শিববাড়ি আস্তানার অদুরে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড বিষ্ফোরণ বড়লেখার আহত চিড়ামুড়ি বিক্রেতার আতংক কাটেনি : পরিবারে হতাশা যমের হাত থেকে যেন বেঁচে বাড়ি ফিরলাম
আবদুর রব॥ মনে হচ্ছে যেন যমের হাত থেকে বেঁচে বাড়ি ফিরলাম। কখনও ভাবিনি স্ত্রী-সন্তান আর স্বজনদের মূখ দেখবো। ভেবেছিলাম হয়ত আত্মীয়-স্বজন কেউ আমার মৃত্যুর খবরও জানবে না। আতিয়া মহলের অদুরে হুমায়ুন চত্ত্বরে জঙ্গিদের ছোড়া প্রথম গ্রেনেড বিষ্ফোরণে আহত জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে আসা বড়লেখার চিড়া মুড়ি বিক্রেতা বিপ্লব পাল (৪০) ২ এপ্রিল রোববার রাতে দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের নিজ দক্ষিণভাগ (পালপাড়া) গ্রামে নিজের বাড়িতে যুগান্তরকে সে দিনের দূর্বিসহ অনুভূতির কথা এভাবেই জানলেন। বিপ্লব পাল মৃত কিরেন্দ্র পাল ভাদাইর দ্বিতীয় ছেলে। বাড়ি ফেরার খবরে বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দরসহ আত্মীয়-স্বজনরা তাকে দেখতে ভিড় জমান।
দুই ছেলের জনক বিপ্লব পাল চিড়া-মুড়ি বিক্রি করে কোনমতে সংসার চালাতেন। বুকে-মূখে ও পায়ে অসংখ্য স্পিন্টারের যন্ত্রনায় বিছানায় কাতরাতে কাতরাতে তিনি বলেন, শিববাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে পৈতপাড়া গ্রামে ভাজিতি রিম্পি রানী পালের অসুস্থতার খবর পেয়ে ২৪ মার্চ তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ভাতিজির বাড়ি থেকে পরদিন (২৫ মার্চ) বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন। অনতিদুরে আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে শিববাড়ি থেকে পায়ে হেটে হুমায়ুন চত্ত্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। আনুমানিক ৭টার দিকে হঠাৎ বজ্রপাতের মতো বিকট শব্দে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো কিছু পদার্থ পা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়লে তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় মনে হয়েছিল এই বুঝি প্রাণটা বেরিয়ে যায়। এরপর পুলিশ ভ্যানে উঠা ছাড়া কোনকিছুই মনে নেই। অনেক রাতে বুঝতে পারেন তিনি হাসপাতালের বেডে রয়েছেন। তারমত শুনেছেন এভাবে ৫৪জনকে ওসমানীতে ভর্তি করা হয়েছে।
জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত বিপ্লব পাল আরো জানান, হাসপাতালে তাকে ৮ দিন সিটে রাখা হয়েছে। প্রথম চারদিন সাংবাদিক ও পুলিশের বড়বড় কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়ার কারণে ডাক্তাররা যতœসহকারে চিকিৎসা নেন। দুই পায়ে ব্যান্ডেজ করেন। পা ও শরীর থেকে কয়েকটি স্প্রিন্টার বের করেন। পরের চারদিন ডাক্তাররা আগের মতো খোঁজ খবর নেননি। শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে অনেকটা জোর করেই সিট কেটে তাকে বিদায় করে দিয়েছেন। ডাক্তাররা বলেছেন ১৩ এপ্রিল চেকআপ করাতে হাসপাতালে যেতে। দৈন্যতায় চিকিৎসা নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. কামরান আক্তার জানান, আহত বিপ্লব পালের উন্নত চিকিৎসা আর যথাসময় শরীরে থাকা স্প্রিন্টার বের না করলে হয়ত পুঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে।
বিপ্লব পাল জানান, তিনি দরিদ্র মানুষ কিভাবে চিকিৎসা করবেন আর কিভাবেইবা সংসার চালাবেন। একদিকে সমস্থ শরীরে অসংখ্য স্প্রিন্টারের যন্ত্রনা অন্যদিকে স্ত্রী সন্তানের ভরণ পোষণের চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছেন। সেদিনের ঘটনার কথা মনে হলে এখনও গা শিহরে উঠে। দরজা-জানালার শব্দ শুনলেই ভয়ে চমকে উঠেন।
বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় আহত হতদরিদ্র বিপ্লব পালের সরকারীভাবে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মন্তব্য করুন