‘শ্রীমঙ্গলে সাতপীরের মাজার নিয়ে ফের উত্তেজনা’ মাজারের খাদেমের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন
সাইফুল ইসলাম॥ শ্রীমঙ্গলে সাতপীরের মাজার নিয়ে ফের উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাজার বিরোধীরা মাজার উচ্ছেদ না করতে পারায় ভক্তবৃন্দ ও খাদেমকে নানানভাবে হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার ১৯ মার্চ মাজারের ভক্তবৃন্দের পক্ষে লইয়ারকুল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বীর মুক্তি যোদ্ধা নুরুজ মিয়া,লাহার পুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির সানু মিয়া,সিক্কা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ও ফুলবারী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতলিব মিয়া মাজারের খাদেমের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের কাছে একটি আবেদন করেছেন।
ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ‘মাজার বিরোধীরা ১৭ মার্চ রাত ৯টারদিকে গ্রামের মকবুল মিয়া,ছুরুক মিয়া,আব্দুস সালাম রাজা মেম্বার,জয়নাল আবেদীন,সাইফুল ইসলাম,আবুল,মিজান মিয়া,ইয়াছিন মিয়া,লিটন মিয়া,ইমারুন ও জেসমিন বেগম মিলে পূর্ব শ্রীমঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা ছুরুক মিয়ার বাড়ীতে বিয়ের পঞ্চায়েতের দাওয়াত দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষদেরকে একত্রিত করে। ওই বৈঠকে মাজারের খাদেম মোতাহির আলী ও ভক্ত আলতাফুর রহমানকে নানাভাবে হয়রানীর জন্য মানুষদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়’।
এদিকে ১২ ফেব্রুয়ারী থেকে মাজার বিরোধী একটি পক্ষ ও মাজারের ভক্তবৃন্দদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর পর সাতপীরের মাজার ধ্বংসের পায়ঁতারায় লিপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকার প্রভাবশালী একটি স্বার্থান্বেষী মহল। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে মাজারের ভক্তবৃন্দের পক্ষে করা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির সানু মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন।
অপরদিকে এলাকার একটি পক্ষ এর পাল্টা হিসেবে এলাকায় মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে পূর্ব শ্রীমঙ্গল গ্রামে গোবর গাতার গর্তে গড়ে তোলা কথিত সাতপীরের মাজার উচ্ছেদের দাবী তুলেছেন। এ নিয়ে মাজারের ভক্তবৃন্দ ও মাজার বিরোধীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষই লিখিত আবেদনের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা প্রসাশনের কাছে দ্বারস্থ হয়েছে। এক পক্ষ চাইছে মাজার রক্ষা করতে অপর পক্ষ চাইছে সেখান থেকে ভূয়া,বানোয়াট মাজার উচ্ছেদ করতে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মাজার নিয়ে যে কোনো মূহুর্তে বিবদমান দু’পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমন অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পুলিশ এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে শিগগিরই বৈঠকে বসার আহবান জানিয়েছে। তবে ওই বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব শ্রীমঙ্গল গ্রামে কথিত‘নুরে দরবারিয়া সাতপীরের মাজার শরীফ’২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে এ দরবার শরীফের খাদেম মোতাহির আলী হজ্ব পালনকালে স্বপ্নযোগে এ মাজারের প্রাপ্ত হন। এর পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভক্তবৃন্দরা মাজারে আসতে শুরু করেন।
ভক্তরা জানিয়েছেন,এ মাজারের ভক্তবৃন্দ দেশ ছাড়িয়ে প্রবাসেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মাজারে ভক্তবৃন্দের ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাজারের খাদেম ভক্তবৃন্দের সাথে সাক্ষাত দেন। এ মাজারের বৈশিষ্ট্য হল ভক্তবৃন্দরা কুরআন তেলাওয়াত,দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় ও তসবীহ পাঠ এবং দোয়া। এর বাইরে ভিন্নধর্মালম্বী ভক্তরাও এ মাজারে নিয়মিত আসেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহকারি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির সানু মিয়া বলেন,আমরা ওলি আউলিয়ার প্রতি বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীল। এই মাজারে এসে আমরা উপকার পাই। আমাদের জানা মতে মাজার ঘিরে কোনো অসামাজিক কার্যকলাপ হয়না। একটি মহল তাদের ব্যক্তিস্বার্থহাসিলের জন্য মাজার উচ্ছেদে উঠে পড়ে লেগেছে। মাজারের ভক্তবৃন্দকে আসাযাওয়ার পথে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এমনকি মাজারের খাদেম মোতাহির আলীকে জীবন নাশের হুমকি প্রদান করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে খাদেও ভক্তদেও নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছি।
এ পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন,‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন বিঘœ না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে পুলিশকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলে দিয়েছি’।
মন্তব্য করুন