(ভিডিও সহ) লাশ নিয়ে কলঙ্কের গ্লানি বহনকরতে চাননি দিনাজপুরের আবু বক্কর সিদ্দিক
এস এম উমেদ আলী॥ রাত ১২টার পর অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে, আমি রিভিস করলাম। তার নাতিন আমেনা কথাবলে ও পরে তার মেয়ে শিরিনা তার সাথে কথা বলে ক্ষমা চায়। পরে একই ফোনে তার মেয়ে শিরিনা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে এটি আমার তোমাদের সাথে শেষ কথা। আর দেখা বা কথা হবেনা। এটাই আমার শেষ কথা। আর দেখা হবে কিয়ামতে। মৌলভীবাজার মডেল থানায় সাংবাদিকদের কাছে একথাগুলো বলেন জঙ্গি শিরিনা আক্তারের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক।
তিনি আরো জানান, লাশ দেখে তিনি চিনতে পারেননি। নাসিরপুরের বাড়িতে পাওয়া একটা গ্রুপ ছবি পুলিশ দেখালে মেয়ে-মেয়ের জামাই ও নাতিনদের তিনি সনাক্ত করেন।
আবু বক্কর জানান আগে থেকে ভাল-মন্ধ বুঝে ২০০২ সালে মেয়ে বিয়ে দেই লোকমানের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ঘর সংসার করে আসছে। আমার মেয়ের ঘড়ে ৫ জন নাতিন হয়েছে। হঠাৎ করে এমন অবস্থায় কেন গেল আমি বুজে উঠতে পারিনি। ২ মাস পূর্বে ১৪-১৫ বছর বয়সের আমার বড় নাতিন আমের বিয়ে হয় ঐ রাতে ফোনে জানায়।
আবু বক্কর সিদ্দিককে পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকরা অনুরোধ জানান সাত জনের মধ্যে শিশুদের লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে নেয়ার জন্য। আবু বক্কর বলেন এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, এ শত্রুর নেবার ইচ্ছা নয়, আমি ঘৃণা করি। আর এ লাশ নেয়া আমার জন্য লজ্জা হবে। আর এগুলো নিলে সেখানে কেউ গ্রহনও করবেনা।
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার নাসিরপুরের ‘জঙ্গি আস্তানা’ সাত নিহতের লাশ সনাক্ত করেছেন জঙ্গি শিরিনা আক্তারের বাবা ও লোকমান হোসেনের শশুর আবু বক্কর সিদ্দিক সোমবার ৩ এপ্রিল দূপূর সাড়ে ১২টায়।
সকাল পৌনে ১১টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পৌছান আবু বক্কর সিদ্দিক। তার সাথে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ও জঙ্গি লোকমানের ভায়েরা ভাই সানোয়ার হোসেন। দূপূর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে লাশ সনাক্তের পর কেঁদেকেঁদে বের হতে দেখা যায় আবু বক্কর সিদ্দিককে।
জেলা পুলিশ কার্যালয়ে দূপুর ২ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত এক প্রেস বিফিংএ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান নিহতরা সবাই একই পরিবারের। লাশ সনাক্ত করেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে আসা নিহত শিরিনা আক্তারের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক। তবে তারা এ লাশ নিয়ে কলঙ্কের গ্লানি বহনকরতে চাননা বলে জানান।
পুলিশ সুপার নিহত ৭জনের মধ্যে ৪ শিশু রয়েছে, সে লাশ গুলো গ্রহনের জন্য পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ জানালে সে লাশ গুলো নিতে অপারগতা জানান।
তিনি আরো জানান মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৩জনের মধ্যে ১জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মোঃ আশরাফুল আলম নাজিম। সে সিলেটের আতিয়া মহলের অদুরে বোমা হামলা চালায়। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালির সোনাই মুড়ি উপজেলায়। লাশ শনাক্তের জন্য পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়েছে।
নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত ৭ জনের লাশ মৌলভীবাজার পৌরসভার কাছে হস্তান্তর শেষে সোমবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার টিকর বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়। পুলিশ সুপার বলেন, ‘আতিয়া মহলের হোতা আমরা সন্দেহ করছি এই নাজিম। সোনাইমুড়ীর একটি পরিবারের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। পরিবারের লোকজন আসলে পরে এটা শনাক্ত করা যাবে।’
অন্যদিকে বড়হাটে নিহত ৩জনের লাশ পরিবারের সদস্যদের সনাক্ত করার অপেক্ষায় হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
মন্তব্য করুন