শ্রীমঙ্গলে মানবজমিনের রজজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মিলন মেলা
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ মতিউর রহমান চৌধুরী। একটি নাম নয়। এদেশের সাংবাদিকতা অঙ্গনের দ্বিকপাল। মহিরুহ। তাঁর কার্যক্রম দেশ ও জাতিকে একটি দিকনির্দেশনা দেয়। যে দিক নির্দেশনা দেশ ও দেশের মানুষকে বিপথগামী থেকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করে।
এবং সুপথে চলতে পথ দেখায়। তাঁর প্রতিটি লেখা যেভাবে মানুষকে উৎসাহিত করে সে উৎসাহ থেকে মানুষ সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্ঠা করে। এবং তাঁর সম্পাদনায় এই পত্রিকা থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখে সমাজের কাজে লাগায়।
আমরা রাজনীতিবিদ যারা আছি,জনপ্রতিনিধি যারা আছি, আমরা প্রতিনিয়িত টিভিতে খবর দেখি। যখন আমরা ভাবি সংবাদটি মনে হয় পুরোপুরি হয়নি; তখনই আমরা খুঁজি পত্রিকা। যাওয়ার পথেই প্রথমেই আমরা মানবজমিনকে টাচ করি। কারণ মানবজমিনের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন হয়। আজকের এই রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সমাজের অনেক আলোকিত মানুষ তথ্যবহুল বক্তব্য রেখেছেন-সকলের বক্তব্য থেকে যেটি ধারণ করেছি।
সেটি হলো- মতিউর রহমান চৌধুরী’র যে কর্মজীবন সেই জীবনটি হল বৃহত্তর সিলেটবাসীর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা সেই গর্বিত ও আলোকিত মানুষটির দীর্ঘায়ু ও উত্তরত্তোর সমৃদ্ধি কামনা করি। সে জন্যই দৈনিক মানব জমিন সিলেট বিভাগের মানুষের কাছে এতোটা প্রিয় ও সকল মহলে সমাদৃত।
মানবজমিন সম্পর্কে বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীমঙ্গল শহরের গ্রান্ডতাজ চায়নিজ রেষ্টেুরেন্টে আয়োজিত রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রীমঙ্গলের উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
মানবজমিনের পঁচিশবছর পূর্তি নানা চ্যালেঞ্জের ছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন-এই সিলেট বিভাগে অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছিলেন। অনেকেরই জন্ম হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে কিছু দিয়ে গেছেন। আমরা তাদেরকে কখনোই ভুলবো না। প্রতিথযশা এসব ব্যক্তিত্বদের আমরা সিলেটবাসী সারাজীবন স্মরণ রাখবো।
তিনি যে মতেরই হোক,যে দলেরই হোক,যে রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত হোক। সবাইকে আমরা ধারণ করেই আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। তথা আমাদের সিলেটকে, শ্রীমঙ্গলকে আমরা বুকে ধারণ করবো। এটাই হোক আজকের এই দিনে আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রীর পুরুষ্কারপ্রাপ্ত শ্রীমঙ্গল শহরের চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার বলেন, মানবজমিনের সম্পাদক যিনি মতিউর রহমান চৌধুরী তিনি একসময় ইত্তেফাকের নিউক্লিয়াস ছিলেন। ইত্তেফাকে কাজ করেছেন। তিনি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সন্তান।
পত্রিকার জগতে যে কয়জন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া’র পরবর্তী সময়ে এক কাজগুলাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম উদারণ মতিউর রহমান চৌধুরী। আমরা বিশ্বাস করি মানবজমিন তার লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সকল চেতনাকে ধারণ করেই বাংলাদেশের সম্মৃদ্ধির যাত্রা পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এবং ভবিষ্যতের যাত্রা পথে মানবজমিন সকল কাজে এদেশকে পথ দেখাবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
এটিএন নিউজ, এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন- ৭২ সালে যখন আমি মেট্রিকপাশ করি তখন তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। আমার বাবা মরহুম আমজাদ আলীর সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। বাবা করতেন আয়ামীলীগ। তিনি করতেন ছাত্রলীগ। আজকে মানবজমিন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। মানবজমিন ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। আজকের এ দিনে তাঁর জন্য ও তার পরিবারের জন্য দেয়া করবো তিনি যেন দীর্ঘদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেন।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার এস এম উমেদ আলী বলেন-মতিউর রহমান চৌধুরী একজন সাহসী সাংবাদিক। এটা নি:সন্দেহে বলা যায়। অনেকবার তিনি সত্যঅন্বেষণ ও প্রকাশ করতে গিয়ে করাবরণ করেছেন। আর তিনি সাংবাদিক থেকে পত্রিকার সম্পাদক হয়েছেন। এখনও তিনি সম্পাদক না সাংবাদিকতা করেন। এবং বেশ কিছু আলোচিত রিপোর্ট তিনি করেছেন।
সম্প্রতি তিনি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মারা যাওয়ার বিষয় নিয়ে। তাঁর এনআইডি পরিবর্তন সেই অনুসন্ধানী রিপোর্টটি তিনিই করেছেন। যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। মতি ভাইর মতো সাংবাদিক দেশ ও রাস্ট্রের জন্য আজ বেশী প্রয়োজন।
শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক তদন্ত আমিনুল ইসলাম বলেন- দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আজকে মানবজমিন পত্রিকার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান পালন করছি। সেজন্য এই পত্রিকার সম্পাদক ও সংশ্লিস্ট সকলের মিডিয়া বা গনমাধ্যকে বলা হয় রাস্ট্রের থার্ড আই বা তৃত্বীয় চোখ বা সমাজের দর্পন। মিডিয়া যতটা
