সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি, লে: জে: হোসেইন মোহাম্মদ এর্শাদ (অবঃ) এর অসুস্থতা: রুগ মুক্তিও কল্যান কামনা-তবে
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ সংসদ বিরোধী দলীয় নেতা, সাকে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টি-(এ) এর চেয়ারম্যান, পতিত সামরীক স্বৈর শাসক লেঃ জেঃ এইচ, এম এর্শাদ (অবঃ) ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরীক হাসপাতাল-সি,এম,এইচ-এ-চিকিৎসাধীন। বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদী সামরীক স্বৈর শাসক, নবোতিপর বৃদ্ধ জেনারেল এখন জীবন মৃত্যোর সন্ধিক্ষনে। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতাকে সিঙ্গাঁপুর নিতে চাইলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ সম্মতি প্রদান করেন নি। ইতি পূর্বে পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ এম.পি.সাহেব জানিয়ে ছিলেন উন্নতর চিকিৎসার জন্য জাপা চেয়ারম্যান এইচ.এম.এর্শাদ এম.পিকে বিদেশ পাঠাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হয়নি। বিবৃতি ও বক্তব্যের ভাব খানা এই ছিল জেনারেল (অবঃ) এর্শাদ অর্থ সংকটে আছেন- যা জাতির কাছে বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। অবসর প্রাপ্ত জেনারেল ও ও সেনা প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে জেনারেল এর্শাদ (অবঃ) এমনিতেই প্রচলিত বিধি মোতাবেক চিকিৎসা সুবিধাসহ আমৃত্যো কতেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।
এ সব তার ন্যায্য পাওনা ও অধিকার এ নিয়ে কোন নিন্দুকের কথা বলা কিংবা তাকে নিন্দা জানানোর অবকাশ নেই। এ নিয়ে কেউ কিছু বলেনও নি, কারণ জাতি হিসাবে আমরা এতটা হীন মন্য নই, মানষিক ভাবে এতটা দরিদ্র ও নই। সর্ব্বোপরি অসুস্থ বয়োঃবৃদ্ধ এর্শাদ সাহেব কখনও তাঁর প্রাপ্য ও ন্যায্য চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন নি। কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল- সি, এম, এইচ, দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতাল, আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন উন্নতর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে খ্যাতিমান বিশিষ্ট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ আন্তরিক মানবিক ভাবে চিকিৎসা সেবা দেন। জেনারেল এর্শাদ (অবঃ) সবসময় সেই চিকিৎসা সেবাই নিয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও তাকে বিভিন্ন সময় মানষিক ভাবে অসুস্থ হতে হয়েছে, চিকিৎসার নামে হাসপাতালে যেতে হয়েছে, থাকতে হয়েছে। চৌদ্দ সালের জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সময় ও এমনি রাজনৈতিক অশান্তি-অস্থিরতা ও উত্তেজনা জনিত কারনে তিনি তাঁর বারিধারার বাসভবন থেকে হাসপাতালে-নীত-হয়ে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাবস্থায় তিনি মনের সুখে তাঁর প্রিয় খেলা গলফ্ ও খেলেছেন। ফিট ফাট ফুল বাবু কেতাব দুরস্থ ভাবেই তিনি মিডিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন।
সি,এম,এইচ, এ-চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এর্শাদের গলফ খেলা প্রসঙ্গেঁ সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক-কে অসুস্থ এর্শাদ এর গলফ্ খেলা প্রসঙ্গেঁ ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। বিগত দিনে-আওয়ামী লীগের বিগত সরকারামলে মন্ত্রীর মর্য্যাদায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান জেনারেল এর্শাদ। ৮২- থেকে একান্নবই, দেশের হতাকর্থা ভাগ্য বিধাতা-দন্ড মুন্ডের মালিক ছিলেন দূর্দান্ত প্রতাপশালী সামরীক স্বৈর শাসক জেনারেল এর্শাদ। ৮১ সালের ৩০শে মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসে কতেক বিদ্রোহী সেনাদের হাতে স্বাধীনতার মহান ঘোষক-বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূনঃ প্রবর্তক, ঐতিহাসিক উনিশ দফাসূচীর প্রনেতা সফল রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান শাহদাত বরন করলে তৎকালীন সেনা প্রধান মেজর জেনারেল এইচ,এম,এর্শাদ শাসন ক্ষমতা দখল ও কুক্ষিগত করার পায়তারা করতে থাকেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বয়োঃবৃদ্ধ বিচারপতি জাষ্টিস আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ভার গ্রহণ করার পর সেনাপ্রধান জেনারেল এর্শাদ আর্মির কোড অব কনডাক্ট ভঙ্গঁ এবং ভাব মুর্তি বিনষ্ট করতঃ দেশীয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনা প্রসঙ্গেঁ সংবিধান ও আইন বহির্ভূত ভাবে বিভিন্ন অনাকাংখিত মন্তব্য করতে থাকেন একপর্য্যায়ে ৮২ সালে দেশে প্রচলিত আইন ও বিধি বহির্ভূত ভাবে এদেশে নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ডিঙ্গিঁয়ে উপেক্ষা করে সামরীক আইন জারী করতঃ নিজেকে চীফ মার্শাল ল-এডমিনিষ্ট্রেটর- সি.এম.এল-এ- হিসাবে ঘোষনা করেন। অতঃপর ক্ষমতার দাপট ও বলয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নিজস্ব দল জাতীয় পার্টি গঠন এবং সি.এল.এল.এ থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে একান্নবই সাল পর্য্যন্ত ক্ষমতা ও দন্ড মুন্ডের মালিক ছিলেন। কত মন্ত্রী-উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছিলেন তাঁর সঠিক সংখ্যাবের করতে হলে এখন গবেষনাও পর্য্যালোচনা করতে হবে। সেই মহাশক্তিধর শাসক, মন্ত্রীর ক্ষমতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়ে একদিন পররাষ্ট মন্ত্রনালয়ে গিয়েছিলেন তার কি কাজ জানার জন্য। পত্রিকায় এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছিল।
তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে কোন গুণগত মৌলিক পরিবর্তন কিংবা জাতির জন্য কোন ইতিবাচক ফল এনে দিতে পারেন নি তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ। জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়ে ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হাজি হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ বেতন, ভাতায় বিপুল পারমান আর্থীক লাভবান হয়েছেন, সংসদ ভবনে বিশাল অফিস স্টাফ, দামী গাড়ি ব্যবহার করেছেন।
বাংলা ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে-“নেই কাজ, ত খৈ ভাজ। বিশেষ দূত এর্শাদ সাহেব কোন কাজ না করে, কোন খৈ না ভেজে জনগনের লক্ষ্য কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন-যা অনৈতিক ও হারাম ও বটে।
জেনারেল এর্শাদের শাসনামল সুদীর্ঘ না বছর ব্যাপী ছিল অনৈতিক ভাবে কেনা বেচার রাজনীতি, দলভাঙ্গা, দূর্নীতি ও ভ্রষ্টাচার এর বাঁধ ভাঙ্গা, জোয়ার। উজ্জল ফর্সা চেহারার সুবেশী জেনারেল এর্শাদ ছিলেন এক দূরন্ত লেডি কিলার। তাঁর নারী কেলেংকারি দেশে বিদেশে কুখ্যাত। আধুনিক গণতন্ত্রের জন্মভূমি বৃটেনের জনপ্রিয় উংরেজী দৈনিক ডেইলি অবজার্ভার এ এর্শাদের প্রেমও নারী কেলেকারির সচিত্র সংবাদ ছাপা হলে দেশ বিদেশে হৈ চৈ পড়ে যায়। বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। এর্শাদের আলোড়ন সৃষ্টি কারি সুন্দরী প্রেমিকা মেরির ছবি সহ আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন দৈনিক অবজার্ভার এর হেডিং ছিল-লাভ অব-এ প্রেসিডেন্ট, দি রিছেষ্ট প্রেসিডেন্ট অব এ পুত্তরেষ্ট নৈশন- জাতীয়। তখন আমাদের প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করছি। