয় সরকার ও কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের মধ্যে এক বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এটি রেডিও পল্লি কণ্ঠের এক বিরাট প্রা্িপত। আর্থ সামাজিক উন্নয়নে রেডিও পল্লি কণ্ঠ এক বিরাট ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের কথা না লিখে পারছি না। যেমন পরিবার পরিল্পনা বিষয়ক অনুষ্ঠান, নারী শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান ও বয়ষ্কদের নিয়ে অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে আরসিনগর, সোনাবন্দে, মনুর তীর, ও রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান তুমুল জনপ্রীয়। অনুষ্ঠনগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় শীল্পিদের কদর বেড়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও রেডিও পল্লি কণ্ঠের রয়েছে অনেক অবদান। সপ্তাহের এক দিন ইংরেজি শিখার একটা অনুষ্ঠান নিয়মিত হয়। সেখানে অনেক ছেলে-মেয়ে অংশগ্রহণ করে এবং ঐ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি বিষয়ে অনেক কিছু শিখতে পারছে। মোট কথা রেডিও পল্লি কণ্ঠের বদৌলতে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এই অঞ্চলের মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে। শিল্পী তৈরি হয়েছে অনেক।
রেডিও পল্লি কণ্ঠ স্টুডিওর বাহিরেও অনেক বিষয় ভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। যেমন-২০১৮ সালের ২৯ শে অক্টোবর রেডিও পল্লি কণ্ঠের ব্যবস্থাপনায় কিশোরী মেয়েদের বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “গর্লস ইম্পপাওয়ার সেল্ফ প্রটেকশন এন্ড জাস্টিস” এই অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজার জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক ও সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা চৌধুরী ছাড়াও আরও অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গসহ বিপুল সংখ্যক কিশোরী মেয়েরাও সার্কিট হাউসের মুন হলে অংশ গ্রহণ করে। আমার ও দাওয়াত ক্রমে সৌভাগ্য হয়েছিল উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। নিশ্চয়ই এই অনুষ্ঠান থেকে কিশোরী মেয়েরা অনেক অজানা তথ্য পেয়েছে এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছে বলে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া রেডিও পল্লি কণ্ঠ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন ইউনিয়নের ওপেন বাজেট নিয়মিত ভাবে সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। এতে ইউনিয়নের জনগণ অনেক কিছু জানতে পারে। সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করা হয়। এতে জনগণ সরকারের সাথে উন্নয়ন কর্মকান্ডের অংশগ্রহণ করে।
পরিশেষে বলব, এই ভাবে সবসময় রেডিও পল্লি কণ্ঠ সুখে দুঃখে জনগণের সাথে থাকে, তাহলে জনগণ সব সময় সচেতন থাকবে এবং সমাজ থেকে অন্যায় ও দূর্নীতি দূর হয়ে যাবে। এবং জনগণ অধিক মাত্রায় সতর্ক থাকবে। এর ফলে সমাজ তথা দেশ উত্তর উত্তর সুখী সম্মৃদ্ধিতে ভরপুর হয়ে উঠবে। দারিদ্রবিমোচন হতে বেশি সময় লাগবে না বলে আমরা বিশ্বাস। রেডিও পল্লি কণ্ঠের সম্মৃদ্ধী ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এখানেই সমাপ্তি টানছি।
মন্তব্য করুন