শেষ হলো মন্ট্রিয়লের একুশে বই মেলা
সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে॥ কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির উদ্যোগে সফলভাবে শেষ হলো কানাডার বৃহৎ লেখক,পাঠক মিলন মেলা, বইমেলা। সৃজনশীল সংগঠন কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির উদ্যোগে ৪১৯সেন্টরক উইলিয়াম হিংস্টন ভবনে অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চম একুশে বইমেলা কবিতা উৎসব ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বিগত চারটি সফলবইমেলার ধারাবাহিকতায় এবারও উইলিয়াম হিংস্টন ভবনের মূল লবি জুড়ে কবি লেখক, সাহিত্যিকদের সরব উপস্থিতি, বই প্রেমী পাঠকশ্রোতা আর সারিসারি বই, সুসজ্জিত বই ষ্টল, শিশু কিশোর-তরুনদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি, শহীদ মিনার, ফুল, বাংলাদেশের পতাকা, সাদা-কালো পোশাকের নরনারী, ক্যামেরা হাতে কানাডা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সরব তৎপরতাসব মিলে একুশের যে আবহ তৈরী হয়, কে বলবে স্থানটি দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দুরের মন্ট্রিয়ল নামের এক শহর। দিন ব্যাপিবইমেলা আর সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক উৎসব ছিলো নানা আয়োজনে ভরপুর। সকাল থেকেই মেলায় অটোয়া টরন্টো, নিউইয়র্ক ও মন্ট্রিয়লেরলেখক, সাহিত্যিক ও প্রকাশনী সংস্থা সমুহ তাদের ষ্টল সাজিয়ে বসেন। টরন্টোর এটিএন মেগা ষ্টোর ও নিউইয়র্কের মুক্তধারায় ছিলসবচেয়ে বেশী সংখ্যক বই। সব বয়সের এবং সব ধরনের বই এ দুটো ষ্টলে ছিল। একে একে ক্রেতা-দর্শকরা মেলায় আসতে থাকেন।ঘোরা ফেরা, আড্ডা, বইকেনা, পরিচিত স্বজনদের সাথে দেখা হওয়া সব মিলে তৈরী হয় এক উৎসব মুখর পরিবেশ। যদিও বাইরে ছিলশীতের ফেব্রুয়ারির তুমুল বৃষ্টি। প্রায় সারা দিনই বাইরের প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মেলায় আসেন মন্ট্রিয়লের বিভিন্ন সামাজিকসাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ ও বই প্রেমীরা।
মেলার উদ্বোধনঃ ২৫ শনিবার ফেব্রুয়ারি দুপুর দুইটায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বইমেলার প্রধান অতিথি আমেরিকা থেকে আগত লেখক সাংবাদিকহাসান ফেরদৌস। সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া প্রধান অতিথি হাসান ফেরদৌস ও আমন্ত্রিত অতিথিরা সকলে মেলা প্রাঙ্গনেস্থাপিত হওয়া অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। এসময় কন্ঠ শিরপঈ মাশিয়াররহমান সোহেলের নের্তৃত্বে সমবেত ভাবে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো গানটি পরিবেশন করা হয়। । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনটরন্টো থেকে আগত বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক ও এনআরবি টিভির সিইও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শহীদুল ইসলাম মিন্টু, নিউইয়র্কবইমেলার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক লেখক তাজুল মোহাম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিবুর রহমান, ফ্রেঞ্চ স্কুল বোর্ডকমিশনার খোকন মনিরুজ্জামান, টরন্টোর বিখ্যাত বই প্রতিষ্ঠান এটিএন মেগা ষ্টোরের স্বত্তাধিকারী আনোয়ার শামসুদ্দোহা সহ অনেকেই।
