শহীদ লেফটেন্যান্ট তানজিমের মতো বীরেরা চিরকাল বেঁচে থাকে
সাদরুল আহমদ খান : আমি ক্যাপ্টেন পদবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ডেপুটেশনে ছিলাম। সেনাবাহিনীর তরুণ কর্মকর্তাদের ইউনিট জীবন অনেক গোছানো। সকালে পিটি, দৌড় শরীর চর্চাসহ সারাদিন বিভিন্ন টাস্কিং, ট্রেনিং, টিব্রেক ফাইল ওয়ার্ক, ইউনিট দেখাশোনা, বিকেলে খেলাধুলা ও সন্ধ্যায় রুলকল, সৈনিক মেস পরিদর্শন এভাবেই চলতো।
অফিসার্স মেসে থাকা, খাওয়াদাওয়া, বিভিন্ন মেসনাইট ডাইনিং ইন, ডাইনিং আউট বা ফেয়ারওয়েল ডিনার, বারবিল-মেসবিল মিলে যা খরচ হয়, তা মাসের সম্মানীর প্রায় সমান সমান। তাই, অনেকেই নিজ বা পরিবারের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ওডি (ওভার ড্রাফট ঋণ) নিয়ে থাকে। পরবর্তীতে জাতিসংঘ মিশন বা বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত টাকা থেকে সে ঋণ পরিশোধ করা হয়।
এতো সীমাবদ্ধতার মাঝেও সেনা জীবনে থাকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি, নিজের লিমিট ক্রস করার তীব্র বাসনা, দেশের জন্য জীবন বাজি রাখা, জীবন নেওয়া এবং প্রয়োজনে নিজ জীবন উৎসর্গ করার প্রত্যয়। সবার মধ্যে এই তীব্র সংকল্প থাকলেও গুটি কয়েক সদস্য প্রিয় ইউনিফর্ম গায়ে জড়িয়ে শহীদ হওয়ার মর্যাদা পান ‘ঐবৎড়বং ষরাব ঋড়ৎবাবৎ’।
গত মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ার গ্রামে মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল অভিযান চালায়। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার এক ডাকাতকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। তবে ওই ডাকাত তখন অতর্কিতে তানজিমের মাথায় ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেনা কর্মকর্তা তানজিম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সেনাবাহিনীর অন্য সদস্যরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযানে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে তিন ডাকাতকে আটক করার পাশাপাশি একটি বন্দুক, ছয় রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করেছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনী বুকের রক্ত দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
লেখক: স্কোয়াড্রন লিডার (অব:) সাদরুল আহমদ খান
মন্তব্য করুন