সদকাতুল ফিতরের গুরুত্ব ও জরুরি কিছু মাসয়ালা

May 22, 2020,

ফাহিম আল হাসান॥ মুসলিম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পবিত্র রামাদ্বান। রামাদ্বান গত হওয়ার পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মুসলিমদের আনন্দের জন্য দান করেন খুশীর এক উপলক্ষ ‘ঈদ’। ঈদ সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর।বাংলাভাষী অনেকে এটাকে ফিতরা বা ফেতরা বলেন।
♦ ফিতরা বা ফেতরা( ﻓﻄﺮﺓ) আরবী শব্দ, শারয়ী পরিভাষায় এটাকে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) বলা হয়। ফিতর বা ফাতুর শব্দের অর্থ হচ্ছে- দীর্ঘ সময় উপোস থাকার পর কোনো কিছু খেয়ে বা পান করে উপোস ভাঙ্গা।[আল মু’জামুল ওয়াসিত, পৃ: ৬৯৪ ] এজন্য সকালের নাস্তাকে আরবী ভাষায় ফুতুর বলা হয়। ইংরেজি ভাষায় বলা হয় ব্রেকফাস্ট। রামাদ্বান মাসে একজন রোযাদ্বার সারাদিন সিয়াম পালন করার পর মাগরিবের আযান হলে সে যে তার সিয়াম ভঙ্গ করে এটাকে ইফতার বলা হয়। এগুলোর পাশাপাশি রামাদ্বানের ঈদ সংশ্লিষ্ট এক প্রকার দান রয়েছে এটাকেও আমরা ফিতরা বা ফেতরা বলে থাকি।
♦ যাকাতুল ফিতর বা সাদকাতুল ফিতর যেটাকে আমরা ফেতরা বা ফিতরা বলে থাকি এটার পরিচয় জানা প্রয়োজন। সংক্ষেপে এটার পরিচয় হচ্ছে এটা সক্ষমদের পক্ষ থেকে অক্ষমদের জন্য ঈদুল ফিতর কেন্দ্রীক এক প্রকার দান। আরেকটু বিস্তারিত বলতে গেলে এভাবে বলা যায় যে, যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে। ফিতরাহ শব্দের শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী রামাদ্বান অতিবাহিত হওয়ার পর ঈদের দিন থেকে একজন মুসলিমকে আর বাধ্যতামূলক সিয়াম পালন করতে হয় না, তিনি দিনে খাবার গ্রহণ করতে পারেন, এই যে স্থায়ী ভাবে দিনে উপোস ভঙ্গ করছেন এ উপোস ভঙ্গের জন্য কিছু দান করার আদেশ দিয়েছে শারিআহ, এই দানের নাম হচ্ছে ফিতরা।[ফাতহুল বারী ৩, ৪৬৩]
♦ সাদকাতুল বা যাকাতুল ফিতর যেটাকে আমরা ফিতরা বা ফেতরা বলে থাকি এটা আবশ্যক হওয়ার কারণ কী?
হাদীহ অনুযায়ী এটা আবশ্যক হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে:
১. মুমীনরা যাতে নিজেদের জীবনের গুনাহ মাফ করিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে পারে সেজন্য আল্লাহ তায়ালা মুমীনদের রামাদ্বান মাস দান করেছেন। রামাদ্বানে সিয়াম পালন করার মূল দাবি হচ্ছে একজন মুমীন গুনাহ মুক্ত থেকে সিয়াম পালন করবে। কিন্তু সিয়াম পালন করতে গিয়ে মানবীয় দুর্বলতার কারণে একজন মুমীন কথাবার্তা বা দৈনন্দিন জীবনে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গুনাহের সাথে জড়িয়ে পরে। ঐ গুনাহের কারণে তার সিয়াম ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়। বান্দার ত্রুটিপূর্ণ সিয়ামকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের মাধ্যমে অল্টারনেটিভ একটি ডুনেশন বা দানের ব্যবস্থা করেছেন যেটা একজন বান্দা আদায় করলে তার সিয়াম গুলো ত্রুটিমুক্ত হয়ে যাবে এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।
ছোট্ট একটি উদাহরণ দিচ্ছি- পুরাতন টিনসেড ঘরে জং ধরে টিনের মধ্যে অনেক সময় ছিদ্র হয়ে যায়, তখন ঐ ছিদ্রগুলো পুডিং দিয়ে ভরাট করে দেয়া হয়। ঠিক একই ভাবে গুনাহ সিয়ামকে ছিদ্র করে ফেলে, আর সাদকাতুল ফিতর ঐ ছিদ্রকে ভরাট করে দেয়।
ইবাদাত সংশ্লিষ্ট আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি- আমরা নামাজ আদায় করতে গিয়ে ভুল করলে ভুলের জন্য আদায় করতে সাহু সিজদা। ঠিক একই ভাবে ফিতরা হলো রমজানের রোজা পালনের সময় সংঘঠিত ভুলত্রুটির ক্ষতিপূরণ স্বরূপ। এ কারণে ফিতরাকে কল্যাণের আরেক মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়।
২. আমরা জানি যে, ইসলাম একটি ব্যালেন্সড রিলিজিওন। আল্লাহ তায়ালা অর্থনৈতিক মানদণ্ডে দুভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এক প্রকার হচ্ছে সাবলম্বী এবং আরেক প্রকার হচ্ছে সম্বলহীন।
রামাদ্বানের মাসব্যাপী সিয়াম-সাধনার পর আসে মুসলমানদের খুশির ঈদ। এ ঈদের আহার আর নতুন পোশাকের আনন্দ শুধুমাত্র সাবলম্বী বা সামর্থ্যবান ধনী যারা আছেন শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে সম্বলহীন বা সামর্থ্যহীন দরিদ্রও যাতে এ আনন্দে শামিল থাকতে পারে তাই আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর সামর্থ্যহীন ব্যক্তির জন্য ফিতরার গুরুত্বপূর্ণ বিধান আবশ্যক করেছেন। যারফলে ঈদের খুশীতে ধনীর পাশাপাশি ফিতরার মাধ্যমে গরীবও ঈদের আনন্দে মেতে ওঠতে পারে।
দলীল :
عن عبدالله بن عباس رضي الله عنهما قال: ” فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم زكاة الفطر طهرة للصائم من اللغو والرفث، وطعمة للمساكين”
অর্থাৎ, আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয (আবশ্যক) করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রামাদ্বানের) সিয়ামকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬০৯]
♦ সাদকাতুল ফিতরের হুকূম কী?
জমহুর ফুক্বাহায়ে কেরামের (ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের) মতে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। সুতরাং সক্ষম হয়েও কেউ যদি সাদকাতুল ফিতর আদায় না করে তবে সে গুনাহগার হবে। [আল ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, পৃ: ২০৩৪-৩৫]
দলীল :
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : ﻓﺮﺽ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ অর্থাৎ, হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) আবশ্যক করেছেন [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৩]
♦যাদের উপর সাদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক: (কে ফিতরা দেবে?)
সাদাক্বাতুল ফিতর সক্ষম মুসলমান নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, প্রাপ্ত বয়স্ক-অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের জন্য আদায় করা আবশ্যক। দলীল হচ্ছে-
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺮَﺽَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﻤَﺮٍ ﺃَﻭْ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺷَﻌِﻴْﺮٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤُﺮِّ ﻭَﺍﻟْﻌَﺒْﺪِ ﻭَﺍﻟﺬَّﻛَﺮِ ﻭَﺍﻷُﻧْﺜَﻰ ﻭَﺍﻟﺼَّﻐِﻴْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻜَﺒِﻴْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴْﻦَ ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﻬَﺎ ﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩَّﻯ ﻗَﺒْﻞَ ﺧُﺮُﻭْﺝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ .
ইবনে ওমর রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ছা‘ পরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিৎর হিসাবে ফরজ করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’। [সহীহ বুখারী ১৫০৩, ১৫০৪, ১৫০৭, ১৫০৯, ১৫১১, ১৫১২]
অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম পরিবারের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। পরিবারের প্রত্যেকেরই যদি আলাদা সম্পদ থাকে তবে ব্যক্তিগত ভাবে অন্যথায় পরিবারের প্রধান কর্তা সবার পক্ষ থেকে আদায় করে দেবেন।
ঈদের দিন সকালেও যদি কেউ মৃত্যুবরণ করেন, তার জন্য ফিৎরা আদায় করা ফরয নয়। আবার ঈদের দিন সকালে কোন বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হ’লে তার পক্ষ থেকে ফিৎরা আদায় করা আবশ্যক। [মিরআত ৬/১৮৫]
♦ যাদেরকে সাদকাতুল ফিতর প্রদান করা হবে- (কে ফিতরা পাবে?)
এ ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।স্কুল অব হানাফী থটের (হানাফী মাযহাবের) ফাতওয়া অনুযায়ী যাকাতের যে সমস্ত খাত রয়েছে সে সকল খাতে সাদকাতুল ফিতর প্রদান করা যাবে। আর ইমাম মালেক র. ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া র. এবং আরবের উলামায়ে কেরাম এর মতে সাদকাতুল ফিতর শুধুমাত্র গরীব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিকে প্রদান করা হবে।
(আমি মনে করি সাদকাতুল ফিতর ফকির ও মিসকিনকে দেয়াই উত্তম। তবে যদি তাদের না পাওয়া যায় তবে যাকাতের অন্য খাতে ব্যয় করা যেতে পারে। -সম্পাদক)
♦ সাদকাতুল ফিতর কখন আদায় করতে হবে?
সর্বোত্তম সময় হচ্ছে ঈদের সালাতের পূর্বে। তবে রামাদ্বানে অগ্রিম দিয়ে চাইলে এটাও জায়েয আছে। তবে ঈদ্যে দিন থেকে বিলম্বিত করা মাকরুহ।
♦ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা :
বেতনভুক্ত কাজের লোকের পক্ষে ফিতরা প্রদান করা মালিকের উপর আবশ্যক নয়। তবে মালিক ইচ্ছে করলে কাজের লোককে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন। তবে তিনি বেতন বা পারিশ্রমিক হিসেবে ফিতরা প্রদান করতে পারবেন না ।
♦ কী দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে?
১. ১সা খাদ্যদ্রব্য
২. ১সা যব
৩. ১সা খেজুর
৪. ১সা পনীর
৫. ১সা কিসমিস
৬. অর্ধ সা গম
দলীল: عن أَبي سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيب.
অর্থাৎ, আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২১৭৩, সহীহ বুখারীর ১৫০৬ নং হাদীসও একই মর্মার্থ বহন করে]
أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث مناديا ينادي في فجاج مكة : ألا إن صدقة الفطر واجب على كل مسلم، ذكر أو أنثى، حر أو عبد، صغير أو كبير، مدان من قمح، أو صاع مما سواه من الطعام.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে-জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর সদকায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্ত্ত। [তিরমিযী ১/৮৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিগত হওয়ার পরে মুআবীয়া রাঃ -এর খেলাফতে অনেকে গম দ্বারাও ফিতরা দিতেন। [হহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৮]
অর্ধ সা গমের ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে অনেক সালফে সালেহীন অর্ধ সা গম দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করেছেন।
♦ সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত? একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কতটুকু পরিমাণ সাদকা আদায় করতে হবে?
খাবার, পনির, কিশমিশ, খেজুর, ও যবের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক সা‘ এবং গমের ক্ষেত্রে অর্ধ সা’ একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে। ‘সা’ হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওযন করার পাত্র। ‘সা’ সমপরিমাণ ওজন কত? এ বিষয়ে ফুক্বাহাদের মধ্যে তিনটি মত পাওয়া যায়:
১. ২০৪০ গ্রাম
২. ২৪০০ গ্রাম
৩. ৩৩০০ গ্রাম
স্কলু অব হানাফী থটে ৩৩০০ গ্রামের মতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
♦ সাদাকাতুল ফিতর সংক্রান্ত জরুরী কিছু মাসআলা
হাদীসে উল্লেখ্য খাবার গুলোর পাশাপাশি যেকোনো প্রকার খাবার দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে। কারণ হাদীসে খাবারের কথা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিজের দেশীয় খাবার ব্যবহার করা যাবে। আর এটাই উত্তম।
♦ টাকা দিয়ে কি সাদকাতুল ফিতর আদায় হবে?
এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য না দিয়ে এটার মূল্য দিয়ে আদায় করা যাবে কি না এ ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
ফুক্বহায়ে কেরামের বড় একটি অংশের মতে অর্থ নয় খাদ্য সামগ্রী দিয়েই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। তাদের মতে যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অর্থ দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করার বর্ণনা নেই তাই এটা করা যাবে না।
অপর মত হল- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অর্থের অতি সহজলভ্যতা ছিল না। তাই যুগের পরিবর্তনে দরিদ্রদের সহযোগিতা ও সহজীকরণের জন্য এবং তাদের উপকারের স্বার্থে অর্থ দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করার বর্ণনা উমর বিন আব্দুল আজীজ র. হাসান বসরী র. সুফিয়ান সাওরী, ইমাম আবু হানিফা ও স্কুল অব হানাফী থটের ফুক্বাহাগণ এবং ইবনে তাইমিয়া র. থেকে পাওয়া যায়। সৌদিআরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সদস্য শাইখ আব্দুল্লাহ মুতলাক অর্থ দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় বৈধ বলেছেন।
(যারা সাদকাতুল ফিতর নেবে তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী কল্যাণকর হলে এগুলোই দেয়া হবে। আর অর্থ কল্যাণকর হলে এটা দেয়ার সুযোগও আছে। অর্থ দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে না বলার। সুযোগ নেই। -সম্পাদক)
♦ আপনি কোন মানদণ্ডে সাদকাতুল ফিতর আদায় করবেন?
হাদীস থেকে সাদকাতুল ফিতরের ৬টি মানদণ্ড পাওয়া যায়। একেকটার মূল্য একেক রকম। গমের দাম ৭০ টাকা আর পনিরের দাম ২২০০টাকা। এমতাবস্থায় সবচেয়ে দামি উপাদানের অনুপাতে সাদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম এভাবেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। আমাদের মধ্যে যাদের আর্থিক সক্ষমতা ভাল তারা সবচেয়ে দামী যে উপাদান সেটা দিয়ে আদায় করবেন। আর যার সক্ষমতা কম হবে তিনি তার অবস্থা অনুযায়ী ৬টি উপাদানের যেকোনো একটিকে নির্ধারণ করে সাদকাতুল ফিতর আদায় করবেন।
সমাপনী: প্রিয় পাঠক! আশাকরি সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে মোটামুটি পরিস্কার একটি ধারণা পেয়েছেন। আমরা সবাই যেন যথাযথ ভাবে আমাদের স্ট্যাটাস অনুযায়ী সাদকাতুল ফিতর যথা সময়ে আদায় করি। আল্লাহ তায়ালা তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক : মুফতি

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com