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সুবাদে দেশে-বিদেশে আমার অসংখ্য বন্ধু ও সুহৃদ ছিলেন-এখনও আছেন। লন্ডন থেকে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু ডেইলি অব জার্ভার এর এর্শাদ বিষয়ক সংখ্যাটি আমার কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। সরকার ডেইলি অব জার্ভার এর প্রচারে বিধি নিষেধ আরোপ করলে ও বাংলাদেশে অব জার্ভার আসা বন্ধ হয় নি। প্রিন্স স্যুট পরিহিত সি,এম,এল,এ এর্শাদকে দারুন লাগছিল। বিদিশার ভালোবাসায় বেদিশা ও বেহুশ হয়ে শেষ পর্য্যন্ত কন্যার বয়সী ভদ্র মহিলাকে কলেমা পড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন প্রেমিক প্রেসিডেন্ট এইচ.এম.এর্শাদ। স্বামীর নারী কেলেংকারি ও নারী প্রীতিতে বিরক্ত হয়ে নিরহ ভদ্র মহিলা বেগম রওশন এর্শাদ জীবন সঙ্গীঁর কাছ থেকে একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে থাকেন। এই প্রবীন দম্পতি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই প্রড়ন্ত বেলায় ও অলিখিত ভাবে আলাদা আলাদা-ই-থাকছেন। প্রেসিডেন্ট এর্শাদ বসবাস করেন বারি ধারার আলীশান বাড়ি প্রেডিডেন্ট পার্ক-এ, বেগম রওশন এর্শাদ বসবাস করেন গুলশানের আলীশান বাড়িতে। এ যেন আধুনিক বাংলা গানের “আজ দু’জনার দুটি পথ ও গো দুই দিকে গেছে বেঁকে, তোমার ও পথ আলোয় ভরানো জানি, আমার এ পথ আঁধারে গেছে যে ঢেকে” এর মত অবস্থা। আওয়ামী লীগের বিগত সরকারামলে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারপার্সন বেগম রওশন এর্শাদ স্বামীকে সাজঘরে পাঠিয়ে নিজেই সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন, দলের মধ্যে একটি নিজস্ব বলয় তৈরী করতঃ জাতীয় পার্টি এর্শাদ পহ্ণী ও রওশন পহ্ণী হিসাবে অলিখিত বিভক্তি এনেছেন। সামরীক স্বৈরশাসক জেনারেল এর্শাদ রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমনি ছিলেন স্বৈরাচারি জাতীয় পার্টির স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হয়ে দল পরিচালনায় ও স্বৈরাচারি মনোভাবেরই পরিচয় দেন। দলের সংবিধান এর ক্ষমতা বলে পার্টি চেয়ারম্যান কাউন্সিল কিংবা কমিটি মিটিং ছাড়াই যে কাউকে দলে ঢুকান, যে কাউকে বের করেন। এখানে ও পদবানি জ্যের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। বড় বড় রাজনৈতিক দলের ভালো পদ পেতে হলে অঢেল টাকা পয়সার মালিক হওয়া লাগে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ তিতিক্ষার চাইতে অর্থ কড়িই এখন মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাই রাজনৈতিক গবেষক বিশ্লেষক-পর্য্যালোচকগণ যথার্থই বলেন, রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদ দের হাতে নেই, রাজনীতি চলে গেছে, পড়ে গেছে কালো বাজারিও খেলাপিদের খপ্পরে। নারী লোভীর মত অসৎ এর্শাদ একজন অর্থ লোভী ও বটেন। জমিদার-ভূ-স্বামী পরিবার নয়, তাঁর বাপ-দাদা কুচবিহার কিংবা রংপুরে জমিদারি ছিলনা, কিংবা তারা কেউ শিল্পপতি পুজিপতিও ছিলেন না, এক মধ্যবিত্ত মুসলিম রিফিউজি-পরিবারের সন্তান হিন্দুস্থান থেকে পাকিস্তান এসে সেকেন্ড লেঃ হিসাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে একাত্তোরের মহান মুক্তি যুদ্ধে যোগদান না করে, স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতা করেও স্বাধীনতা উত্তর কালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। পিতা-মাতার দোয়া ও মহান মালিকের দয়ায় সেকেন্ড লেফট্যেনেন্ট থেকে লেঃ জেনারেল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছেন, দেশে সামরীক আইন জারী করে চীফ মার্শেল ‘ল এডমিনিষ্ট্রেটার সি.