শ্রীমঙ্গলে ফেরদৌসী হত্যার মামলা নেয় নি পুলিশ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ “মামা, আম্মুকে তারা মেরে ফেলেছে” ও পাশ থেকে মোবাইলে এমনই সংবাদ জানিয়েছিল ফেরদৌসীর ৫ বছর বয়সী ছেলে মতিউর রহমান তকি। এর পর থেকেই ফেরদৌসীর দুই শিশু সন্তানকে লুকিয়ে রেখেছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। এ ব্যাপারে লোকাল থানায় ফেরদৌসী হত্যা মামলা করতে গেলে দিনের পর দিন ঘুরিয়ে নানা টাল-বাহানায় মামলা নেয় নি পুলিশ। অত:পর একটি পিটিশন মামলা করেন ফেরদৌসীর বড় ভাই জিয়াউল হক জিহাদ।
ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের সাতগাঁও বাজারের মাধবপাশা এলাকায়। নিহত ফেরদৌসীর বড় ভাই জিয়াউল হক জিহাদ জানান, ফেরদৌসীকে পরিকল্পিতভাবে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা বিষপানে হত্যা করে। পরে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে থাকে তারা। ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ফেরদৌসীর দুই সন্তানকেও লুকিয়ে রেখেছে তারা। এ ব্যাপারে বারবার থানায় মামলা করতে গেলে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল ঘটনাটিকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। তিনি জিহাদকে হত্যা মামলার ৩০২ ধারার বদলে আত্মহত্যা প্ররোচনায় ৩০৬ ধারায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেন। জিহাদ ৩০৬ ধারায় মামলা দিতে না চাইলে তাকে বিদ্রুপাত্বক আচরণ করে থানা থেকে বের করে দেন ওসি নজরুল। বাধ্য হয়ে ২৮ আগষ্ট সোমবার মৌলভীবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন জিহাদ। এদিকে ফেরদৌসী হত্যাকান্ডটি ধামা-চাপা দিতে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে বোন ফেরদৌসী হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন জিহাদ।
জানা যায়, ভূনবীর ইউনিয়নের সাতগাঁও বাজারের মাধবপাশা এলাকার বাসিন্দা মৃত দলিলুর রহমানের পুত্র সাইফুর রহমান ২০১০ সালে পার্শ্ববর্তী আঐ গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাসারের মেয়ে ফেরদৌসী আক্তারকে সামাজিকভাবে বিয়ে করেন। সাইফুর রহমান সৌদি আরবে থাকেন। তাদের যৌথ পরিবারে ফেরদৌসীর ওপর কাজের চাপও ছিল বেশি। বিয়ের পরে ফেরদৌসীর পরিবারের লোকজনের কাছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা চাইতে শুরু করে। টাকা দিতে না পারলে ফেরদৌসীর ওপর নেমে আসতো চরম নির্যাতন। এর জের ধরে স্বামীর বিদেশ থাকার সুযোগে ১৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেরদৌসিকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে বিষপানে হত্যা করে। ঘটনার প্রায় এক ঘন্টা পর ফেরদৌসীর পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে তারা ফেরদৌসীকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে যায়। সেখানে ফেরদৌসীর অবস্থা আশংখ্যাজনক হওয়ায় ফেরদৌসীকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফেরদৌসীকে মৃত ঘোষণা করলেও তারা মৃত ফেরদৌসীকে নিয়ে সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবশেষে রাত দেড়টায় ফেরদৌসীর ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে আনা হয়। এ ব্যাপারে জিহাদ বলেন, “আমরা যাতে করে কিছু বুঝতে না পারি সেজন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সময় কাটানোর জন্যই এসব নাটক সাজানো হয়েছিল”। এমনকি ফেরদৌসীর দেবর মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডিপে¬ামা চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকায় অর্থের বিনিময়ে ফেরদৌসীর ময়না তদন্তের রিপোর্টও ঘুরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফেরদৌসীর বাবা-মা।
ফেরদৌসীর দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তার দেবর ডিপ্লোমা চিকিৎসক সাইদুর রহমান কোন সদোত্তর দিতে পারেন নি। তিনি ঘটনাকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।
থানায় মামলা নেওয়া হয় নি কেন জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম কথাটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ফেরদৌসী হত্যার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় কোন অভিযোগ আসেনি। বরং এ ব্যাপারে ফেরদৌসীর লোকজন আমার কাছে আইনি পরামর্শ চেয়ে ছিল। আমি তাদেরকে যতটুকু সহযোগিতা করার করেছি”। আদালতের পিটিশন মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, “আদালতের কোন আদেশ আমি পাইনি, পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো”।
মন্তব্য করুন