শেখবাড়ি মহাসম্মেলন, মুসলমানদের বড় শক্তি ঐক্য: বরুণার পীর রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী
এহসান বিন মুজাহির : মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভৈরবগঞ্জ বাজারের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া মাদানিয়া ক্বাওমিয়া শেখবাড়ি জামিয়া মাদরাসার বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন ও
দেশের অন্যতম প্রাচীন দ্বীনি সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর ইসলাহি জোড়ে শুক্রবার শেষরাতে দেশ-জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনার মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয়েছে।
ইসলাহী জোড় ও মহাসম্মেলনে আমীরে আঞ্জুমানে বরুণার পীর শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বলেছেন-ঐক্য মুসলমানদের বড় শক্তি। মতভেদ আর দলাদলি পরিহার করে ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে সবাইকে এক হতে হবে। মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন শক্তি পরাজিত করতে পারবেনা। ঐক্যতার মূল ভিত্তি হল অহংকার, গর্ব, হিংসা পরিহার করা ও পীর বুজুর্গ আলেম ওলামাদের সামনে রেখে দ্বীন ইসলামের কাজকে এগিয়ে নেয়া।
শ্রীমঙ্গলের ভৈরবগঞ্জ বাজারের উত্তরে মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত শেখবাড়ি জামিয়ার মহাসম্মেলন ও আঞ্জুমানের কেন্দ্রীয় জোড়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম ও শেখবাড়ি জামিয়ার মহাসম্মেলনে কোরআন ও হাদিসের বাণী শোনার জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে শেখবাড়ি জামিয়ার বিশাল মাঠে ছুটে আসেন বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষেরা। শত শত গাড়ীর বহরে যানজটে রূপ নেয় ভৈরবগঞ্জ বাজারের মহাসড়ক। কেন্দ্রীয় জোড় ও শেখবাড়ি জামিয়ার সম্মেলনের বিশাল মাঠে প্রায় লক্ষাধিক মুসল্লির শৃঙ্খলার জন্য হাজারখানেক স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা ছিলেন তৎপর। এছাড়াও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ছিল অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প।
সম্মেলন ও কেন্দ্রীয় জোড় উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শেখবাড়ি মাদরাসার আল ফারুক ছাত্র সংসদ ও বাংলা সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরবি ও বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশসহ চারু-কারুর মাধ্যমে পুরো মাদরাসা ক্যাম্পাসটি সুসজ্জিত করেন। তাদের এসব সৃজনশীল কার্যক্রম ও প্রকাশনী দেখে মাহফিলে আগত অতিথিসহ মুসল্লিরা বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সুশৃঙ্খলিত ব্যবস্থাপনা ছিল বেশ প্রশংসনীয়।
দুই দিনব্যাপী জোড় ও মাহফিলে ধারাবাহিক ইসলাহি বয়ান, কুরআন তিলাওয়াত ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির আসকারসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগিতে শেখবাড়ি মাদরাসা ময়দান এক পবিত্র পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়।
সম্মেলনে বয়ান পেশ করেন আমীরে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, বরুণা মাদরাসার সদরে মুহতামিম হাফিজ মাওলানা সাইদুর রহমান বর্ণভী, মাওলানা ওলিউর রহমান বর্ণভী, বরুণা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা সিবগাতুল্লাহ নূর বি-বাড়িয়া, লেখক গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ, মাওলানা আবদাল হোসেন খান, অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, নুরুল কুরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমদ বেলাল, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, শেখবাড়ি জামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী, হাফিজ মাওলানা সাদ আমীন বর্ণভীসহ অর্ধশতাধিক দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ।
মহাসম্মেলনে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন শেখবাড়ি জামিয়ার মুহতামিম, আমীরে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম, শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।
দুদিনব্যাপী জোড় ঔ ইসলামী মহাসম্মেলনে দেশবরেণ্য আলেম-ওলামাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিপুল মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
সিলেট বিভাগের বরেণ্য বুজুর্গ, শায়খুল আরব ওয়াল আজম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) এর খলিফা, আল্লামা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভীর (রহ.) এর দোয়ার ফসল শেখবাড়ি জামিয়া।
প্রসঙ্গত, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার খ্যাতিমান বুযুর্গ খলীফায়ে মাদানী কুতবে দাওরান হযরত লুৎফুর রহমান বর্ণভী (পীর সাহেব বরুণা) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে প্রায় ৯ দশক ধরে ইসলাহী এ সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে মানবতার কল্যাণ, মুসলমানদের দ্বীন-ঈমানের সংরক্ষণ ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন