সংবাদপত্র আসেনা : দূশ্চিন্তায় এজেন্ট ও হকার
আলী হোসেন রাজন ॥ দেশ ও বিশ্বের সব খবরা খবর জানার জন্য দৈনন্দিন জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন সকাল বেলা অনেকে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চায়ের সাথে সংবাদ পাঠ করেন, আবার অনেকে অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই হাতে নেন খবরের কাগজ, সংবাদ পাঠ করতে না পারলেই যেন জানা হলো না কোন কিছু। আর এই খবরের কাগজ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার আগে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন হকাররা। কেউ তাদের পেপারওয়ালা, কেউ হকার বলে ডাকে। তারা এজেন্ট থেকে সংবাদপত্র সংগ্রহ করে মৌলভীবাজার শহরের গুরহুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দোকান সাজিয়ে সংবাদপত্র বিক্রি করেন।
মৌলভীবাজার শহরে সংবাদপত্রের হকার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন। রাত শেষে যখন ভোর হয়, আজানের মধুর ধ্বনি শুনাযায় মসজিদ থেকে, পৃথিবীর আকাশে দিড়ে দিড়ে উদয় হয় লাল সূর্য্য ঠিক তখনই সংবাদপত্রের গাড়ির অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় হকারদের। কোন কারণে গাড়ি আসতে দেরি হলে তাদের অস্থিরতার সীমা থাকে না।
ঢাকা থেকে ছুটে আসা সংবাদপত্রের গাড়ি মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনায় দাঁড়িয়ে রেখে যায় সংবাদপত্র। শুরু হয় হকারদের হৈ-চৈ কেউ পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল করে সংবাদপত্র পৌঁছে দেয় পাঠকের দোয়ারে, কেউবা সংবাদপত্র নিয়ে শহরের চৌমুহনায়, কুসুমবাগ ও পশ্চিমবাজার এলাকায় গুরহুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দোকান সাজিয়ে সংবাদপত্র বিক্রি করে।
অঝোর ধারা বৃষ্টি, গা পোড়া রোদের তাপে তাদের নেই দায়িত্বের অবহেলা, নিত্যদিনের সমগ্র খবরের বোঝা মাথায় নিয়ে সংবাদ পাঠক পাঠিকাদের সেবা করে যান তারা। প্রতিদিন সংবাদপত্র বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তাতেই কোন রকম কষ্টে তাদের সংসার চলে। হঠাৎ করে দেশে মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) এর প্রাদুর্ভাব যেন তাদের কষ্ঠের মাত্রা আর বাড়িয়ে দিলো। সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস একেবারে ঘরে ঢুকে পড়তে পারে, এরকম একটা ভয় তৈরি হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। অনেকে বলছেন সংবাদপত্র ছাপা হয়তো হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরের পরে সেটা যখন বিলি হচ্ছে আমাদের বাড়িতে, সেই প্রক্রিয়াটা কতটা নিরাপদ, কতটা জীবানুমুক্তভাবে করা হচ্ছে – সেটা তো আমরা জানি না, যে হকার সংবাদপত্র দিচ্ছেন, তিনি যে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন নি, তার কোনও গ্যারান্টি নেই, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনেকেই হকারদের বাড়িতে সংবাদপত্র দিতে নিষেধ দিয়েছেন।
