(ভিডিওসহ) শ্রীমঙ্গলে রঘুনাথপুর কালীবাড়িতে দেবী দুর্গার কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত

October 3, 2022,

বিকুল চক্রবর্তী॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রঘুনাথপুর কালীবাড়িতে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেবী দুর্গার কুমারি রুপের পূজা।

সোমবার ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ১২পর্যন্ত এক ঘণ্টাব্যাপী পূজায়  মৌলভীবাজার জেলা সহ সিলেট বিভাগের  হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম হয় রঘুনাথপুর কালী মন্দিরে।

এবার কুমারী মাতার আসনে বসেছিলেন শ্রীমঙ্গল আশিদ্রোন  ইউনিয়নের জামসী গ্রামের নুপুর  চক্রবর্তীর মেয়ে নন্দিনী চক্রবর্তী অর্পা। নন্দিনী শ্রীমঙ্গল জামসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

এবারের   কুমারী মাতা পূজিত হন  দেবী দুর্গার রুদ্রাণী রূপে। পূজায় পুরোহিত্য  করেন অসিত ভট্টাচার্য ও কমলাপদ চক্রবর্তী।

পুরহিত অসিত ভট্টাচার্য জনান, শাস্ত্রমতে মুনি ঋষিরা কুমারী মেয়েকে প্রকৃতির সমান মনে করতেন এবং প্রকৃতি থেকেই আমাদের জীবজগতের সৃষ্ঠি। সনাতন ধর্মে প্রকৃতি পূজার প্রচলণ রয়েছে। তাই বিশ্বব্রহ্মা-ের অধিকারিণী দেবী দূর্গাকে কুমারী রূপে পূজা করা হয়।  তাই কুমারী পুজোর মাধ্যমে প্রকৃতিকে পূজা করতেন তারা। কারণ, তারা মনে করতেন মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বর।

কমলাপদ চক্রবর্তী জানান, কুমারী পূজার মুল র্প্রতিপাদ্য হলো নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। এই বিশ্বব্রহ্মা- যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। তিনি জানান, শাস্ত্রমতে কুমারী পূজা প্রথম শুরু হয় বানাসুর নামে এক অসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। মিত রয়েছে, বানাসুর নামে ওই দুরাচারী অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করলে বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পরজন্মে কুমারীরূপে অর্বিভুত হন এবং বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ এলাকার পুরিহিত শ্রী বিকাশ চক্রবর্তী জানান, এক থেকে ষোরশ বর্স পর্যন্ত যে কোনো কুমারী মেয়েকে দেবী মায়ের আসনে স্থান দিয়ে কুমারী পূজা করা হয়। তবে বয়স অনুসারে দেবীর নাম হয় ভিন্ন। যেমন কুমারীর আসনে এক বছরের কন্যা বসলে তিনি দেবীর  সন্ধ্যা নামে পূজিত হন। দুই বছরে কন্য  পূজিত হন দেবীর সরস্বতী রূপে এভাবে তিন বছরে কন্যা  ত্রিধামূর্তি, চার বছরে   কালীকা, পাঁচ বছরে, সুভগা,  ছয় বছরে  উমা, সাত বছরের মালিনী, আট বছরে  কুব্জিকা, নয় বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রূদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালক্ষ¥ী, চৌদ্দ বছরে পীঠনাযি়কা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরে দেবীর অন্নদা বা অম্বিকা রূপে কুমারী মাতা পুজিত হন।

রঘুনাথপুর কালিবাড়িতে এবছর কুমারী মাতা দেবীর রুদ্রণী রুপে পুজিত হয়েছেন। তিনি জনান, দেবীর একেক রুপের গুণও রয়েছে।তবে সকল গুনেই জগতের অসুরাবৃত্তি দুর করার শিক্ষা রয়েছে।

আয়োজক কমিটির সভাপতি সুনীল  বৈদ্য শচী জানান, রঘুনাথপুর কালীবাড়িতে এবছর ১৫ তম কুমারী পূজার আয়োজন।  প্রতিবছরের ন্যায়  এবছর শান্তিপূর্ণভাবে কুমারী  পূজা সম্পন্ন হয়েছে।

পূজা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত ধর্মীয় আলোচনা সভা। অধ্যক্ষ নিখিল ভট্টাচারে‌্যর সভাপতিত্বে  সভায় বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, শ্রীমঙ্গল পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাক্তার হরিপদ রায়,সাধারণ সম্পাদক শ্রীপদ দেব, হিন্দু বোদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক সমিরণ সরকার ও শিক্ষিক জহর তরফদার।

শ্রীমঙ্গল পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা. হরিপদ রায় বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবছর ১৬৭টি পূজামন্ডপে প্রতিমা পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে অষ্ঠমী তিথিতে রঘুনাথপুর কালী বাড়িতে কুমারী পূজায় সর্বাধিক লোক সমাগম হয়। ওই দিনের জন্য নেয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। যা এবছরও ছিলো এবং শান্তিপূর্ণভাবে হাজার হাজার ভক্তসমাগমের মধ্যদিয়ে কুমারী পূজা সম্পন্ন হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com