শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসকের দক্ষতা ও যোগ্যতা

May 12, 2022,

মোঃ এনাম উদ্দিন: শিক্ষক শিক্ষাদান করেন । তার শিক্ষাদান করার অন্তর্নিহিত ক্ষমতাই তার যোগ্যতা। তার যোগ্যতার মাপকাটি হল অর্জিত একাডেমিক সফলতা,প্রশিক্ষণ,গবেষণা ,কার্যকর ক্লাস,শিক্ষার্থীর ফলাফল,অভিজ্ঞতা এবং নিয়মিত পড়াশুনা। একজন শিক্ষককে ভালো শিক্ষাদান করতে হলে তাকে ছাত্র জীবনের চেয়ে শিক্ষা জীবনে অনেক বেশি পড়াশুনা করতে হয় । একজন শিক্ষা প্রশাসকের পড়াশুনার পরিধি হবে শিক্ষকের চেয়েও বেশি। নিয়মিত পড়াশুনা, চর্চা- অনুশীলন তার সক্ষমতাকে বৃদ্ধি ও সচল রাখতে এবং হালনাগাদকরণে সাহায্য করে। গবেষনা তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
শিক্ষকের ক্ষমতার মাপকাঠি হলো তিনি কতোটা সফলতার সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করতে পারেন । সকল শিক্ষার্থী যদি তার বিতরণ করা জ্ঞান শতভাগ বুঝতে ও আত্মস্থ করতে পারে এবং উদ্দীপ্ত হয় তবে তার ক্ষমতা পরিপূর্ণ বলে ধরা যায়।শিক্ষার্থীদের বুঝা এবং আত্মস্থ করার মাপকাঠি হলো তাদের পরীক্ষার ফলাফল এবং তাদের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন।সফল শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের আংশিক ভারসাম্য আনতে পারেন।
শিক্ষা প্রশাসক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের দক্ষতা যোগ্যতার পরিমন্ডল আরও অধিক পরিব্যাপ্ত। তাকে তার প্রশাসন কাঠামোর অভ্যন্তরে সব সম্ভরণের (শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী- অভিভাবক ,উপকরণ, ভৌত অবকাঠামো ) মধ্যে কাম্য সমন্বয় সাধন করে সামগ্রিক উৎকর্ষ অর্জন করতে হয়।তাকে প্রতিটি সম্ভরনের কাম্যতা ভালোর ক্ষেত্রে সর্বাধিকরণ এবং খারাপের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নকরণ করে সামগ্রিক কাম্যে উপনীত হতে হয় তার দক্ষতা যোগ্যতার মাপকাঠি প্রতিষ্ঠানর সার্বিক ফলাফল বা অর্জন।দক্ষ শিক্ষ প্রশাসক প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ভারসাম্য আনতে সক্ষম।সার্বিক ভারসাম্য অবস্থায় সকল শিক্ষার্থী তাদের মেধার কাম্য বিকাশ ঘটাতে সক্ষম।
শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসকের দক্ষতা ও যোগ্যতাহবে নিম্ন্নরূপ
(ক) কাজের ক্ষমতাঃ তার কাজ করার মত যথেষ্ট ক্ষমতা থাকতে হবে এবং তাকে কাজের প্রতি অনুরাগী হতে হবে। কাজের মাধ্যমে অন্যকে অনুপ্রাণিত করতে হবে,সৃষ্টি করতে হবে শ্রমের মর্যাদা।
(খ) কাজের অভিজ্ঞতাঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসককে অবশ্যই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে । যেকোন কাজের জন্য অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প নেই। অভিজ্ঞতা তাকে দক্ষ ও খরচ সাশ্রয়ী করতে সাহায্য করে। নিম্নোক্ত কারণে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ঃ
(১) নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাঃ নিজ প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হলে তার উপর একটি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকতে হয়। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সৃষ্ঠি হয়।
(২) উৎকর্ষঃ একজন শিক্ষক শিক্ষা প্রশাসকের কর্মকাণ্ডে উৎকর্ষের পরশ থাকতে হবে।তার কর্মকাণ্ডের পদ্ধতি, প্রক্রিয়া সবসময়ে উত্তম হতে হবে।একটি কাজ সম্পাদন করার বিভিন্ন পন্থা থাকতে পারে । এসব পন্থার মধ্যে সবোৎকৃষ্ট টি বাছাই করার ক্ষমতা একজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসকের থাকতে হবে।এ উৎকর্ষ অর্জনের জন্য অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
(৩) সময় বিশ্লেষণঃ সময় বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কাজ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। বিশেষ করে অতি জরুরী পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। অভিজ্ঞতা এ সময বিশ্লেষণে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সময় বিশ্লেষণের ফলশ্রুতি হলো সময়ব্যবস্থাপনা।এর ফলাফল হলো সময়ের কাম্য ব্যবহার।
(৪) প্রতিষ্ঠানের অন্যান্যদের আনুগত্য অর্জনঃ প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের আনুগত্য অর্জন প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জোর করে আনুগত্য অর্জন করা যায় না । এখানে মানবিক এবং একাডেমিক উৎকর্ষ প্রয়োজন।
(৫) ভবিষ্যবাচ্যতাঃ একজন শিক্ষক,শিক্ষা-প্রশাসকের ভবিষ্যবাচ্যতার গুণ থাকা প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা এটাকে অর্জন করতে সাহায্য করে। চোখ-মুখ -নাকÑ কান খোলা রেখে আশেপাশের ঘটনা প্রবাহ অবলোকন করে এ জ্ঞান অর্জন করা যায়।
(গ) সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতাঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসককে অবশ্যই সকলের কাছে বিশেষ করে শিক্ষার্থী ,শিক্ষক ,কর্মচারী অভিভাবক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নিজের বিভিন্ন মানবিক গুণাবলীর প্রস্ফুটন ও দক্ষ-মনোমুগ্ধকরণ কায়ক্রম দ্বারা একজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসককে অর্জন করতে হয়।
(ঘ) দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণর ক্ষমতাঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসকের জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ন গুণ বা যোগ্যতা। এগুণ জরুরী পরিস্তিতি মোকাবেলাসহ কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। শিক্ষা উন্নয়নকে তরান্বিত করে।
