শ্রীমঙ্গলে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে ২৪ জন আহত, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক
এহসান বিন মুজাহির॥ শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের কুকুরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুরের কামড়ে গত দুই দুনে শিশু ও বৃদ্ধসহ ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক শিশুকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও গুরুতর আহত আরও তিনজনকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
৫০শয্যবিশিষ্ট শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে শনিবার (৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে শিশু ও বয়স্কসহ ২৪ জন ব্যক্তি শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত ব্যক্তিরা হলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের আলিসারকুল গ্রামের সিতারাম এর পুত্র গজানন্দ (৬৭), শ্রীমঙ্গল শহরতলীর লালবাগ এলাকার রাজেলা রায় এর পুত্র ঝন্টু (১২), সবুজবাগ এলাকার কামিনি চন্দ এর পুত্র শ্রীকান্ত চন্দ্র (৫৮), মুসলিমবাগ এলাকার রমজান আলীর পুত্র আমান উল্লাহ (২১), মৌলভীবাজার রোডের জুয়েল মিয়ার পুত্র রুহিত মিয়া (১০) ও রায়হান মিয়া (৫), একই এলাকার তাহের মিয়ার পুত্র শাহ আলম (৭৫), লালবাগ এলাকার রিংকু সুত্রধর এর কন্য জয়শ্রী (২৫), সিন্দুরখান ইউনিয়নের দূর্গানগর এলাকার মফিজ উল্লাহর পুত্র কেফায়েত উল্লা (৫০), পৌর শহরের মিশন রোডের নজরুল মিয়ার পুত্র আল আমিন মিয়া (১৭), লালবাগ এলাকার সমীরন শীল এর পুত্র সন্দীপন শীল (৭), শহরের মিশন রোডের সুলতান মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগম (৪৫), লালবাগ এলাকার লিলু মিয়ার পুত্র জিহান (৫), রামনগর এলাকার গোপাল কাহার এর স্ত্রী রামরতি কাহার (৯০), শাহীবাগ এলাকার মনির মিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম (৬০), ইসমাইল খান এর পুত্র আসলাম খান (৩৯), শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের দীনেশ চন্দ্র দেব এর পুত্র দিলীপ কুমার দেব (৮৩), সবুজবাগ এলাকার নরেশ চক্রবতীর পুত্র শ্যমল চক্রবতী (৫০), শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা এলাকার নিরঞ্জন দেব (৭০), মিশন রোডের আবু নাসের মফির উদ্দিন এর পুত্র উমেদ আলী (৬০), নোয়াগাঁও এর এরশাদ মিয়ার পুত্র রুমেল মিয়া (২৩), কাকিয়াছড়া চা বাগানের বিষ্ণুর পুত্র বন্ধন (৮), বিরাইমপুর এলাকার মকবুল হোসেনের পুত্র রুবেল (৩২)।
কুকুরের কামড়ের আহত রুমেল মিয়ার নামের এক যুুবক বলেন, নোয়াগাঁও এলাকায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে কুকুর কামড় দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কুকুর নিধনের কোনো ব্যবস্থা নাই। পাড়া মহল্লায় শত শত কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে, মানুষকে কামড় দিয়ে আহত করছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পাগল কুকুরটিকে ধরা হয় অথবা মেরে ফেলা হয়।
শহরের মৌলভীবাজার রোডে কুকুরের কামড়ে আহত চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুহিত মিয়া জানান, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর বাসা থেকে মৌলভীবাজার রোডের একটি দোকানে পেনসিল কিনতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একটি কুকুর আমার দিকে তেড়ে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুকুরটি আমার হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। পরে লাথি দিয়ে পা ছাড়াই।
কুকুরটি লাথি খেয়ে পালিয়ে যায়।
রায়হান মিয়া নামের আরেক শিশু বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমি বাসার গেটের সামনে ছিলাম। হঠাৎ কুকুরটি এসে হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। পরে মানুষজন এসে কুকুরকে তাড়িয়ে দেয়।
কুকুরের কামড় খাওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মানুষকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ এই কুকুর কামড় দিয়েছে। কুকুরটির মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। কুকুরটি দেখতে
লাল রঙের (মায়া হরিণের রঙ) হালকা-পাতলা গড়নের।
শনিবার ৮ জুন বিকেলে মুঠোফোনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন, জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সূচিশ্রী সাহা বলেন, কুকুেের কামড়ে আহত হয়ে এখন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন শিশু ও বয়স্কসহ মোট ২৪জন। এরমধ্যে ভর্তি করা হয়েছে একজনকে। গতকাল মৌলভীবাজার রেফার করা হয়েছে গুরুতর ৩জনকে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক শিশুকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়েছে।
বেওয়ারিশ কুকুরকে জলাতঙ্ক রোধে প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনো তৎপরতা দেখা না যায়নি। তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছিল তৎপর।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে কুকুরের কামড়ের রোগীরা হাসাপাতালে আসা শুরু করেন। শহর-শহরতলীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুরের কামড়ে আহত ব্যক্তিরা শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা ও ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যকসিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মজুদ রয়েছে।
জলাতঙ্ক রোধে প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কর্ণ চন্দ্র মল্লিক জানান, প্রতিষেধক টিকা বরাদ্দ না থাকায় আমাদের কার্যক্রম চালাতে পারছি না। খুব শিগগিরই হয়তো পেয়ে যাব। তবে শহরে কুকুর থেকে সতর্ক থাকতে মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কুকুর নিধনের কোনো সুযোগ নেই। পাগলা কুকুরটিকে শনাক্ত করে ধরার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন