শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মন্দির-গির্জা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বরুণা মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ দীর্ঘ ১৫ বছর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনিরাপদ হয়ে ওঠার ভুয়া খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একশ্রেণির দুর্বৃত্তরা স্থাপনা ভাঙচুর, নৈরাজ্য ও লুটপাট শুরু ও চোর-ডাকাতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এখন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানা যায়। তাই জনমনে আতঙ্ক দূর করতে মাঠে নামেন শ্রীমঙ্গলে জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও উপজেলার বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন। জনমনে উৎকণ্ঠতা দূর করতে রাত জেগে পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গভীর রাতে সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের জগন্নাথ দেবের আখড়া, ভৈরব মন্দির, সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী, ক্যাথলিক মিশন, শ্রী শ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ী, বারোয়াড়ী কালীবাড়ী, রামকৃষ্ণ মিশন, জগদ্বন্ধু আশ্রম ও মিশন, ইসকন মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরের সামনে দেখা যায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, বসে-বসে, আবার হেঁটে হেঁটে এইসব মন্দির-গির্জা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কাজে সারারাত ব্যাপী দলবেঁধে পাহারা দিচ্ছেন জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসা, শেখবাড়ি মাদ্রাসাসহ উপজেলার কয়েকটি কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, স্কুলের শিক্ষক-ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শহরসহ পাড়া,মহল্লার সংখ্যা লোকজন।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা থেকে ভয়ে পুলিশ পালিয়ে যায়, এর পর থেকে পুলিশ না থাকায় চোর-ডাকাত ও দুবৃর্ত্তদের হামলা-ভাঙচুর ঠেকাতে তারা এ উদ্যোগ নেন।
জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে গত ৫ আগস্ট রাত থেকে উপজেলার বিভিন্ন মন্দির ও উপসনালয়ে রাতভর পাহারা কার্যক্রম ও দিনের বেলা ট্রাফিক এর দায়িত্ব পালন করে আসছে বরুণা মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষদের যৌথ টিম।
জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা ক্বারী মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বরুণা মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক স্বাধীনতার যুদ্ধে ১৯৭১ সালে হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পাহারা দিয়েছিলেন। এখন ২০২৪ সালে উপজেলার বিভিন্ন মন্দির রাতের আধারে পাহারা দিচ্ছেন ছাত্র-শিক্ষকরা।
তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে যাতে কেউ কোনো ধরনের ধ্বংস চালাতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন এলাকার সচেতন নাগরিকদের আহ্বান জানাই।
আরো বলেন, গতরাত ০১টার সময় সেনাবাহিনীর এক টিম এসে পাহারারত ছাত্রদের স্বাগত জানায়। এবং বলেন কোন সমস্যা মনে হলে কল দিবেন। আমরা সহযোগিতা করব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বরুণা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মুস্তাকিম আহমদ, সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা খলিল আহমদ ও হাঃ আব্দুর রহমান, মাওলানা মাহফুজুর রহমান হুজাইফা সহ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন