সবার চোখ : কে হচ্ছেন মোস্তফাপুর ইউনিয়নের অভিবাবক? ১২ ইউনিয়নের প্রার্থীরা শেষ মুর্থে প্রচার প্রচারনায় ব্যাস্ত
স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রথম বারের মতো ইউপি নির্বাচন দলীয় হওয়ায় আগামী ৪ জুন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোস্তফাপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় বিরাজ করছে উৎসব আমেজ আর আনন্দ। মোট কথা- ইউপি নির্বাচন জমে উঠেছে। নিবার্চন ঘিরে মোস্তফাপুর ইউনিয়ন এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জনের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। চলছে নির্বাচনী পথসভা ও মতবিনিময়। মোস্তফাপুর ইউনিয়ন ছেয়ে গেছে টাঙ্গানো পোষ্টার আর ব্যানারে। দুপুর দুইটার পর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মাইকে প্রচার-প্রচারনা চলছে। সার্বক্ষনিক প্রার্থীরা সময় পার করছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের নিকট প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। এমনকি বসে নেই প্রার্থীদের আতœীয়-স্বজন ও কর্মী সমর্থকরা। মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে কে হবেন সেই সৌভাগ্যবান চেয়ারম্যান সেটাই এখন আলোচিত হচ্ছে ইউনিয়নের বিভিন্ন চায়ের দোকান, মোড় ও ছোট ছোট বাজারসহ সর্বত্র। জয় পরাজয় থাকবেই, তবুও কেউ বসে থাকে না, সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন সবারই থাকে। তাই ইউনিয়নবাসীর মন জয় করতে রাত-দিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী।
চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন-বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ রুমেল আহমদ (নৌকা), তাজুল ইসলাম তাজ (আনারস), সৈয়দ ফয়সল আহমদ (ধানের শীষ)।
সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আসনে ৯জন প্রার্থী প্রতিদন্ধিতায় রয়েছেন তারা হলেন :-
জরিনা বেগম (হেলিকপ্টার), মনোয়ারা বেগম (সূর্যমুখী ফুল), রাবেয়া বেগম(তালগাছ), খুশবা বেগম (মাইক), পারভীন বেগম (কলম), রোসনা বেগম (সূর্যমুখী ফুল), জয়ন্তী রানী দেবী (হেলিকপ্টার), মোছাঃ রিনা বেগম (সূর্যমুখী ফুল), শিবা রানী সূত্রধর (মাইক)।
মেম্বার প্রার্থী ২৯ জন তারা হলেন-
১নং ওয়ার্ডে রোমান আহমদ (ফুটবল), শাকির মিয়া (মোরগ), সৈয়দ শাহেদ আলী (টিউবওয়েল),
২নং ওয়ার্ডে মইন উদ্দিন আহমদ (টিউবওয়েল), জামাল আহমদ (মোরগ),
৩নং ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নাফ (মোরগ), সহিদ আলী (ফুটবল),
৪নং ওয়ার্ডে ছুফীয়ান (ফুটবল), মনসুর আহমদ (ঘুড়ি), রুমন আহমদ (তালা), সৈয়দ কামাল জামান (মোরগ), সৈয়দ জুবের আলী (টিউবওয়েল), সৈয়দ মুজাহিদ আলী (বৈদ্যুতিক পাখা),
৫নং ওয়ার্ডে মোঃ আজাদুর রহমান (মোরগ), ছোবান আলী (ঘুড়ি), সুজন আহমেদ (ফুটবল),
৬নং ওয়ার্ডে ইমরান (টিউবওয়েল), ওয়াছির মিয়া (আপেল),
৭নং ওয়ার্ডে মোঃ আক্কাছ মিয়া (টিউবওয়েল), আবদাল মিয়া (মোরগ), নজরুল ইসলাম (তালা), সুজন আহমদ (ফুটবল),
৮নং ওয়ার্ডে আব্দুল মুহিদ (মোরগ), মজনু মিয়া (ফুটবল), হারুনুর রশীদ (টিউবওয়েল),
৯নং ওয়ার্ডে আবু মহসিন (টিউবওয়েল), অলিউর রহমান (মোরগ), জাবেদ আহমদ (ফুটবল), বিলাল বখস (তালা)।
মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৯৫ জন। তৎমধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৪৬ জন ও মহিলা ৭ হাজার ৮৪৯ জন।
সরেজমিনে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর ৬ নং ওয়ার্ডে গেলে ইব্রাহীম আলী নামের একজন সাধারণ ভোটার জানান, তিনি আনারস প্রতীকে ভোট দেবেন। এছাড়াও পাগুলিয়া এলাকার তারেক মিয়া নামের একজন ভোটার জানান, তিনি আনারস মার্কায় ভোট দেবেন। বাউরঘরিয়া-মুটুকপুর ওয়ার্ডের হাসান আহমদ জানান, তিনি আনারস প্রতীকে ভোট দেবেন। মোস্তফাপুর ও জগৎসী ওয়ার্ডের সালমা বেগম ও রুপন মিয়া জানান, তারা নৌকায় ভোট দেবেন। হিলালপুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনির মিয়া জানান, তিনি ধানের শীষে ভোট দেবেন।
আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ রুমেল আহমদ জানান, নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। এবার তিনি দলীয় প্রতীক (নৌকা) নিয়ে লড়ছেন। তবে আওয়ামীলীগ মনোনীত এই প্রার্থী এবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। বিগত নির্বাচনে জয়ী হয়ে এবার নৌকা মার্কা নিয়েও জয়ের দ্বারা অব্যাহত রাখতে চান তিনি। নির্বাচনে জয়ের পর থেকে তিনি এ পর্যন্ত ইউনিয়নবাসির সুখে-দুঃখে পাশে আছেন এবং আগামীতেও থাকবেন। তিনি ইউনিয়নের অসমাপ্ত কাজগুলি সমাপ্ত করতে চান, শিক্ষার হার বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেবেন এবং আইনশূংখলার উন্নয়ন করতে চান বলে জানান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন তাজুল ইসলাম তাজ। সর্বস্তরের মানুষ ও নেতাকর্মীরা মাঠে ভাল ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে। সব মিলিয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন তাজুল ইসলাম তাজ। তিনি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে কোমর বেঁধে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তাজুল ইসলাম তাজ জানান, তিনি গরীব, দুঃখী মেহনতি মানুষের পাশে থেকে সেবা করতে চান। ইউনিয়নের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মোস্তফাপুর ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করতে চান, মোস্তফাপুর ইউনিয়নকে তিনি বাংলাদেশের মধ্যে মডেল ইউনিয়ন উপহার দিতে চান। তাই ইউনিয়নবাসি আগামী ৪ জুন তাকে ভোট দিয়ে জয়ের মালা পরাবেন বলে তিনি আশাবাদী।
বিএনপি মনোনীত চেয়াম্যান প্রার্থী সৈয়দ ফয়সল আহমদ জানান, আগামী ৪ জুন মোস্তফাপুর ইউনিয়ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তিনি চেয়ারম্যান হবেন বলে আশাবাদী। বর্তমানে মোস্তফাপুর ইউনিয়নে কোন উন্নয়ন হয়নি, তাই তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতোমধ্যে তার সাথে থেকে যে সব নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এভাবে হুমকি দিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতংক সৃষ্ঠি করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তাই সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে আগামী ৪ জুন মোস্তফাপুর ইউনিয়ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র, আওয়ামীলীগ, বিএনপির মধ্যে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে কে মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে জয়ের মুকুট পরবেন তার জন্য ইউনিয়নবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৪ জুন পর্যন্ত।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৩, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২৩ ও পুরুষ সদস্য পদে ৪২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতায় রয়েছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৭ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৯২ হাজার ৯৩৬ জন। আর মহিলা ৯২ হাজার ৬৮১ জন।
৪ জুন নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ মে শুত্রুবার প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে পুরোধমে মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীর। লাগাতার বৃষ্টি, প্রতিকূল পরিবেশ ও নি¤œাঞ্চলে বন্যা থাকার পরেও প্রচারণা থেকে এক মূহুর্তের জন্য বিরত থাকছেন না তারা। নিজেদের পক্ষে জনমত তৈরি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। সমর্থকদের নিয়ে গ্রাম-অঞ্চলের মেঠেপথে প্রচারণা করতে দেখা যায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে নির্বাচনী আলাপ।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে চুড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন :-
১ নং খলিলপুর ইউনিয়নে অরবিন্দু পাল (আওয়ামীলীগ) রাজা মিয়া (বিএনপি), জুয়েল আহমদ (জাতীয় পার্টি), আবু মিয়া চৌধুরী (স্বতন্ত্র)।
২ নং মনুমুখ ইউনিয়নে এমদাদ হোসেন (আওয়ামীলীগ) খালিসুর রহমান (বিএনপি), আশিকুর রহমান (স্বতন্ত্র), আব্দুল হক সেফুল (স্বতন্ত্র), আজিজুল হক (স্বতন্ত্র)।
৩ নং কামালপুর ইউনিয়নে আপ্পান আলী (আওয়ামী লীগ), ফয়সল আহমদ (বিএনপি), আব্দুল মালিক (জাতীয় পার্টি), আলাউর রহমান (স্বতন্ত্র), আক্তারুজ্জামান (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ খুরশীদ (স্বতন্ত্র), মাসুক মিয়া (স্বতন্ত্র)।
৪ নং আপার কাগাপলা ইউনিয়নে মোঃ আমির উদ্দিন (আওয়ামীলীগ) জি এম এ মুক্তাদির রাজু (বিএনপি), আব্দুল সালাম (স্বতন্ত্র), আব্দুল মতিন (স্বতন্ত্র)।
৫ নং আখাইলকুড়া ইউনিয়নে শেখ বদরুজ্জামান চুনু (আওয়ামী লীগ), শামিম আহমদ (বিএনপি), সেলিম আহমদ (স্বতন্ত্র), ফখরুুজ্জামান (স্বতন্ত্র), খয়েজ আহমদ (স্বতন্ত্র)।
৫ নং একাটুনা ইউনিয়নে আবু সুফিয়ান (আওয়ামীলীগ), মুহিতুর রহমান হেলাল (বিএনপি), নজরুল রহমান (স্বতন্ত্র)।
৭ নং চাঁদনীঘাট ইউনিয়নে সৈয়দ মশাহিদ আলী (আওয়ামীলীগ), মোশাররফ হোসেন বাদশা (বিএনপি) সাদিকুর রহমান (স্বতন্ত্র), আখলাই মিয়া (স্বতন্ত্র)।
৮ নং কনকপুর ইউনিয়নে জুবায়ের আহমদ (আওয়ামীলীগ), মাসুকুর রশিদ চৌধুরী (বিএনপি) রেজাউর রহমান চৌধুরী (স্বতন্ত্র), ইঞ্জিণিয়ার জহিরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)।
৯ নং আমতৈল ইউনিয়নে সুজিত চন্দ্র দাস (আওয়ামীলীগ), রানা খান শাহিন (বিএনপি), এম এ মুহিত (স্বতন্ত্র)।
১০ নং নাজিরাবাদ ইউনিয়নে আশিকুর রহমান (আওয়ামীলীগ), আশরাফ উদ্দিন আহমদ (বিএনপি), সৈয়দ এনামুল হক রাজা (স্বতন্ত্র),মাহমুদুর রহমান (স্বতন্ত্র)।
১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নে মোঃ তাজুল ইসলাম তাজ (স্বতন্ত্র) রুমেল আহমদ (আওয়ামীলীগ), ফয়ছল আহমদ (বিএনপি)।
১২ নং গিয়াসনগর ইউনিয়নে গোলাম মোস্তফা (আওয়ামী লীগ), জমসেদ (বিএনপি), কামরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), আব্দুল মুকিত (স্বতন্ত্র), রানু মিয়া (স্বতন্ত্র), সাজ্জাদ আহমদ সুইট (স্বতন্ত্র), জিলা মিয়া (স্বতন্ত্র)।
মন্তব্য করুন