এম.এল.এ. হয়েছেন, কলে কৌশলে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। জাতীয় পার্টি-নামক রাজনৈতিক দল গঠন করে জীবনে কোন দিন মিটিং মিছিল না করে সভা সমাবেশে কোন জ্বালাময়ী ভাষন না দিয়ে সরাসরি পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছেন, কবি হওয়ার সখ হওয়ায় কবিও হয়েছেন, ক্ষমতাও প্রাপ্তির শীর্ষ বিন্দুতে অবস্থান করেছেন, জীবনের যত সুখ, অর্থ কড়ি তাঁর পদ তলে লুটিয়ে পড়ে গড়াগড়ি খেয়েছে, তবুও পরিনত বয়সে এসেও তিনি ধন সম্পদের লোভ সামলাতে পারেন নি, জাতীয় সংসদের নির্বাচন এলেই তিনি মনোনয়ন বানিজ্যের দিকে মনযোগ দেন, যা এখন ও পেনসিক্রেট। এই মনোনয়ন বানিজ্যের বিরুদ্ধে টি.আই.বি এবং সুজন লাগাতার বক্তব্য বিবৃতি দিলেও কে শুনেকার কথা। বরং মনোনয়ন বানিজ্য এখন রম রমা, চমচমা। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিবেন বলে জাতীয় পার্টির শত নেতার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা করে শত কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল, দলের চেয়ারম্যান হিসাবে সিংহভাগ টাকা গিয়েছে চেয়ারম্যান এর্শাদের একাউন্টে। মনোনয়ন বানিজ্যের অভিযোগে তৎকালীন মহাসচিব রুহল আমীন হাওলাদার বিতর্কিত হয়ে পদচে্যুত। পদ হারিয়ে এখন তিনি পথহারা পাখি। দৃশ্যান্তরালে। মিঃ হাওলাদার এখন হয়ত দুদকের হাওলায় কিংবা নজর দারিতে। চেয়ারম্যান এর্শাদ জাতীয় পার্টিকেও তাঁর প্রপার্টির মত মনে করে দলকে তিনি নিজে তার স্ত্রী বেগম রওশন এর্শাদ, সহোদর গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর হাতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। জাপা এখন তিনজনের লিমিটেড কোম্পানী। মহাসচিব পদে আউট-ইন-এরে নাটক চলছেই। জাপার প্রিসিডিয়াম মেম্বার সাবেক মন্ত্রী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজি ফিরোজ রশীদ এম.পি একমাত্র স্পষ্ট বাদি ব্যক্তিত্ব। টি.ভি-র টকশো সমূহে তাঁর কথাবার্তা অত্যন্ত ষ্পষ্ট। তাঁর কন্যার মনোনয়ন এর জন্য কোটি টাকা চাঁদা প্রদানের কথা তিনি দুঃসাহ সের সঙ্গেঁই উচ্চারণ করেছেন। জাপার হাই কমান্ড থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজি ফিরোজ রশিদ এর বক্তব্য ও দাবী প্রত্যাখ্যান করে জোরালো জবাব দিতে পারেন নি।
এই ভাবে বিভিন্ন তথ্য বক্তব্য ও জাতীয় দৈনিক সমূহের অনুসন্ধানী সংবাদ মোতাবেক প্রমাণিত সত্য যে, জাপা চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এর্শাদ এবং তার দল মনোনয়ন বানিজ্য, পদ বানিজ্য সহ বিভিন্ন আর্থীক অবৈধ লেন দেনের অভিযোগে অভিযুক্ত। এইচ.এম এর্শাদ সমর্থক অনেকেই সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে উপজেলা প্রথা চালু এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারনে এই সাবেক স্বৈর শাসকের পক্ষে সাফাই গান, গলাবাজি- কলমবাজি করেন। এই ক্ষুদ্র পরিসরে এত সব জাতীয় ইস্যুর ব্যাপক পর্য্যালোচনা ছহি বড় এর্শাদ নামা রচনা সম্ভব নয়। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী মোতাবেক রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম প্রসঙ্গেঁ এতটুকু বলা চলে এক্ষেত্রে তাঁর ধর্মানুরাগ, ধর্মীয় আনুগত্যের চাইতে রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্যই ছিল অত্যাধিক। রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম জনগোষ্ঠির সহানুভূতি ও সমর্থন পাবার প্রত্যাশা করেছেন, ইসলামের মূলনীতি, সততা, সত্যবাদিতা, ধর্মানুরাগ, ইসলামী আইন কানুন শরীয়ার অনুশাসন, এবাদত বন্দেগী তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিফলিত হয় নি। ইসলাম ধর্ম শুধুমাত্র প্রদর্শন দেখানোর ব্যাপার নয়, পালন এবং অনুসরনের ব্যাপারও বটে। ঈমানে আমলে-আকিদায়-মেহনতে-ছুন্নতে হাজি হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ পাক্কা সাচ্চা সুন্নী মুসলিম ছিলেন না। তাঁর কথাও কাজে কোন মিল ছিল না। তাঁর সি,এম,এল,এ পদবি এক সময় ক্যানসেল মাই লাষ্ট এনাউন্সমেন্ট হিসাবে কুখ্যাতি অর্জন করে। এর্শাদী সামরীক শাসনের প্রথম ভাগে আমাদের নিকট প্রতিবেশি জেলা হবিগঞ্জের সু-সন্তান জাকির খাঁন চৌধুরী-আমাদের প্রিয় হারুন ভাই এর্শাদের যুবও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সংবাদ এল এর্শাদ সাহেব প্রত্যেক জেলা মহকুমার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারও ডেপুটি কমান্ডারদের সঙ্গেঁ সাক্ষাত করতে চান, মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যার কথা শুনতে চান। তখন তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলী মহকুমা কমান্ডার আমি ডেপুটি কমান্ডার। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংঘটিত করতে সেই একাত্তোর থেকে এখন পর্য্যন্ত আমি কাজ করছি। একাত্তোরের প্রিয় সহযোদ্ধা রনাঙ্গঁনের সাথীদের কথা শুনা তাদের কাছে থাকা, তাদের কথা লেখাও বলা এখনও আমার কাজ।
একাত্তোরে সমগ্র বৃহত্তর সিলেট-চার ও পাঁচ নম্বর সেক্টারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটি স্পেশিয়াল ব্যাচ-এর ট্রেনিং সেন্টারে আমি কমান্ডার ছিলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিলেট বিভাগীয় ইউনিট কমান্ডার হিসাবে ও আমি দায়িত্ব পালন করেছি। বন্ধুবর সৈয়দ মহসীন আলী (জেলা সদরের সাংসদ। সমাজ কল্যান মন্ত্রী। পরলোকে।) এবং আমি ঢাকায় গিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে রিপোর্ট করি। সেখান থেকে বঙ্গঁ ভবনে আমাদের গেইট পাশের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গঁ ভবনের বিশাল দরবার হলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে ছিল। জীবনে কোনদিন দরবার হলে ঢুকি নি; আর ঢোকার কোন সম্ভাবনা ও নেই। প্রথম কাতারে বৃহদাকৃতির দুটি সোফা সেটে পাশাপাশি বসলাম। অনুষ্ঠানটি ঘোষনাও উপস্থাপনায় ছিলেন বিখ্যাত সংবাদ পাঠক সালেহ আক্রাম। আনুষ্ঠানিকতায় জেনারেল এর্শাদ মঞ্চে এলেন। সমগ্র দরবার হল দাড়িয়ে তাঁর প্রতি সম্মান জানালো। তাঁর ভাষনে তিনি বল্লেন- আমরা যে তাকে সম্ভর্ধনা দিচ্ছি এ জন্য তিনি আন্তরিক ভাবে আনন্দিত। তিনি আমাদেরকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করলেন, একাই কথা বল্লেন। আমরা জানতাম তিনি আমারেকে সম্ভর্ধনা দেবেন এখন দেখলাম আমরা তাঁকে সম্ভর্ধনা দিচ্ছি, তাঁরপ্রতি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সমর্থন জ্ঞাপন করছি। তখন আমার রাগ গোসসা-দারুন। ইটস নট এ ফ্যাক্ট-বলে আমি সোফা সেট থেকে উঠতে চাইলে শক্তিমান ও বুদ্ধিমান সৈয়দ মহসীন আলী আমাকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধেের ফিসফিস করে বল্লেন দিস ইজ বঙ্গঁ ভবন কনট্টলইওর সেল্প। নির্ভীক মুজিব সৈনিক বন্ধুবর সৈয়দ মহসীন আলী তখন জেলা আওয়ামী যুব লীগের সভাপতি এবং সামরীক শাসক এর্শাদ বিরোধী রাজনীতিবিদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি এবং সত্যিকার অর্থেই আমার সুহৃদ ছিলেন। তখন আমি জেলা জাসদের সভাপতি। আমাকে উসকিয়ে দিলে-আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে পুলিশ-গোয়েন্দা-ধরে নিয়ে যেত। কড়া মামলায় হাজতে যেতাম। আমার ডিটেনশন হত। আমিও সম্বিত ফিরে বাস্তব মুখী হলাম।
নীরবে একটি মিথ্যাচারকে মেনে নিলাম। পরদিন সকল জাতীয় দৈনিকে সংবাদ এলো দেশের মুক্তিযোদ্ধা সমাজ জেনারেল এর্শাদকে সমর্থন করে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি এই মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ লিপি পাঠাতে চাইলে সৈয়দ মহসীন আলী বল্লেন অপেক্ষা করি কোন জেলা-এলাকা থেকে প্রতিবাদ লিপি পত্র পত্রিকায় ছাপা হলে আমারও তা সমর্থন করে প্রতিবাদ জানাবো। সি.এম.এল.এ. হেড কোয়ার্টার এর তৎকালীন বিভিন্ন ঘোষনা ও ধারা-বিধি জারী-তথা সামরীক আইনের ভয়ে বাংলাদেশের কোথাও তাঁর প্রতিবাদ হয়নি। আমরা একক ভাবে এমন ঝুকি পূর্ণ কাজ করতে গেলাম না। জাতির সঙ্গেঁ মিথ্যাচার ও প্রতারনা করলেন জাতির কর্ণধার জেনারেল এর্শাদ। একটি মিথ্যার প্রতিবাদ করতে না পারার বেদনা বোধ আজীবনের জন্যই রয়ে গেল, আমার নিজের বিশ্বাস ও বিবেকের কাছে পরাজিত হলাম-হেরে গেলাম।
ইংরেজীতে একটা কথা আছে-“এ গুড ওয়ার্ক ডান-ইন-এ-বেড মেনার ইজ অলসো ব্যেড”। নামাজ পড়তে অজু লাগে সাফ সুতরা কাপড় লাগে, বিয়ে করতে হলে নিকাহনামা-মোহরানা-মৌলানা-ইজাব কবুল লাগে, সনাতনী শাস্ত্রানুসারে বিশুদ্ধ ব্রাহ্মন, মন্ত্রপাঠ, সাত পাক লাগে, খৃষ্টীয় মতে গির্জা পাদ্রী প্রয়োজন- বিবাহ সমূহে বৈবাহিক ধর্মীয় আচার-বিধি বিধান না মানলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না, এই জাতীয় অশুদ্ধ বিবােেহর ফল ও ফসল- সন্তানাদি জারজ হবে না কি না তা আলেম ওলামা-ধর্মীয় বিশেষজ্ঞগণ ব্যাখ্যা দেবেন- বলতে পারেন আমরা আমজনতা বলতে পারি বৈধ বিবাহ বহির্ভূত সন্তানদের জন্ম প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় জেনারেল এর্শাদের আগমন শুভাগমন ছিল না বরং তাছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ। একটি সরকারের বিকল্প আরেকটি সরকার, সংসদ ও সরকারের বিকল্প সেনা প্রধান কিংবা সেনাবাহিনী নহেন। এর্শাদ তৎকালীন সরকারের ব্যর্থতা, দূর্বলতা, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির দোহাই দিয়ে অস্ত্রের মুখে বলপূর্বক রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। সামরীক আইন জারী করে
তিনি দেশ ও জাতির গর্ব ও গৌরব বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ইমেজ ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছেন। ‘ন’ বছরের স্বৈর শাসনে অনেক মায়ের কোল খালি করছেন এর্শাদ সরকার। দেশের মহামান্য উর্ধ আদালত ও তাই সামরীক আইন প্রসঙ্গেঁ নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। দেশ ব্যাপী সামরীক আইন জারীর জন্য জাতির কাছে জেনারেল এইচ.এম.এর্শাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
