শ্রীমঙ্গলে ভেজাল মরিচ তৈরীর সময় মিলের মালিকের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

April 17, 2017,

বিকুল চক্রবর্তী॥ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন মশল্লা মিলে পঁচা মরিচের কিছু বিজের সাথে ধানের ভুষি, চালের গুড়া ও বাসন্তী রং মিশিয়ে তৈরা করা হচ্ছে খাঁটি মরিচের গুড়া। আর অল্প হলুদের সাথে চালের গুড়া ও হলুদ রং মিশিয়ে তৈরী হচ্ছে হলুদের গুড়া। এভাবে ধনিয়ার সাথে ধানের তোষ, কাঠের গুড়া ও এক ধরনের সেন্ট মিশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ধনিয়া ও জিরার গুড়া। আর এ গুড়াই বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে ও গ্রামে গঞ্জের বিভিন্ন দোকানে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাই কিনে নিয়ে তৈরী করছেন দৈনদিন আহারের তরী-তরকারীসহ বিভিন্ন খাবার। এ ভেজাল খাবার খেয়ে নিজের অজান্তেই মানুষ হয়ে পড়ছেন অসুস্ত। অনেকে মারাও যাচ্ছেন। প্রায়ই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয় ভেজাল ব্যবসায়ীদের। জরিমানা করার পর কিছু দিন অতিবাহিত হতে না হতেই তারা আবারও শুরু করে দেয় এ ব্যবসা।


সোমবার ১৭ এপ্রিল দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নতুনবাজার সোনারবাংলা রোডে মো: আঙ্গুর মিয়ার মালিকানাধিন মাসুম মশল্লা মিলে দরজা বন্ধ করে ভেজাল মশল্লা তৈরী করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশসহ শ্রীমঙ্গল সহকারী কমিশনার বিশ্বজিত পাল ঘটনাস্থলে পৌছে হাতে নাতে ধরেন এ ভেজাল কর্মকান্ড। সাথে সাথে মোবাইল কোট পরিচালনা করে এই প্রতিষ্টানের মালিককে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেন বলে জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বিশ্বজিৎ পাল ।
তিনি জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের খবর পেয়ে মালিক আঙ্গুর মিয়া পালিয়ে যায়। তবে হাতে নাতে আটক করেন প্রতিষ্টানটির ৩ শ্রমিককে। শ্রমিকরা উপস্থিত জনগনের সামনেই তারা যে ভাবে মশল্লায় ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত করে তা স্বীকার করে। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালত প্রায় ৪শত কেজি ভেজাল মশল্লা জব্দ করে। পরে এ ভেজাল মশল্লাগুলো শহরের হবিগঞ্জ সড়কের ভুরবুড়িয়া ছড়ায় ফেলে দেয়া হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় ভ্রাম্যমান আদালতে আটক মিলের শ্রমিক গোপাল দাশ বলেন, বিভিন্ন গ্রাম এলাকা থেকে ও খোলা বাজারের দেকানীরা নিজে হলুদ-মরিচ-ধনিয়া নিয়ে এসে এখানেই তারা তা মিশ্রিত করে নিয়ে যায়। আমরা শুধু মশল্লা ভাঙ্গার টাকা নেই।
এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতে আসা শ্রীমঙ্গল থানার এস আই রাব্বি জানান, এখানে যে সকল মশল্লা দোকানী আসেন তাদের প্রায় সবাই এরকম ভেজাল করে থাকেন। যার ফলে তারা এই ভেজাল দ্রব্য এনে এখানে স্টক করে রাখে। ফলে মিলের মালিক ও মশল্লা বিক্রেতা দুইজনই অপরাধী।


এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, যে কোন খাদ্যের সাথে অন্য যে কোন খাদ্য মিশ্রন দূষনীয়। এর ফলে দুই ধরনের মশল্লার সংমিশ্রনে সে মশল্লাার গুনাগুনের বিকৃতি ঘটে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, এর সাথে সাথে যদি ক্যামিকেল দিয়ে তৈরী এ সব রং মানুষের পেটে যায় তখন বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গ্যাষ্টএন্টেরাইটেজ এর প্রার্দুভাব দেখা দেয়। এতে মানুষের গ্যাস্টিক ও আন্ত্রীক রোগের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়াও এই মশল্লার সাথে কেমিকেল রং পেটে সোধন হওয়া পর পর এটি লিবার ও কিডনীকে নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। তিনি জানান, এর দ্বারা অনেক সময় আমাদের কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্ত্রও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভ্রাম্যমান আদালতে আরো উপস্থিত ছিলেন এস আই রাব্বি, এ এস আই এনামুল ও স্থানীয় বেশ কিছু ব্যবসায়ী।
এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের পরিচালক শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বিশ্বজিত পাল আরো জানান, পর্যায়ক্রমে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবকটি মশল্লার মিলেই তারা অভিযান করবেন এবং ভেজাল ধরা পড়লেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com