শ্রীমঙ্গলে ডাক্তারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বেঁচে গেলেন সাপে কাটা গর্ভবতী মা
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গলে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্্ের আসা একজন সাপে কাটা গর্ভবতী রোগীকে অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও দক্ষতার সাথে চিকিৎসা দিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্্েরর দক্ষ মেডিকেল টিম। বর্তমানে সন্তান সম্ভবা রোগী সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলে সম্পুর্ণ সুস্থ রয়েছেন।
জানা যায়, গত শুক্রবার ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডলুছড়া গ্রামের ৩২ বছর বয়সী সখিনা বেগম নামের এক গর্ভবতী নারীকে বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়। সাপে কাটা রোগীকে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়। ততক্ষণে রোগীর অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যেতে থাকে। পরে রোগীর স্বজনেরা পরের দিন সন্ধ্যার সময় মুমুর্ষ অবস্থায় রোগীকে নিয়ে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্রেক্্ের। রোগীকে জরুরী বিভাগে নেওয়ার পর ডিউটিরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সম্্রাট কিশোর পোদ্দার রোগীর স্বামী বাবুল মিয়ার কাছ থেকে সম্পুর্ণ ঘটনা অবগত হয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে বিষধর সাপে কাটা বলে নিশ্চিত হন।
এসময় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্্েরর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী উপস্থিত হন। পরে ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীর তত্বাবধানে এবং রোগীর স্বজনদের উপস্থিতিতে সতর্কতার সাথে রোগীর শরীরে এন্টিভেনম প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে গর্ভবতী রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করেন গাইনী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রোকসানা পারভীন। এসময় মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শারমিন আক্তারও রোগীর ছিলেন। রোগীকে প্রথম ডোজ অ্যান্টিভেনম দেয়ার পরও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী নির্দেশে রোগীকে দ্বিতীয় ডোজ এন্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়।
বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদকে অবগত করা হলে তিনি দ্রুত শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্যকমপ্রেক্্ের ছুটে আসেন। এদিকে দ্বিতীয় ডোজ এন্টিভেনম দেওয়ার পর রোগীর অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। রোগী কথা বলা এবং নিজের সম্পূর্ণ নাম ঠিকানা বলা বলতে পারছে। পরিবারের সবাইকে চিনতেও পারছিল। কিন্তু রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা উঠানামা করায় এবং শ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল দেখে সিভিল সার্জনের নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। রোগী সিলেট প্রেরণের জন্য আইসিইউ সহ সকল ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আবারো রোগীর শরীরে এন্টিভেনম প্রয়োগ করেন ডাক্তাররা। এরপর রোগীর শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়াজনিত লক্ষণগুলো কমতে শুরু করে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রোগী সুস্থ আছে এবং স্বাভাবিক খাবার দাবার খেতে পারছে বলে জানা যায়।
সময় মতো সাহসী প্রদক্ষেপ না নিলে হয়তো অনাগত সন্তানসহ গর্ভবতী মাকে বাঁচানো সম্ভব হতোনা। দক্ষতার সাথে রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করায় শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্যকমপ্লেক্্েরর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক টিমের প্রশংসা করেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালক।
মন্তব্য করুন