সংসদীয় গণতন্ত্র এবং সংসদীয় সংস্কৃতিকে ও বিনষ্ট-বিভ্রান্ত করেছেন এই সাবেক স্বৈর শাসক। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল বিকল্প সরকার, গার্ডিয়ান অব দি গভর্নমেন্ট। কোন কারনে সংসদ নেতা সংসদে সংখ্যা গরিষ্টতা হারালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতাকে সংরকার গঠন এবং সংখ্যাগরিষ্টতা যাচাইর আহ্বান জানতে পারেন, কিন্তু এর্শাদী গণতন্ত্রে বিরোধী দলও সরকার-একাকার হয়ে হয়ে গেছেন। জাপা-এর্শাদ-মহাজোটের শরীক দল। ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টি মিলে মহাজোট হয়ে সিট বাটাবাটির জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে আবার লুটালুটির জন্য ভাগাভাগির বিরোধী দল ওয়েষ্ট মিনিষ্টার টাইপ অব পার্লামেন্টারি সরকারের সংস্কৃতিও চেতনার পরিপহ্ণী বিধায় তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক টুকে দিয়েছেন। এর্শাদ বিরোধী তিনজোটের রূপরেখা ছিল দেশে সংসদীয় পদ্ধতির জবাব দিহিতা মূলক সরকার চালু। তিন জোট এর রূপরেখার কোন সাংবিধানিক গুরুত্ব না থাকলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল অপরিসিম।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা আলহাজ্ব এইচ.এম.এর্শাদের সঙ্গেঁ আমার কোন ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। তিনি আমার কোন বিন্দু মাত্র ক্ষতিও করেন নি, তাঁর ও আমার যোযন যুযন দুরত্বে অবস্থান, তিনি অনেক উপরে। আমি অনেক নীচে। তাঁর দ্বারা আমার জীবনের গতি পরিবর্তনের সুযোগ ছিল, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রাপ্তির শীর্ষ বিন্দুতে উঠার প্রস্তাব ছিল, আমি তা নাকচ করে দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার আমার একান্ত সুহৃদ ও গুভাকাংখী শ্রদ্বেয় সৈয়দ আলী আহমদ এর্শাদের রাজনৈতিক দাওয়াত নিয়ে সিলেট সফর করছিলেন, তখন তিনি মেজর আলী। সরকারি সফর বলে মৌলভীবাাজার সার্কিট হাউসে উঠলেন, টেলিফোন মারফত এই সংবাদ আমাকে জানালে আমি তাঁকে ঐ রাতেই বাসায় ডিনারের দাওয়াত দিলাম, আমার বাসায় না উঠার জন্য কিঞ্চিত ক্ষোভ প্রকাশ করলাম। তিনি আর কাউকে না বলতে আমাকে বলেদিলেন এবং আমার সঙ্গেঁ কিছু জরুরী রাজনৈতিক আলাপ আছে বলে জানালেন। সরকারী সফর, সামরীক বিষয় আসয় তাই সিভিলিয়ানদের বাসায় উঠা ও থাকা ঠিক নয় বলে জানালেন। সুনামগঞ্জ জেলাধীন ঐতিহ্যবাহী সৈদপুরের সু-সন্তান, আওলাদে ওলি আল্লাহ সৈয়দ আলী আহমদ সহজ সরল সাদা মনের এক মাটির মানুষ। পীর বংশী মেজর আলী একজন প্রকৃতই মায়া পীর। বয়সে আমার কিঞ্চিত কনিষ্ট হলেও আমাকে বাপ চাচার মত অসম্ভব ¯েœহ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে কৃতিেেত্বর সাথে লেঃ কর্নেল পদ মর্য্যাদায় উন্নীত হয়ে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে সিলেট শহরস্থ উয়েষ্ট পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। প্রিন্সিপাল আলী একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও মরমি সাহিত্যের গবেষক। ঐ দিন রাতে নৈশভোজ শেষে মেজর আলী আমাকে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করে এর্শাদের মন্ত্রীসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসাবে যোগদানের প্রস্তাব দিলেন। আমার একমাত্র শিশু পুত্র মিনহাজকে ক্যেডেট কলেজে ভত্তি করিয়ে দিবেন বলে জানালেন। তখন সেনা শাসক এর্শাদ জাপা গঠন করত: দেশকে বেসামরীকি করনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, বিভিন্ন কর্ম পেশার লোককে দলে ভিড়াচ্ছেন, রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে ভাঙ্গাঁ গড়ার ক্রীড়া শুরু করেছেন। আমি তখন জেলাবার, প্রেসক্লাব, বেড়ক্রশ, পাবলিক লাইেেব্ররী, শিশু একাডেমী, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল জাতীয় সামাজিক ও সেবা সংঘটন সমূহের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছি, রুগ বালাই বিহীন ভরা যৌবন কাল আমার।
