শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো সওয়াবের কাজ
এহসান বিন মুজাহির॥ শীতকাল এলেই দরিদ্র-অসহায় মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে যায়। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতকাল বড় কষ্টের। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাতের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। হাড় কাঁপানো শীতের কবল থেকে তাদের রক্ষা করা এবং সামর্থ্যের ভিত্তিতে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রত্যেক মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত :১৯ ) একই বিষয়ে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সূরা দাহর :৮)
হজরত আবু সাঈদ (রা.) বলেনথ হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় ঢাকতে কাপড় দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরাবেন। -তিরমিজি হাদিসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ (বুখারি)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘হে বনি আদম, যদি উদ্বৃত্ত অর্থ দান করো, তাহলে ভালো হবে আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে।’ (আবু দাউদ) আরেক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন।’ (মুসলিম) প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ -আবু দাউদ শরিফ রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম )
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরিব-দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্য প্রাপ্য। তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। তাই আসুন, আমরা মানবিক মূল্যবোধ থেকে সবাই মিলে শীতে ফুটপাতে বা খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে সামর্থ্যের ভিত্তিতে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি।
লেখক: ভাইস প্রিন্সিপাল, দারুল আজহার ইনস্টিটিউট, শ্রীমঙ্গল
মন্তব্য করুন