শিশু কিশোর প্রতিযোগিতাঃ টরন্টো থেকে আগত চিত্রকর নূর জালালীর তত্ত্বাবধানে ত্রিশ জনেরও বেশী শিশু কিশোর চিত্রাঙ্কনপ্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দেড় ঘন্টা ব্যাপী প্রতিযোগিতায় ক ও খ গ্রুপের খুদে চিত্রকররা কাগজে রঙ পেন্সিল দিয়ে তুলে আনেবাংলাদেশকে, বাংলাদেশের গ্রাম, ঋতু বৈচিত্র, শহীদ মিনার আর জাতীয় পতাকা। এ পর্বের প্রধান বিচারক ছিলেন নূর জালালী।
শিশু কিশোর বর্ণ পরিচয় প্রতিযোগিতাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য্য’র তত্ত্ব¡াবধানেঅনুষ্ঠিত হয় বর্ণ পরিচয় প্রতিযোগিতা। ইংরেজ ভাষী মন্ট্রিয়লে জন্ম আর বেড়ে উঠা শিশু কিশোররা অংশ গ্রহন করে এ পর্বে। খুবইব্যতিক্রমধর্মী পর্বটির বিচারক ছিলেন শিশির ভট্টাচার্য্য।
সৈয়দ শামসুল হক মঞ্চঃ এবারের বইমেলা উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এর প্রতি। মঞ্চের নাম করনওকরা হয় এই কবির নামে। সারা দিন সৈয়দ শামসুল হক মুক্ত মঞ্চে একে একে বক্তব্য রাখেন, অংকুর প্রকাশনীর পক্ষ থেকে দিলীপকর্মকার, লেখক কবি হামোম প্রমোদ, কবি সুলতানা সাজী, কবি আব্দুল হাসিব, ম্যাকগীল বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষেহেমন্তি পল, কনকর্ডিয়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি অনিকা রহমান, প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পক্ষ থেকে মুক্ত মঞ্চেবক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কাজী আলম বাবু-নির্বাহী বাংলামেইল, সদেরা সুজন-সিবিএনএ মাইটিভি, তানভীর ইউসুফ রনী-ইটিভি, যমুনাটিভি, খালিদ হোসেন শাহীন-বাংলার কন্ঠ, টিভি এশিয়া, ইকবাল কবীর-টিভি এশিয়া, আর টিভি এন টিভি, বাংলাদেশ সোসাইটি অবমন্ট্রিয়লের সভাপতি কামাল চৌধুরী।
টরন্টোর এটিএন মেগা ষ্টোর বই উপহার দেয় ম্যাকগীল ও কনকর্ডিয়া শিক্ষার্থীদের। টরন্টোর প্রখ্যাত বই প্রতিষ্ঠান এটিএন মেগা ষ্টোরজনপ্রিয় সব বই নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মন্ট্রিয়লের একুশে বই মেলায়। এটিএন এর স্বত্ত্বাধীকারী আনোয়ার শামসুদ্দোহা মেলায় ষ্টল সহউপস্থিত থাকা ম্যাকগীল ও কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে একটি করে বইউপহার দেন।
তারুন্যের জয় জয়কার ঃ সলিডারিটির এবারের পঞ্চম একুশে বইমেলা দিনভরই মুখরিত ছিল নতুন প্রজন্মের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে।হাইস্কুল, আর কলেজ পড়ুয়া নতুন প্রজন্মের কিশোর তরুনরা সারাদিন শুধু মেলায় ছিলোনা, বরং বাংলা, ইংরেজী ফ্রেঞ্চ বই নিয়েরীতিমত মেলায় ষ্টল সাজিয়ে বসেছিল। স্টলের নামছিলো ‘আমাদের প্রজন্ম’ আর সাজিয়েছিল বাংলা বর্ণমালা দিয়ে। নিঃসন্দেহে প্রবাসীমেলার জন্য এ ছিলো অনেক বাড়তি পাওনা।
সেমিনার ঃ সন্ধ্যা সাত টায় মূল মঞ্চে কানাডা-বাংলাদেশ সলিডারিটির সভাপতি জিয়াউল হক জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় একুশেসেমিনার। তথ্যবহুল ও প্রাঞ্জল সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর অধ্যাপকড. শিশির ভট্টাচার্য্য। সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন লেখক হাসান ফেরদৌস, লেখক তাজুল মোহাম্মদ, সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম,অধ্যাপক আবু হোসেন জয়, ভিএজিবি সভাপতি শাহ মোস্তাইন বিল্লাহ, সিবিএস উপদেষ্টা খান সাইফুদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুররহমান।
একুশে সম্মাননা পদকঃ প্রতিবারের মতো এবারও বইমেলা থেকে একুশে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারের একুশে সম্মাননা পদকদেওয়া হয় মন্ট্রিয়ল প্রবাসী লেখক তাজুল মোহাম্মদ কে।
মন্তব্য করুন