শিশু মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে হামলা, ডাক্তারসহ আহত ৩
স্টাফ রিপোর্টার॥ জুড়ীতে শিশু মৃত্যুর জের ধরে এক্সপার্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: খালেদ সাইফুল্লাহ’র উপর হামলা করেছে নিহত শিশুর আত্মীয়স্বজনেরা।
সোমবার ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে উপজেলার ফুলতলা রোডের এক্সপার্ট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক বদরুল ইসলাম ও ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
শিশুটির পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলার এক্সপার্ট হাসপাতালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাঙ্গিরাই গ্রামের ইতালি প্রবাসী রাজিব হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করার পর অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নবজাতক শিশুসহ মাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবার। পরে নবজাতক শিশুটি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন অন্যত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করার পর রোববার সেখানে শিশুটি মারা যায়।
শিশুটির মৃত্যুর পর চাচা সজিব আহমদ সহ এলাকার অনেকেই শিশুটির মৃত্যুর বিষয়ে এক্সপার্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: খালেদ সাইফুল্লাহকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে জানাজা শেষে শিশুকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে রাত ৮ টার দিকে শিশুটির বিক্ষুব্ধ আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসক ডা : খালেদ সাইফুল্লাহ কে মারধর করেন। এ সময় তারা হাসপাতাল ভাংচুর করেছেন বলেও অভিযোগ করছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। হামলার সময় চিকিৎসককে উদ্ধার করতে গিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বদরুল ইসলাম ও ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
শিশুটির চাচা সজিব আহমেদ মুঠোফোনে জানান, আমার বাতিজা মৃত্যুর বিষয়ে এক্সপার্ট হাসপাতালের
ডা: খালেদ সাইফুল্লাহ দায়ী। ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই অকালে আমার বাতিজার মৃত্যু হয়েছে। আমরা ওই ডাক্তারের বিচার চাই।
নিহতের আরেক চাচা ইমন আহমদ জানান, হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তখনও আমার বাতিজার অক্সিজেন স্বল্পতা ছিল। কিন্তু ডা : সাইফুল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি না জানিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে ছাড়পত্র দিয়েছেন। বাতিজার মৃত্যুর বিষয়ে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাই একমাত্র দায়ী।
হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি জাঙ্গিরাই গ্রামের ইতালি প্রবাসী রাজিব হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করার পর অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি নবজাতক শিশুসহ মাকে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবার। এরমধ্যে শিশুটির শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করা হয় নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শিশুটি ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। মারা যাওয়ার পর আমাদের হাসপাতালের কোন গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পর হাসপাতাল ও ডাক্তারের উপর হামলা মেনে নেয়া যায় না। এ ব্যাপারে আমরা জুড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) অসীত দেবনাথ বলেন, ডা: সাইফুল্লাহকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর তাঁর মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে জুড়ী থানার (ওসি) তদন্ত হুমায়ুন কবির জানান, হাসপাতালে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ একটি অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন