শ্রীমঙ্গল ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ কোচিং বাণিজ্য

July 30, 2016,

সাইফুল ইসলাম॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যাঙের ছাতার মতো আবারো অবৈধ কোচিং বাণিজ্য চলছে।
পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গজিয়ে ওঠা অবৈধ কোচিং সেন্টারের সংখ্যা এখন প্রায় শতাধিক। শিক্ষাক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণ বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে এসব কোচিং সেন্টারগুলো। অনেক ক্ষেত্রেই মানহীন শিক্ষকরা সেখানে পাঠদান করছেন।
কোচিং বাণিজ্য কার্যত নিষিদ্ধ হলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে ব্যবসার জন্য নিবন্ধন গ্রহণ করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিঁয়ে ওঠেছে অনেকগুলো কোচিং সেন্টার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষেত্রবিশেষ মানহীন শিক্ষা দেয়া হয় শিক্ষার্থীদেরকে।
পৌর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও নিজেদের তত্ত্বাবধানে বাসাবাড়িতে সাইনবোর্ডবিহীন কোচিং ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছেন।
এসব কোচিং সেন্টার নিয়ে অনেক অভিযোগও ওঠেছে বিভিন্ন সময়। তন্মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও মোটা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতা করা।
মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত পক্ষে ৫০০টি একাডেমিক কোচিং সেন্টার রয়েছে।
যেগুলোর বেশীরভাগই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক দ্বারা। এগুলোর মধ্যে প্রত্যয়, প্রয়াস, অপশন, টেকনিক, স্টুডেন্ট, নিউক্লিয়াস, ইউনিক, মাদার, সিটি, ক্রিয়েটিভ, ষ্টার, অরবিট, এবি, কনসেপ্ট, প্রতিভা, ফিউচার কেয়ার, সৃজন, এডুইএড, ষ্টাডি কোচিং হোম, সাকসেস, ই-টাইম, সিডিএ, কনটেষ্ট, ক্যালকুলাস প্রভৃতি অন্যতম। এসব কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থী টানার জন্য স্থানীয় কথিত পত্রিকায়  চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে।
এদিকে ,এসব কোচিংগুলোর ফি নির্ধারণে মানা হচ্ছে না কোনও নীতিমালা। কোচিং সেন্টারগুলোতে ভর্তির সময় একবার টাকা নেওয়া হচ্ছে।
পরবর্তীতে প্রতিমাসে প্রাথমিক পর্যায়ে ৬০০-৮০০ টাকা, নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয় প্রতি ৮০০-১০০০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয় প্রতি ৮০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পর ওই বছরের ২৫ জুন নীতিমালায় একটি সংশোধনী আনা হয়। এতে সব বিষয়ের জন্য স্কুলভিত্তিক কোচিং ফি সর্বোচ্চ এক হাজার ২শ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
নীতিমালায় বলা আছে, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের দিনে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন।
বাস্তবে এ নীতিমালা,মৌলভীবাজারের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকই মানছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন,মাধ্যমিক স্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ঠিকমতো পাঠদান না দেয়ার কারণে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে। তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে শিক্ষার্থীরা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন,এধরণের কোন নির্দেশনা আসেনি আমাদের কাছে। কেউ স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট কোচিং করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপ বর্ধন বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা যদি প্রাইভেট পড়াইতে হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্টানে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ১০জন শিক্ষার্থী পড়াতে পারবে। তিনি বলেন, এখন বেশি ভাগই প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের পাড়া মহল্লায় কোচিং সেন্টার রয়েছে। তবে এসব কোচিং ব্যবসা বন্ধের জন্য সরকার যদি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার নীতিমালা তৈরি করতো তাহলে এসব কোচিং সেন্টার খুব সহজেই বন্ধ করা যেত।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com