শিক্ষক বাতায়নে দেশসেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত শ্রীমঙ্গলের ইনাম উল্লা খান
এহসান বিন মুজাহির॥ বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামূলক ডিজিটাল ওয়েবসাইট, দেশের শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম শিক্ষক বাতায়নের দেশসেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নস্থ ষাড়েরগজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: ইনাম উল্লা খান। সারা দেশের শিক্ষকদের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী গল্প প্রকাশ, লাইক, কমেন্ট, রেটিং এবং সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে তিনি এ পাক্ষিকের সেরা উদ্ভাবনী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। যা শিক্ষক বাতায়নের ওয়েবসাইটে ৩১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। শ্রীমঙ্গলের ইনাম উল্লা খান শিক্ষক বাতায়নে দেশসেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত হওয়ায় ষাড়েরগজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শ্রীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসাসহ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বার্তায় সিক্ত হচ্ছেন ইনাম উল্লা খান শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিখন শেখানো কাজ কিংবা সহশিক্ষাক্রমিক কাজ নিয়ে শিক্ষকের তৈরি করা উদ্ভাবনী মূলক ভিডিও ও কাজকে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য প্রতি ১৫ দিন পর পর দেয়া হয় সেরা উদ্ভাবকের স্বীকৃতি।
শিক্ষক মো: ইনাম উল্লা খান এর উদ্ভাবনী আইডিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ক্ষুদে ডাক্তারের প্রশিক্ষণ। এর আগে তিনি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২২ সালের শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। করোনাকালে প্রজেক্টে সংসদ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে প্রাথমিকে ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানের জন্য সিলেট বিভাগের একমাত্র শিক্ষক হিসেবেও তিনি মনোনিত হয়েছিলেন।
ষাড়েরগজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: ইনাম উল্লা খান প্রাথমিকের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। তিনি করোনাকালে যখন কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবায় সারা বিশ্বের মতো থমকে গিয়েছিলো সেই চিরচেনা স্কুল কেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম। তার সাথে সাথে থমকে যাচ্ছিলো শিশুদের শিক্ষা নিয়ে বিকশিত হওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু এই শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে শুরু করেন অনলাইন ক্লাস। প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীমঙ্গল অনলাইন স্কুল। দায়িত্ব পালন করের
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের। তার সুনিপুণ পরিচালনা ও একান্ত প্রচেষ্টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেন। এতে উপকৃত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তার উদ্যোগের সাথে সহকর্মী হিসেবে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা আত্মনিয়োগ করেছিলেন করোনাকালীন শিক্ষাযোদ্ধা হিসেবে। যার ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান অনলাইনের মাধ্যমে অব্যাহত ছিল। শিক্ষক ইনাম উল্লাহর এমন কার্যক্রম উপজেলাব্যাপী
ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকরাও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ইনাম উল্লাহ খান ২০১০ সালের ২০ সেপ্টম্বর শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেন। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বেশ আন্তরিক ও জনপ্রিয়। করোনাকালে অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তিনি উপজেলাজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখা ও রক্তদান সংগঠন ব্লাডম্যান শ্রীমঙ্গল এর মাধ্যমে মানবিক কাজে সরব রয়েছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি রচনা করেছেন একাধিক কাব্যগ্রন্থ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং ২ কন্যার জনক।
ষাড়েরগজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: ইনাম উল্লা খান বলেন, ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা নিয়ে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা ছিলো, আলহামদুলিল্লাহ, শিক্ষকতায় যোগদানের পর থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। কাজ করতে গিয়ে শিক্ষকতা জীবনের অনেক সাফল্যও পেয়েছি। বিশেষ করে ২০২২ সালে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছি, এরপর কভিড (সিএসএসআর) প্রজেক্টে সংসদ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে প্রাথমিকে ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানের জন্য সিলেট বিভাগের একমাত্র শিক্ষক হিসেবে মনোনিত হয়েছিলাম। সর্বশেষ প্রাপ্তির মধ্যে দেশসেরা উদ্ভাবক যোগ হলো। তিনি আরও বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে ভালোলাগা থেকেই শিক্ষা নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছি। আমার প্রত্যাশা এ উদ্ভাবনগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নয়নে অবদান রাখবে।
মন্তব্য করুন