সওয়াব কামানোর উর্বর মাস পবিত্র রমজান
এহসান বিন মুজাহির॥ মুসলিম উম্মাহর নৈতিক চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক মানোন্নয়নের মাস রমজানুল মোবারক। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম রোজা মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির অন্যতম উপায়। সিয়াম সাধনার এ মাসটি হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের মাস। মহান আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তেই এ মাসের রোজাকে ফরজ করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো’। (সূরা বাকারা : ১৮৩)। ঈমানদার মুসলমানগণ এ মাসে ফজরের নামাজের আগে ভোররাতে সাহরি খেয়ে পরদিন মাগরিবের আজান পর্যন্ত কোনো ধরনের খাদ্য-পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সওয়াব কামানোর উর্বর মাস পবিত্র রমজান। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবু হুরয়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৮৩৬৮, বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস-৩৩৩৫)। হাদিসের বিশুদ্ধ গ্রন্থ বুখারি শরিফে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে সত্তর টি ফরজের সওয়াব পাবে, আর যে ব্যক্তি একটি সুন্নাত আদায় করবে সে একটি ফরজের সওয়াব পাবে, আর যে একটি নফল আদায়করবে সে একটি সুন্নাতের সওয়াব পাবে। এই মাসে মহান আল্লাহ তাআলা পূণ্যকে বর্ধিত করতে থাকেন। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করে দিবেন, আর সে ব্যক্তিকে রোজাদারের সওয়াব দিবেন। কিন্তু সে জন্য প্রকৃত রোজাদারের সওয়াবের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না।
রোজা সম্পর্কে নবী করীম (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি ভালো কাজের বিনিময় দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহপাক বলেন, রোজা ব্যতিত, কারণ তা কেবল আমারই জন্যে। এ জন্যই যে, সে আমারই জন্য প্রবৃত্তির দাবিকে উপেক্ষা করেছে এবং পানাহার ত্যাগ করেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আসসাওমু জুন্নাতুন মিনান-নার’। অর্থাৎ রোজা প্রকৃত ঈমানদারের জন্য ঢাল স্বরূপ। (মিশকাত শরিফ)। রাসুলুল্লাহ (সা)ঃ ইরশাদ করেন, ‘সহমর্মিতা ও সৌহাদ্যের মাস মাহে রমজান’। (বায়হাকি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, রোজাদারের মুখের দূর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকে আম্বরের সুগন্ধের চেয়েও অনেক উৎকৃষ্ট’। (বুখারি শরিফ)। বায়হাকি শরিফে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ রয়েছে, একটি হচ্ছে, ‘ইফতারের সময়’ অপরটি হচ্ছে, পরকালে তার ‘প্রভূর’ সাথে সাক্ষাতের সময়’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি অশ্লীল কথা বলবে না, বা জাহেলি আচরণ করবে না। কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে বা গালমন্দ করলে সে বলবে, আমি রোজাদার। কথাটি দুইবার বলবে। যার মুষ্টিতে আমার প্রাণ সে আল্লাহর শপথ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধ অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট।’ (বুখারি)। হজরত যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৮০৭)
তাকওয়া অর্জনের এ মোববারক মাসে রোজা রেখে সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রমজানের শিক্ষা। নফসের গোলামি থেকে বের হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ আল্লাহর গোলাম এবং তার কাছে আত্মসমর্পণকারীদের কাতারে শামিল করতে, এই রোজা যেন আমাদেরকে ব্যর্থ এবং নিষ্ফল শুধুমাত্র উপবাসকারী হিসেবে পরিণত না করে। আল্লাহপাক আমাদের প্রকৃত রোজাদার হিসেবে কবুল করুন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট ও শিক্ষক।
মন্তব্য করুন