শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

May 1, 2019,

এহসান বিন মুজাহির॥ পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ইসলামে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা অপরিসীম। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কুরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আজ অবধি পৃথিবীতে যা কিছু গড়ে উঠেছে তা সবই শ্রমের ফল এবং শ্রমিকের কৃতিত্ব। ইসলাম শ্রমিক এবং শ্রমকে যথার্থ মূল্যায়ন করেছে। একমাত্র ইসলাম ধর্মই শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে মূলনীতি ও বিধান প্রবর্তন করেছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-‘অতপর নামাজ সমাপ্ত হলে

জীবিকার্জনের জন্য তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’।  (সূরা আল জুমআহ, আয়াত নং : ১০)। আল্লাহ এরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি’। (সূরা বালাদ, আয়াত নং : ৪)। কুরআনে আরও এরশাদ হয়েছে-‘সর্বোত্তম শ্রমিক সে, যে দৈহিক দিক দিয়ে শক্ত-সমর্থ্য ও আমানতদার।’ (সূরা কাসাস : ২৬)।

পৃথিবীর সর্ব প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হজরত আদমই (আ.) থেকে শুরু করে বহু নবী-রাসূল এমনকি সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ  নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহও (সা.) শ্রমজীবী ছিলেন। নবী-রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামগণ নিজ হাতে কাজ করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। আমাদের প্রথম নবি হজরত আদম (আ.) ছিলেন দুনিয়ার প্রথম চাষি, হজরত শুয়াইব (আ.) ও হজরত হারুন (আ.) এর পেশা ছিল পশু পালন ও দুধ বিক্রি। হজরত মুসা (আ.) ছিলেন একজন রাখাল। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) এবং মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সৎ ব্যবসায়ী। এছাড়াও হজরত লুত ও হজরত শিস (আ.) ছিলেন কৃষক, হজরত ইদরিস (আ.) ছিলেন দর্জি, হজরত নুহ (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রি, হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত হুদ (আ.) সালেহ (আ.) ছিলেন ব্যবসায়ী।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- আল্লাহ দুনিয়াতে এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি ছাগল ও ভেড়া চরাননি। তখন সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল (সা.) আপনিও? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ! আমিও মজুরীর বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল ও  ভেড়া চরাতাম’। (বুখারি, হাদিস নং: ১৩৪০)। হজরত আবু বকর (রা.)  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন-‘অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা নং :.২৬৯৭)। হজরত রাসূল (সা.) শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি গুরত্ব দিয়ে মালিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেন-‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও’। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৮১৭)।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও এরশাদ করেন-‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের প্রতিপক্ষ। আর আমি যার প্রতিপক্ষ, তাকে পরাজিত করবই। তন্মধ্যে এক শ্রেণি হলো, যে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করে, অতঃপর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করে নেয় কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না’। (বুখারি দ্বিতীয় খন্ড, হাদিস নং : ৭৭৬)

রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ধরণের উপার্জন উত্তম ও শ্রেষ্ঠ? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ব্যক্তির নিজ হাতে কাজ করা এবং সৎ ব্যবসা। (সুয়ুতি আদদুররুল মানসুর, খ- ৬, পৃষ্ঠা ২২০)। হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুশয্যার সময়ও নামাজ এবং অধীনস্থদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ৫১৯)। হাদিসে এরশাদ হয়েছে-‘কারও জন্য নিজ হাতের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য বা খাদ্য আর নেই। আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই  খেতেন’। (মিশকাত শরিফ, হাদিস নং : ২৭৫৯)। পরিশেষে বলা যায়-একমাত্র ইসলাম ধর্মই শ্রম এবং শ্রমিকের যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করে যথার্থ মূল্যায়ন করেছে।

লেখক : আলেম সাংবাদিক ও প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com