শ্রীমঙ্গল মির্জাপুর চা বাগানে ম্যানেজমেন্টের উপর শ্রমিক হামলা, মালিক পক্ষ বাগান বন্ধের ঘোষনা
বিকুল চক্রবর্তী॥ শ্রীমঙ্গল মীর্জাপুর চা বাগানে ম্যানেজার ও অফিসে হামলা করেছে কিছু উত্তেজিত চা শ্রমিক। এতে ব্যবস্থাপক, ডেপুটি ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন গার্ড আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে চা বাগানকে বন্ধ ঘোষনা করেছেন মালিক পক্ষ।
মির্জাপুর চা বাগানের ব্যাবস্থাপক সাইদুজ্জান জানান, মির্জাপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতা দেশান্ত কানুর ভাই একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন। তার ভাইয়ের কাজটি বদলি কাউকে দেয়ার জন্য দেশান্তকানু তাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে এ কাজ বদলি দেয়া যাবে না জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। একই সাথে তিনি বাগানের প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তুলেন। তিনি বলেন, আগে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মাসে কাটা হতো। এখন বিভিন্ন বাগানে সাপ্তাহে কাটা হচ্ছে। এই হিসেবে তাদের বাগানেও তা সাপ্তাহে কাটা শুরু করেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ শ্রমিক তা দিয়েও দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাপ্তাহে বা মাসে এখানে শ্রমিকদের কোন লোকসান নেই। বরং তাদের জন্য এটি ভালো। তিনি বলেন, এই বিষয়টিকে সামনে এনে সাধারণ শ্রমিকদের বিব্রান্ত করে দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি চা বাগানকে অশান্ত করার পায়তারা করা হয়। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কিছু শ্রমিক নিয়ে তাদরে গাড়ি ও অফিসে হামলা করা হয়। এতে তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন ডেপুটি ম্যানেজার জুলকার নাঈম,সহকারী ম্যানেজার আব্দুল খালেক ও আরো দুইজন গার্ড।
এ বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ও মালিক পক্ষকে অবগত করা হলে। মালিক পক্ষ তাদের আক্রমনের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বৃহস্পতিবার বিকেল বাগান বন্ধ ঘোষনা করেন মালিক পক্ষ। এ প্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালে বাগানে কোন কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা আমাদের সন্তানের মতো। আমরা তাদেও শোকে দু:খে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের দ্বারা আমরা আক্রান্ত হবো এটা ভাবতেও পারিনি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বিজয় হাজরা জানান, ছোট কাঠো বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের সাথে ম্যানেজম্যান্টের একটি ঝামেলায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের ১৩ ধারায় মালিক পক্ষ বাগান লে- আউট করেছেন। তিনি বলেন, একটি কাজের বদলী ও আরো কিছু ছোট বিষয় নিয়ে এ ঝামেলা হয়। বাগান ম্যানেজমেন্ট শ্রমিকদের আটকে রাখে। এ সময় কিছু অনাকাংকিত ঘটনা ঘটে। তবে এই বিষয়টি সমাধানের জন্য শ্রম অধিদপ্তর ও মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ হয়েছে কাছাকাছি সময়ে এর একটি সমাধান আসবে।
এ ব্যাপারে চা শ্রমিক ইউনিয়নের অপর নেতা পরেশ কালিন্দি বলেন, শ্রমিক, ম্যানেজমেন্ট ও বাগান মালিক প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য বাগানের উন্নয়ন অভ্যাহত রাখা। এরা প্রত্যেকেই এক পরিবারভুক্ত। চা বাগানের কোন ক্ষতি হলে এটা বাগানের যেমন ক্ষতি, তেমনি শ্রমিকদেরও। একটি ঘটনা ঘটেছে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা।
এ ব্যপারে দেশান্ত কানুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভুষন রায় জানান, ঘটনার খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে এবং চা বাগানে তাদের কড়া নজরদারী রয়েছে।
মন্তব্য করুন