শ্রীমঙ্গল ডে কেয়ার সেন্টার যেন রাক্ষুসের নিয়ন্ত্রণে
সাইফুল ইসলাম॥ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে শ্রমজীবি মায়েদের সন্তানদের দিবাকালীন সেবা প্রদানের জন্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ডে-কেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তারা নানা অনিয়ম ও কারসাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
আর এসব শ্রমজীবি মায়েদের রেখে যাওয়া শিশুর বরাদ্দকৃত খাবার সামগ্রী লুটিয়ে খাচ্ছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ডে কেয়ার সেন্টারটি যেন রাক্ষুসের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।
রবিবার সোমবার দুইদিনব্যাপী এক অনুসন্ধানে ডে কেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তা ইশরাত ফাতেমার নানা অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠে।
১৯ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্রীমঙ্গল ডে কেয়ার অফিসে প্রবেশ করতে না করতেই সবাই আচমকা ভাব। যেন কি করবে কি না। প্রথমে দেখা গেল সহকারী ডে কেয়ার সেন্টারের সহকারী শিক্ষিকা শিউলী আক্তার আর দারোয়ান তফাজ্জল হোসেন আর আয়া আছিয়া বেগম পাশের রুমে দাড়িয়ে আছেন।
পাচক হারুন মিয়া ২৫ জন শিশুর জন্য মাত্র দেড় কেজি মুরগীর মাংসের সাথে অল্প কিছু আলুর মাঝে বেশি জুল দিয়ে রান্না করছেন। কিন্তু তার আগে খোঁজ পাওয়া যায়নি ডে কেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তা ইশরাত ফাতেমা। ডে কেয়ার সেন্টারের সহকারী শিক্ষিকা শিউলী জানতে চাইলেন আমার পরিচয়। আমি পরিচয় গোপন রেখে পাশ্ববর্তী এলাকার একজন বাসিন্দা বলে পরিচয় দেই। জানতে চাই অফিসের প্রধান কর্মকর্তা কোথায়। শিউলী আক্তার জানালেন,ম্যাডাম তো আসে নাই । আসলেও তিনি বেশিক্ষণ অফিসে থাকেন না। এখন হয়তো কোথায় ঘুরতে গেছেন। যদি আপনার প্রয়োজন হয় তাহলে ফোন করতে পারি।
ফোন গেল কর্মকর্তা ইশরাত ফাতেমার কাছে। তিনি ফোন পেয়ে তাড়াহুড়া করে ছুটে আসলেন অফিসে। অফিসের চেয়ারে বসলেন, আমার পরিচয় জানলেন। তার পর বললাম যে রেজিস্টার খাতায় আজ কয়জন শিশুর নাম তালিকায় রয়েছে, সেটা দেখাতে। তিনি ক্ষেপে উঠে বললেন, আমাদের সরকারী নীতিমালায় আছে অফিসের কতৃপর্ক্ষ ছাড়া কেউ দেখতে পারবে না। এমনকি ইউএনও, ডিসি, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বললেও আপনাকে রেজিস্টার খাতা দেখাতে পারবো না। একমাত্র আমাদের ডিজি স্যার বলেন তাহলে দেখাতে পারি। তিনি জানালেন, তাদের হিসাবমতো শনিবার ২৩ জন শিশুর জন্য কেজি র্ফামের মুরগী পরিমাণ মতো আলু দিয়ে রান্না হয়েছে। তার সাথে ডালও আছে। তবে রেজিষ্টার খাতায় কয়জনের নামের তালিকা করা হয়েছে সেটা বলতে তিনি নারাজ। মাসিক বা বাৎসরিক বরাদ্ধের বিয়য়টি জানতে চাইলেও এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে,রবিবার ২৩জন শিশু ছিল আর রেজিষ্টার খাতায় ৩০জনের তালিকা রয়েছে। রবিবার ২২জন শিশুর উপস্থিতি রয়েছে।
বাস্তবে যদি শিশু উপস্থিতি থাকে ২৩ জন, কাগজে কলমে রেজিস্টার খাতায় ৬০ জন শিশুরের তালিকা রয়েছে। এভাবে চলছে হরিলুট। সারা বাংলাদেশে ৪৪টি জেলা শহরে ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। তার মধ্যে চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে একটি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উদ্যোগে শ্রমজীবী মায়ের সন্তানদের দিবাকালীন সেবা প্রদানের জন্য ৬মাস থেকে ৬ বছর শিশুদের এই সেন্টারে রাখা হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবনের নিচতলায় শ্রীমঙ্গল ডে কেয়ার সেন্টার দীর্ঘ ৪বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই ভবনে ৬টি রুমে রয়েছে। তার মধ্যে ১টি রুমে প্রধান কর্মকর্তার অফিস। একটি রান্না ঘর, ২টি বিছনাসহ আসবাবপত্র, বাকি ২টি রুমে খেলাধূলার রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত একটি রুমে ৮/৯জন শিশু থাকতে পারবে।
কতৃপর্ক্ষ বলছে ৮০ জন শিশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। একজন শিশুর ভর্তি ফ্রি নেওয়া হয় ১০০টাকা। মাসিক হারে আরো ১০০ টাকা দিতে হয়। বাচ্চাদের সকালের নাস্তা সেমাই রুটি, দুধ, ডিম দেওয়ার রুটিন থাকলেও বাস্তবে তা দেয়া হয় না। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, প্রাক স্কুল শিক্ষাসহ কোনটাই হচ্ছে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুরা খেলাধুলা করছে। বিছনাসহ আসবাবপত্র ময়লার ভর্তি।
এ বিষয়ে জানতে মৌলভীবাজার জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহেদা খাঁনম (০১৯১১৭৪৮৯৭০) যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেনি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো.তোফায়েল ইসলাম ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আজই খোঁজ নিয়ে দেখছি।
মন্তব্য করুন