শ্রীমঙ্গল নিজ ভুমি থেকে এক আদিবাসী সাঁওতাল পরিবারকে উচ্ছেদ ॥ ৩ সাঁওতাল সদস্য আহত
বিকুল চক্রবর্তী॥ শ্রীমঙ্গল রাধানগর এলাকার এক সাঁওতাল পরিবারকে তার বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে জোর পূর্বক উচ্ছেদ করেছে একটি ভুমি দখল চক্র। এ সময় দখলদারদের লাঠিসোঠার আঘাতে আহত হয়েছেন সাঁওতাল পরিবারের তিন মহিলা সদস্য। আহতরা হলেন নিয়তি সাঁওতাল (৪০), সুমি সাঁওতাল (১৬) ও বেলা সাঁওতাল (১৪)।
২৫ অক্টোবর বুধবার রাত ৮টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবে এসে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা রাধানগরের বাসিন্দা রতিশ সাঁওতাল। এ সময় আহতবস্থায় তার স্ত্রী নিয়তি সাঁওতাল, মেয়ে সুমি সাঁওতাল ও বেলা সাঁওতাল উপস্থিত থেকে তাদের উপর আক্রমনের বর্ণনা দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে রতিশ সাঁওতাল বলেন, দাদার আমল থেকে বংশানুক্রমিক ভাবে তারা এই ভুমিতে বসবাস করে আসছেন। জমিটির মালিক মতিলাল গুলগুলিয়ার পূর্বপুরুষ তাদের এই জমিতে বসান। স্বাধীনতার সময় মতিলাল গুলগুলিয়ার পরিবার ভারতে চলে গেলে এই জমিটি চলে যায় সরকারের খাস খতিয়ানে। তিনি জানান, খাস খতিয়ানে যাওয়ার পর প্রথম দুই বছর তিনি খাজনাও দিয়েছেন। পরবর্তীতে সরকার খাজনা না নেয়ায় তিনি তা দিতে পারেননি।
কিন্তু পারিবারিক ভাবে তারা সে জায়গায় বসবাস করে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা আসেনি। হঠাৎ করে বুধবার বিকেলে রাধানগর গ্রামের মতিন মিয়া, শুকুর মিয়া, শহীদ মিয়া গংরা তাদের ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী সন্তানের উপর আক্রমন করে। এ সময় জোর করে ঘর থেকে বের করে তারা ঘরের দখল নেয়। আহতদের স্থানীয় বাসিন্দারা শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তাদেরকে শ্রীমঙ্গল থানায় প্রেরণ করা হলে শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল ইসলাম তাৎক্ষনিকভাবে এস আই রাব্বি, এস আই জাকারিয়া, এস আই মনিরসহ একদল পুলিশকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন এবং দখলদাদের সেখান থেকে সরিয়ে আনেন।
এ ব্যাপারে এস আই রাব্বি জানান, রতিশ সাঁওতালের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দখলদারদের বের করে দিয়েছেন।
তবে দখলদারদের বের করার সময় দখলদাররা তাদের একটি দলিল আছে বলে তাদের জানালে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় জানান, সাঁওতাল পরিবারের উচ্ছেদের খবর পেয়ে রাধানগর গ্রামবাসী দখলদারদের উপর ক্ষুব্দ হয়ে পড়েন। তারা স্ব উগ্যোগে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে ওই বাড়ি ঘেরাও করেন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। একই সময় তিনিও ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ, এলাকাবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যান দখলদারদের সাঁওতালদের ঘর থেকে বের করে দেন।
বর্তমানে ঘরটি খালি রয়েছে। আর বিতাড়িত সাঁওতাল পরিবারটি ওই এলাকায় তার প্রতিবেশির বাড়িতে রয়েছেন।
মন্তব্য করুন