শক্তিশালী হয়। দেশ ততো সমৃদ্ধশালী হয়। এবং দেশকে এগিয়ে যায়। আমরা বিশ্বাস করি,সেই বরাবরেরমতো মানবজমিন পত্রিকা আমাদের দেশের ইতিহাস এতিহ্য,রাজনীতি,সংস্কৃতি বিশেষ করে আমাদের শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পকে দেশ ও বর্হিবিশে^ তুলে ধরবে। এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করবে। পাশাপাশি যেকোন অনিয়ম এবং দুর্নীতির সংবাদ সর্বাগ্রে প্রকাশের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে পাশে থাকবে। এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
তাজপুর সরকারী ডিগ্রীকলেজের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর এস এ মোতাক্কব্বির মাসুদ বলেন- একটি পত্রিকা যেমন একটা সমাজ বদলে দিতে পারে তেমনি একটি রাষ্ট্রকেও বদলে দিতে পারে। আমাদের অনেক নেতিবাচক ধ্যান-ধারণাটাও বদলে দিতে পারে। কিন্তু মতিউর রহমান চৌধুরী’র পত্রিকা মানবজমিনের মানব শব্দটা যখন আমরা উচ্চারণ করি তখন ভেতর থেকে আসে।
জমিন শব্দটা কিন্তু ফরাসী। জমিন এর অনেক বড় ব্যাখা। এ জমিন কতটা বুকে নিয়ে রাখে আমাদেরকে। সেটা মতিউর রহমান চৌধুরীর ক্ষেত্রে সত্য। তিনি অনেকবার বিশ^কাপ কভার করেছেন। তাঁকে আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানে আমরা রাতে চ্যানেল আইতে দেখি।
তিনি সত্য কথা বলেন। ইনি আমাদের প্রেরণার আধাঁর। ইনি অনুসন্ধিৎসু। ইনি শুধু পত্রিকা রিভিউ করেন না। তিনি মানুষ রিভিউ করেন। তিনি সমাজ রিভিউ করেন। ইনি প্রতিষ্ঠান রিভিউ করেন। ইনি রাষ্ট্র রিভিউ করে সারমর্মটা তাঁর লেখনিতে প্রকাশ করেন। এর জন্য মানুষ মানব আর জমিন। একথাগুলা তার পত্রিকার নামের ভেতরেই আছে।
এই মানবজমিন যখন পড়ি দেখি এটি প্রান্তিক জনগোষ্টির পত্রিকা। মানবজমিন কিন্ত জনমানুষের জনকল্যাণের এবং প্রান্তিক জনগোষ্টির পত্রিকা। আমরা যখন বাসে উঠি,ট্রেণে উঠি তখন চকচকা লালরঙের বড় বড় চমৎকার হেডলাইনের পত্রিকাটা দেখলেই খুশি লাগে।
মতিউর রহমান ক্লিক করেছেন ইয়াং জেনেরেশানকে। তিনি তাদের অনেকটা কাছে নিয়ে এসেছেন। লেখেন কম কিন্তু এটার ব্যাপকতটা বেশি। একটা পত্রিকা তৈরী করতে এক রাতে করা যায় কিন্তু একজন মতিউর রহমান চৌধুরী তৈরী করতে হলে একশ বছরেও সম্ভবপর হবে না। কেউ মানুক বা না মানুক।’
এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মিসেস হেলেনা চৌধুরী,শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী লিটন আহমেদ,শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার, সাপ্তাহিক পাতাকুঁড়িরদেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এস এম উমেদ আলী, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের স্টাফ রিপোর্টার ও টেলিভিশন জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক ও এখন টেলিভিশনের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি এম এ হামিদ।
ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মুহিব, দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মু.ইমাদ উদ্দিন, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো.তাজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুত সমিতির সভাপতি মো.আব্দুর রহিম, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি এএসএম ইয়াহিয়া,সহ সভাপতি শামীম আহমেদ,দেবাশীষ ধর পার্থ,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন,উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি নোমান আহমেদ সিদ্দিকি, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল মাহমুদ, কালের কন্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম, খোলা কাগজ ও মোহনা টেলিভিশনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি আতাউর রহমান কাজল, ইত্তেফাকের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি অনুজ কান্তি দাশ, ইনকিলাবের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি আনোয়া হোসেন জসিম, দিনকালের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি রুবেল আহমেদসহ আরো অনেকে।
পরে অতিথিরা মানবজমিন এর সমৃদ্ধি কামনা করে আমন্ত্রিত অতিথিরা পঁচিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে ৬ পাউন্ডের কেক কাটেন। এসময় শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রিত সকল অতিথিবৃন্দকে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন-দৈনিক মানবজমিনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি ও এম ইদ্রিস আলী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-সিলেটের ডাক পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি ও শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি আ ফ ম আব্দুল হাই ডন, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ কলামিষ্ট এহসান বিন মুজাহির, দৈনিক সংগ্রামের প্রতিনিধি মাওলানা আব্দুর রব, সিলেট মিররের প্রতিনিধি কাজী গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ পোষ্ট ইরেজী দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি কাওসার আহমদ, একাত্তরের কথার প্রতিনিধি জামাল হোসেন, সংবাদ সারাবেলার জেলা প্রতিনিধি আব্দুল কাইয়ুমসহ স্থানীয় বিভিন্ন গনমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।
এছাড়াও রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ি, সমাজকর্মীসহ সকল শ্রেণীপেশার আলোকিত মানুষজন অংশ নেন।
মন্তব্য করুন