(ঙ) জরুরী অবস্থা মোকাবেলার ক্ষমতাঃ অনেক সময় শিক্ষার্থীদের দ্বারা সৃষ্ট অস্থিতিশীলশীলতা মোকাবেলা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের সাথে ঘনিষ্টতা ,তাদের সমস্য সম্পর্কে আন্তরিকতা এসব পরিস্থিাত করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ন্ত্রন রাখার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালবাসা ।
(চ) গতিশীলতা ঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসককে অবশ্যই কাজে ,চিন্তা চেতনায় গতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।তাকে যেন স্থবিরতা,আড়ষ্টতা ক্লান্তি যেন স্পর্শ না করতে পারে সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে,কারণ শিক্ষার্থীরা সবসময়ই গভীরভাবে তার আচার ব্যবহার এবং কর্মকাণ্ডের ধরণ –ধারণ অবলোকন করে এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে
(ছ) উদ্ভাবনী ক্ষমতাঃ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত উপকরণ ব্যবহার করে কাম্য উৎকর্ষ পর্যায়ে যেতে তার উদ্ভাবনী পদক্ষেপ অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ ও উদ্বীপ্ত করার জন্য নানামুখী উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ করতে হয়। যে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ,কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ ও উদ্বীপ্ত করতে তিনি সবোত্তম শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসক।উদ্ভাবনী ক্ষমতাই শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ ও উদ্বীপ্ত কাজটিকে সহজেই সহজ করতে পারে।
(জ) গবেষণামুখীতাঃ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকও শিক্ষা প্রশাসককে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তার পরিবার ,সমাজ, দেশ এং সর্বোপরি বিশে^র সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অভিনব উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।এসব পদক্ষেপের প্রভাব , কার্যকারিতা, ফলাফল ,ব্যর্থতা,সফলতা যাচাই বাছাই করার জন্য গবেষণা ও কর্মমূখী গবেষণা প্রয়োজন।
(ঝ ) ন্যয়বিচারের মানদণ্ডকে সমুন্নত রাখার যোগ্যতা ঃএকজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক সব বিষয়ে ন্যায় বিচারক হতে হবে। তিনি সব আচার আচরণে এবং কর্মকান্ডে ন্যায়বিচারের মানদণ্ডকে সমুন্নুত রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যায়বিচারের মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারেন।
(ঞ) নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতাঃ একজন শিক্ষকও শিক্ষাপ্রশাসককে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকান্ডে নেতৃত্ব প্রদান করতে হয়।যে কোন কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বের গুণগত মানের উপর নির্ভর করে ফলাফল।কাম্য ফলাফল পেতে হলে উত্তম নেতৃত্বের প্রয়োজন। শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রশাসকের দায়িত্ব হলো,শিক্ষার্থীদেরকে সমাজের উপযুক্ত নেতৃত্বে গড়ে তোলা। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সমাজ ও দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করবে।
(চ) তত্বাবধান যোগ্যতাঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসক সকল কর্মকাণ্ড তত্বাবধান করতে হয়।এজন্য তাকে তত্বাবধান কৌশলে পারদর্শী হতে হয়। তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের উপর নিবিড় তত্বাবধান বজায় রাখতে হয়। এ তত্বাবধানের উপর নির্ভর করে কর্মকাণ্ডের সফলতা।
(ছ) সৎ চরিত্রের অধিকারীঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসক কে সৎ চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।কর্ম-চিন্তা- চেতনা-উপলব্ধিতে তাকে সদা সততার পরিসফুটন ঘটাতে হবে। শিক্ষা প্রশাসকের সততা হতে শিক্ষকএবং শিক্ষার্থীরা সততায় উদ্ভুদ্ধ হয়। শিক্ষকের সততা থেকে শিক্ষার্থরিা সৎ হতে অনুপ্রেরণা পায়।শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রশাসক সততার গুণে গুনান্বিত হলে সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।এ প্রভাব সমাজের মধ্যেও প্রসারিত হয়।
(জ) অভিভাবকত্ব গ্রহণের দক্ষতা ও যোগ্যতাঃ শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক হলেন শিক্ষার্থীদের আধ্যাত্বিক অভিভাবক। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠছে, কিভাবে সময় অতিবাহিত করছে সেদিকে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে।এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিভাবে সে গড়ে উঠেছে সে বিষয় সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রশাসক কে গভীরভাবে খোঁজ খবর রাখতে হবে।
উপসংহারঃ একজন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক সমাজের আধ্যত্বিক নেতা। তাই সমাজের চাহিদামত তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা পরিবর্তনযোগ্য। শিক্ষকতা পেশা নয়,এটি একটি ব্রত। শিক্ষকতা ব্রত থেকে তাকে একটি সুসম সমাজ ,একটি অনুপম দেশ এবং সকলের বাস উপযোগী একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য আলো বিতরণ করতে হবে।

প্রধান শিক্ষক
ইটাউরী হাজী ইউনুছ মিয়া মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com