ফলে সংবাদপত্রের বিক্রি হুহু করে কমছে। বিপর্যয় নেমে এসেছে সংবাদপত্র বিপণন ব্যবস্থায়। সে কারণে, ঢাকার বেশ কিছু সংবাদপত্র তাদের প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে, ছাপা হলেও বেশিরভাগ সংবাদপত্র-ই এখন ঢাকার বাহিরে আসে না। ফলে সংবাদপত্র বিক্রি করে সংসার চালানো এসব হকারদের পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে।
শহরের চৌমুহনায় সংবাদপত্রের হকার আসিক বলেন করোনা ভাইরাসের কারনে ঢাকা থেকে প্রতিদিন যে সংবাদপত্র আসতো এখন তা আর আসেনা, মাত্র দুটি সংবাদপত্র আসে, বিক্রি কমে গেছে, সংবাদপত্র না আসলে কিভাবে বিক্রি হবে, আমাদের সংসার চলবে কিভাবে।
চৌমুহনার খুব পরিচিত দুই হকার, সম্পর্কে তারা দুই ভাই চুনু মিয়া ও সুনু মিয়া। খবরের কাগজ বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। প্রতিদিনের মতো এই ছুটির দিনে এখনো তারা সকালে আসে, আর পরিচিত সাংবাদিক দেখলে জিগ্গেস করে ,সাংবাদিক সাহেব করোনা ভাইরাস কবে শেষ হবে? আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। আর কিছুদিন খবরের কাগজ বন্ধ থাকলে আমরা তো না খেয়ে মরতে হবে।শহরের আরেক হকার বাচ্ছু বলেন – আমি মৌলভীবাজার শহরের গীর্জাপাড়া, শ্যমলী রোডসহ শহরের আশ পাশে প্রতিদিন দুইশর বেশি সংবাদপত্র বিক্রি করি। এখন সংবাদপত্র আসে না, আমার ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। আগামী মাসের বাসা-ভাড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনযাপনের ব্যয়ের বাকি সব কিছু অনিশ্চয়তায় ডুবে আছে।
এ অবস্থা শহরের প্রায় সব হকারের বলে জানান কুসুমবাগ এলাকার হকার মানিক মিয়া। তিনি বলেন – মানুষ পত্রিকায় খবর দেখে, খবরের গুরুত্ব আছে। কিন্তু হকারদের কোনো গুরুত্ব নাই। করোনাভাইরাস আসার পর থেকে কেউ বাসায় ঢুকতে দেয় না। পত্রিকার যে বকেয়া বিল আছে সেই টাকা কেউ কেউ বলছে করোনা ভাইরাস শেষ হলে দিবে। এখন কবে করোনা ভাইরাস যাবে আর কোন দিন টাকা পাব তা কে জানে।
মৌলভীবাজার নিউজ কর্ণার সংবাদপত্রের এজেন্ট শংকর বাবু বলেন খবরের কাগজের গুরুত্ব থাকলেও নাগরিকদের হাতে হাতে এসব খবরের কাগজ পৌঁছে দেওয়া হকারদের গুরুত্ব তেমন নেই। তাদের খোঁজ কেউ রাখে না। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাজ পড়েছে তাদের। মৌলভীবাজার শহরে এমনো হকার আছে যারা একেক জন ২৫ থেক ৩০ বছর ধরে পত্রিকার হকারী করছে। তাদের একটাই কাজ ভোরে খবরের কাগজ নিয়ে গ্রাহকদের বাড়িতে বাড়িতে পৌছে দেয়া।
করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারি ছুটি ঘোষনায় বন্ধ রয়েছে পরিবহন সহ সবকিছু , যে হকাররা বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ দেন তারা লকডাউনের মধ্যে বাড়ির বাহিরে বেরুতে সাহস পাচ্ছেন না। রাস্তায় লোক নেই, তাই পথ-চলতি মানুষ যে সংখ্যক সংবাদপত্র কিনতেন, সেটাও এখন হচ্ছেনা, তিনি বলেন বিক্রি বন্ধে আমরা এজেন্ট ও পত্রিকার হকাররা অনেক কষ্টে আছি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে দুয়ারে আসে খবরের কাগজ। ধল প্রহরে শান্তির ঘুম বিসর্জন দিয়ে বাড়ি বাড়ি খবর কাগজ পৌঁছে দেন যে হকাররা, মহামারী এই করোনাভাইরাসের বিপদ কাটিয়ে আবারও তাদের সুদিন ফিরে আসবে, সবাই আগেরমত তাদের কাছ থেকে আবারও খবরের কাগজ কিনবে এমনটাই আশা মৌলভীবাজারের এজেন্ট ও হকারদের।
মন্তব্য করুন