শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণকে কেন্দ্র করে আনন্দের বন্যায় ভাসছে কুলাউড়া-ক্ষোভে উত্তাল বড়লেখা
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ কুলাউড়া উপজেলায় একটি কলেজ ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ করায় সবত্র বইছে আনন্দের বন্যা। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত কলেজ সরকারিকরণ না হওয়ায় ক্ষোভে উত্তাল বড়লেখা উপজেলা। সর্বস্তরের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ মিছিল ও সভা করেছে। ১৮ জুলাই সোমবার কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলায় ছিলো দুটি অভিন্ন চিত্র। জানা যায় ৩০ জুন মৌলভীবাজার জেলার ৫টি কলেজকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়া হয়।
কলেজগুলো হলো কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ, রাজনগর ডিগ্রি কলেজ, জুড়ী তৈয়বুন্নেছা খানম ডিগ্রি কলেজ, বড়লেখা নারী শিক্ষা ডিগ্রি কলেজ ও কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয়। এছাড়া ১৩ জুলাই একমাত্র কুলাউড়া উপজেলাধীন নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। এই দু’টি প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণ করায় গোটা উপজেলা জুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণের দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কুলাউড়ার এই দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ একযুগ পরে বর্তমান মহাজোট সরকার এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণ করায় সর্বস্তরের মানুষ আনন্দিত। এককথায় কুলাউড়াকে এখন উৎসবের নগরি বলা যায়। কুলাউড়া নবীন চন্দ্র মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিবাবক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং সর্বস্তরের মানুষ সোমবার এক আনন্দ মিছিল করেছে। মিছিলটি বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে কুরাউড়ার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে ১৮ জুলাই মঙ্গলবার কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের উদ্যোগে এক আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কুলাউড়া নবীন চন্দ্র মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমরা বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু তনয়া ও গণতন্ত্রের মানস কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মহতি সিদ্ধান্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা। অর্থমন্ত্রীও শিক্ষামন্ত্রীসহ তাছাড়া সরকারে উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কুলাউড়ার সকল কৃতি সন্তান যারা রয়েছেন এর পেছনে তাদের যে অবদান তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কুলাউড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্রাচার্য্য জানান, এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার না। এটি কুলাউড়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো। সেই দাবি এই সরকারে আমলে পূরণ হয়েছে। কুলাউড়ার আগামী প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করবে। ভালো লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং সরকারে উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কুলাউড়ার কৃতি সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। নবীন চন্দ্র মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম জানান, এটি সরকারে একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফসল। কুলাউড়াবাসীর পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারে উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কুলাউড়া সকল কৃতি সন্তানদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
এদিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ঠিক বিপরীত চিত্র বিরাজ করছে। যদিও বড়লেখা নারীশিক্ষা ডিগ্রি কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। কিন্তু বড়লেখাবাসী তা সাদরে গ্রহণ করছে না। বরং এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ১৮ জুলাই সোমবার দুপুরে বড়লেখার প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে উপজেলা সদরের বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের উত্তর বাজার এলাকায় এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্র-শিক্ষক, গভর্নিং বডি, অভিভাবকসহ বড়লেখার আপামর জনসাধারণ। এ সময় প্রায় দুই ঘন্টা সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বড়লেখা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অরুন কুমার চক্রবর্তী। সহকারী অধ্যাপক জাহেদ আহমদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন, বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাস নান্টু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, বড়লেখা পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্রাক্তন ছাত্র তাজ উদ্দিন, কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানিমুল ইসলাম, কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সভাপতি ইমরান আহমদ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বক্তারা বলেন, ১৯৮৬ সালের ১০ জুলাই বড়লেখা উপজেলায় সর্ব প্রথম এই কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে এ কলেজটি ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়। ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরে এলে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। কিন্তু এতদিনেও বড়লেখা ডিগ্রি কলেজটি সরকারি হয়নি। সম্প্রতি দেশের ১৯৯টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। এ তালিকায় বড়লেখা ডিগ্রি কলেজের নাম না থাকায় স্থানীয়ভাবে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে জাতীয়করণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই সরেজমিন পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়। পরিদর্শন সম্পন্ন করেন পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ও উপ-পরিচালক (কলেজ-১) আবু সুলতান এ কে সাব্রী। পরিদর্শন প্রতিবেদন সুত্রে জানা যায়, ৩ একর ৬২ শতাংশ ভূমির ওপর স্থাপিত বড়লেখা ডিগ্রি কলেজটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৯০ সালের ১ মার্চ স্নাতক (পাস) পর্যায়ে এবং ১৯৯১ সালের ১ মার্চ এমপিওভুক্ত হয়। সরকারিকরণের সবধরণের অবকাঠামো বিদ্যমান। এরপর দেড় বছর ধরে রহস্যজনক কারণে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন প্রতিবেদনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বড়লেখা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অরুণ কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সরকারিকরণের উদ্দেশ্যে কলেজ পরিদর্শন হয়েছে। এরপর আর কোনো নির্দেশনা পাননি। সম্প্রতি দেশের ১৯৯টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের তালিকায় বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ না থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
মন্তব্য করুন