শ্রীমঙ্গলে কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা, হুমকিতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য
এহসান বিন মুজাহির : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা। কৃষি পণ্য উৎপাদনে এ উপজেলায় সুনাম থাকলেও প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম এলেই ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে যায়। তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করার ফলে এক দিকে কমছে ফসলি জমি, অন্যদিকে ব্যাহত ফসল উৎপাদন। সেই সাথে মাটি বহনের ট্রাকের কারণে ধ্বংস করা হচ্ছে কাঁচা পাকা রাস্তা ঘাট। ফসলি জমির মাটি বিক্রি ও মাটি কেটে ফসলি জমি ধ্বংস করা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না মাটি ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবুজ মিয়া এবং লোকমান গংরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছেন অবৈধ মাটির ব্যবসা। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে আশিদ্রোন এলাকার ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি, ব্রিজ, রাস্তাঘাট। তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসি।
মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের আশিদ্রোন ও শিববাড়ি এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমিতে ৩০জন শ্রমিক মাটি কেটে ১৫টি ট্রাক গাড়ি ও ২টি ট্রাক্টর গাড়িতে বোঝাই করছেন। এসব মাটি ট্রাক্টর ও ট্রাক দিয়ে শহরের মৌলভীবাজার রোড, শহরতলীর মুসলিমবাগসহ বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি-ভিটে এবং পুকুর ভরাটের জন্য ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় বেশিরভাগ জমিই তিন ফসলি। এখানে ধান, আলু, ভুট্টা, ধনিয়া, কাকরুলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। মাটি কেটে বিক্রি করার ফলে দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাটির ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করলেও ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছেন। ব্যবসায়িরা দিনে বা রাতে সময় পেলেই ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। এলাকাবাসিরা জানান, মাটির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার ফলে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে নালা অথবা জলকড়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। নির্বিচারে যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফসলি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কমে যাবে ফসল উৎপাদন। এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আজও শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন পশ্চিম ভাড়াউড়া, মাজদিহি, বিষামনি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান করেছি। কিন্তু হাতেনাতে কাউকে আটক করা যায়নি বিধায় জরিমানা করা হয়নি। তবে গতকাল বাইক্কা বিলে অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৬০০০/- মি কারেন্ট জাল জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আজ এসিল্যন্ডকে অভিযানে পাঠিয়েছিলাম। আমরা খবর পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করছি। যে বা যারা কৃষিজমির মাটি কাটছেন, তাঁদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন