রোজা কেয়ামতের দিন শাফায়াত করবে
মুফতি এহসান বিন মুজাহির॥ সিয়াম সাধনা ইসলামে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের উপর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন এবং রোজাদারদের জন্য বিপুল সওয়াবের ওয়াদা করেছেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হল সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত’। (নাসায়ি: হাদিস নং- ২১০৬)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘রোজা এবং কুরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে’। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-৬৫৮৯)। হজরত রাসুলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে সিয়াম পালন পূর্ববর্তী রমজান থেকে কৃত গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’। (মুসলিম, হাদিস নং-২৩৩)।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রজনীতে নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং-১৯৫৮)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে সিয়াম পালন বছরের দশমাস সিয়াম পালন তুল্য’। (মুসলিম, হাািদস নং-১১৬৪)।
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের প্রতিদান দম গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘আসসাওমু-লী ওয়া আনা আজযী’। অর্থাৎ রোজা শুধুই আমার জন্য এবং এর প্রতিদানও আমি নিজে দেবো’। (বুখারি : ৫৯২৭)। হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা.) এরশাদ করেন, ‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন শুধু রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। (বুখারি: হাদিস নং-১৭৭৫)। হাদিস কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হইচই না করে’। (বুখারি: হাদিস নং- ১৯০৪)। শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। যারা শুধু পানাহার পরিহার করে সকল পাপাচার থেকে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তার সারা দিন উপোস থাকার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই বরং তারা রীতিমতো ভাগ্যবিড়ম্বিত। রোজা রেখে যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি মুখ ও জিহবাকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয় দিতে হবে সবক্ষেত্রে। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থেকে তাকওয়া অর্জন করাই রোজার শিক্ষা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে রোজার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক।
মন্তব্য করুন