সাহিত্য সংস্কৃতি ক্রীড়াঙ্গঁনেও ছিল আমার সরব ও সক্রিয় পদ চারনা। মেজর আলী বল্লেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে জেনারেল এর্শাদ আমার মত কাজের মানুষই চান। তখন আমার ছ’ফুট ফিগারে একাত্তোরি বিশাল গোঁফ, মাথায় বাবরি চুল। উচ্চ কন্ঠে কথা বলি। ছাদ ফাটিয়ে হাসি। রাগলে আগুন-অগ্নিশর্মা। মেজর আলীর সরাসরি প্রস্তাবে ঘোত করে উঠলাম। প্রচন্ড রাগ করলাম। তাঁর সঙ্গেঁ অসৌজন্য মূলক আচরন করলাম। কারণ আমি তখন এর্শাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম কাতারের বলিস্ট সৈনিক। অনলবর্ষী বক্তা। ক্ষমতার কাছে প্রাপ্তি যোগের প্রত্যাশায় নীতি আদর্শ ত্যাগ করতে পারি না। আমার এই পরিণত বয়সে এই পড়ন্ত বেলায় জীবন সায়াহ্ণে এসে জীবন যুদ্ধের এক ক্লান্ত সৈনিক জীবন যন্ত্রনায় পরাজিত না হলেও বিপর্য্যস্থ-বেহাল হলেও আহাজারি-আফসোস করি না, তবে ছেলেটাকে ক্যেডেট কলেজ দিলে এখন মেজর- কর্নেল এর পিতা থাকতাম। একটা মানসিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি থাকত। মন্ত্রীত্ব ও ক্ষমতার সুবর্ণ সুযোগ প্রত্যাখ্যান ও হাত ছাড়া হলেও হায়হায় করিনা তবে সৈয়দ আলী আহমদ এর মত শ্রদ্বেয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গেঁ বেআদবি উচ্চ কন্ঠে কথা বলার জন্য মনোঃ কষ্ট পাই- বেদনাবোধ করি। জেনারেল এর্শাদের স্টাইল, ফ্যেসন সচেতনতা আমার পছন্দ। তিনি এখন জীবন সায়াহ্ণে-জীবন মৃত্যোর সন্ধিক্ষনে-লাইফ সাপোর্টে-যেকোন মূহুর্তে তাঁর পরিণত বয়সের মৃত্যে।- ম্যেচিউরডেথ। অসময়ে মৃত্যোতে স্বজনগণ আফসোস, আহাজারি, কান্না-কাটি করেন। পরিণত বয়সের মৃত্যোকে মন: কষ্টের মাঝেও মেনে নিতে হয়।
আমাদের বাল্য কালে কঠিন অসুখ হলে, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকলে সেই রুগীর জন্য দোয়া দূরুদ করা হয়, লিল্লা, ছদগা দেওয়া হত, মুখরোচক খাবার খাওয়ানো হত, দুর দুরান্তর থেকে আত্মীয় স্বজন এসে শেষ দেখা দেখতেন, রুগীকে তার গোনাহর জন্য তওবা করানো হত, আজকাল খতমে খাজেগান হয়। একজন মৃত্যো পথ যাত্রীকে সম্মানজনক-সুখময় শেষ বিদায় জানাতে যতটুকু করার তত টুকুই করা হত।
দুঃখও দূর্ভাগ্যজনক ভাবে মৃত্যোপথ যাত্রী বিরোধী দলীয় নেতা এইচ.এম এর্শাদ এখন নিঃসঙ্গঁ। অসহায়। তাঁর পাশে কেউ নেই। প্রিয় জীবন সঙ্গিঁনী বেগম রওশন এর্শাদ অসুস্থ স্বামীকে এমন ভাবে দেখে গেলেন, যেন তিনি তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। এই বয়োঃ বৃদ্ধের বিদায় বেলা তাঁর শেষ যাত্রাকে সুখময় করতে-
ক. তাঁর তওবা করানো উচিত।
খ. তাঁর কৃত কর্মের জন্য েেদশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
গ. তাঁর সম্পদের জাকাত প্রদান করা উচিত।
ঘ. তাঁর বিশাল সম্পত্তি একটি বড় অংশ ট্রাষ্ট করে ধর্মও শিক্ষা উন্নয়নে ব্যবস্থা করা উচিত।
ঙ. তাঁর অর্থ দিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, পাঠাগার, মোসাফির খানা তৈরী করা উচিত।
আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন কারণ তিনি দয়াবান, মানুষের কাছে মাফ চাইলে মানুষ ও মাফ করে দিতে পারে কারণ মানুষ বড় হৃদয়বান।
এসব হলে এসব করলে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জাপা চেয়ারম্যান হাজি হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ এর সুস্ব্যাস্থ দীর্ঘায়ূ ও কল্যান কামনা করতে পারি-নতুবা-।
(মুক্তিযোদ্ধা। একজন প্রবীন নাগরিক। একজন রাজনৈতিক সমর্থকও বিশ্লেষক। একজন কলামিষ্ট ও প্রবীন আইজীবী। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব)
মন্তব্য করুন