সবার জন্য শিক্ষা, শিক্ষার জন্য সবাই বাস্তবায়নের এখনই সময়

May 8, 2017,

ভূমিকা:World leaders have pledged to ensure that all girls and boys can complete free, equitable and quality primary and secondary education by 2030. But there are still around 263 million children and young people who are not in school.  -Global Campaign for Education.

এ রকম এক পরিস্থিতিতে মানসম্পন্ন শিক্ষার পক্ষে সচেতনতা বাড়াতে ও সবার জন্যে শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২৩-২৯ এ্রপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘শিক্ষা বিষয়ক গ্লোবাল অ্যাকশন সপ্তাহ ২০১৭’। শিক্ষা সভ্যতা ও অগ্রগতির ধারক ও বাহক। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। শিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ একটি রাষ্ট্রকে নিয়ে যেতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। তাই এমডিজির মত এসডিজিতেও মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের জন্যে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা।
এমডিজি থেকে এসডিজি:
‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এমডিজি অর্জনের সময় শেষ হয়েছে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এর পরদিন থেকে শুরু হয়েছে ১৫ বছর মেয়াদি ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এসডিজি পূরণের স্বপ্নযাত্রা। জাতিসংঘের ভাষাতেই বাংলাদেশ এমডিজির লক্ষ্য অর্জনে অনুসরণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। ৮টি লক্ষ্যের অন্তর্ভূক্ত ২১টি টার্গেটের মধ্যে ১৩টি নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান ও আফগানিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে এমডিজির ‘রোল মডেল’-এ পরিণত হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে ১৯৩টি সদস্য দেশ ‘রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী: ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি)’ অনুমোদন করেছে। প্রায় ৯০ লাখ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত ১৭টি লক্ষ্য ও ১৬৯টি টার্গেট সম্বলিত এসডিজিতে চতুর্থ লক্ষ্য হিসাবে ‘সবার জন্য একীভূত এবং সাম্যভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ প্রসার’কে নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিক্ষা বিষয়ক গ্লোবাল অ্যাকশন সপ্তাহ ২০১৭:
২০০০ সালের এপ্রিলে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিক্ষা সম্মেলনে সবার জন্যে শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত Dakar Declaration–এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতি বছর সারা বিশ্বে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নেটওয়ার্ক ও সিভিল সোসাইটি কোয়ালিশন এবং টিচার্স ইউনিয়নের অংশগ্রহণে Global Campaign for Education (GCE)-এর উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে Global Action Week on Education (GAWE) উদযাপিত হয়ে আসছে। এসডিজি-৪ অর্জনে সরকারের ও বিভিন্ন মহলের জবাবদিহিতা কেমন হওয়া উচিত সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৭ সালের জন্যে GAWE–এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে Accountability for SDG-4 and Citizen Participation এই প্রতিপাদ্যের আলোকে এবারের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- STAND UP FOR EDUCATION: TIME TO DELIVER. যার ভাবানুবাদ হলো-সবার জন্য শিক্ষা, শিক্ষার জন্য সবাই, বাস্তবায়নের এখনই সময়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারেণে সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং অংশীদারিত্বের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা অধিকার নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রের দায়িত্বের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, বিশেষ করে সিভিল সোসাইটি, শিক্ষক, কর্পোরেট সেক্টর, গবেষক ও যুবদের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে জিসিই’র সমন্বয়ক সংস্থা হিসেবে গণসাক্ষরতা অভিযান এবারও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা, শিক্ষক সংগঠন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রভৃতির সাথে সম্মিলিতভাবে দেশব্যাপী শিক্ষা বিষয়ক গ্লোবাল অ্যাকশন সপ্তাহ ২০১৭ পালন করছে।
সমকালীন বিশ্ব প্রেক্ষাপট:
সারা বিশ্বে প্রায় ৫৩৫ মিলিয়ন শিশু (প্রতি চারজনে প্রায় ১জন) বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশের ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহের শিকার হয়ে শিক্ষাসহ অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, এসডিজি-৪ এর টার্গেটগুলোর মাধ্যমে ‘সবার জন্যে মানসম্মত শিক্ষা’ নিশ্চিত করতে এখন থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। উপরন্তু এসডিজি বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর অর্থায়নের বিষয়ে তেমন কোন প্রতিশ্রুতি না দেওয়ার বিষয়টি কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ জন্যেই এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ বিষয়ে ক্যাম্পেইন করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর জন্যে প্রয়োজন হবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারকে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা মনে করিয়ে দেয়া। শিক্ষার উন্নয়নে সুশীল সমাজের মনিটরিংয়ের উপরও যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।এসডিজি-৪ এর প্রতিপাদ্য ‘বাদ যাবে না কেউ’ বাস্তবায়নে যুব সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কেউই যাতে শিক্ষা থেকে বাদ না পড়ে সে বিষয়ে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কৌশল নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করারও প্রয়োজন রয়েছে।
সমকালীন বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট:
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রথমেই আমাদের অগ্রগতির কথাগুলো বলে নেয়াই ভাল। গত এক দশকে শিক্ষার সর্বস্তরেই চোখে পড়ার মত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একসময় বিপুল সংখ্যক কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেতো না, পাবলিক পরিক্ষায় ছিল নকলের ছড়াছড়ি, ফল প্রকাশে অনেক দেরি হতো, ফল প্রকাশের পর দেখা যেতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, স্কুলে যথাসময়ে পাঠ্যবই পেতো না শিক্ষার্থীরা, লেখাপড়া বন্ধ করে বাল্যবিয়ের করালগ্রাসে নিপতিত হতো অনেক কিশোরী। সেই বিপর্যস্থ অবস্থা থেকে এখন আমাদের অনেক উত্তরণ ঘটেছে।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার বিশ্বে সবচেয়ে কম ছিল। তখন আমাদের ৮০ শতাংশ নারী ছিল অশিক্ষিত। অথচ প্রায় শতভাগ মেয়েই এখন স্কুলে যাচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় বিশ্বে নারীর অংশগ্রহণ যেখানে ৪৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের মেয়েদের অংশগ্রহণ ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রকৃত ভর্তি হার ৯৭.৭ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলে ৯৬.৬ ও মেয়ে ৯৮.৮ শতাংশ। মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এই অর্জনকে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সরকার ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের জন্যে বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাদরি(ওঁরাও) ও গারো এই ৫টি ভাষার বইসহ শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা, ভোকেশনাল ও প্রতিবন্ধীদের জন্যেও বইসহ শিক্ষাসামগ্রী দেয়া হয়েছে। উপবৃত্তি এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম প্রবর্তন শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
পিছিয়ে আছি যেখানে:
শিক্ষা খাতে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। প্রতিবেশি দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। জিডিপির হিসাবেও পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা জিডিপির ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। অথচ ইউনেস্কো ঘোষিত স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ, যা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ। অথচ পার্শ¦বর্তী ভারতে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, শ্রীলংকা ও মালয়েশিয়ায় ৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মালদ্বীপে ৮ শতাংশ হারে রয়েছে জিডিপির বরাদ্দ । আরও আশ্চর্য লাগে, যখন সেনেগাল শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ৪০ শতাংশ ও জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কেনিয়া জাতীয় বাজেটের ৩১ শতাংশ ও জিডিপির ৭ শতাংশ বরাদ্দ দেয়। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী একবার দুঃখ করে বলেছিলেন,‘অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেতু বানানোর জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতে পারেলে মানবসম্পদ তৈরির প্রধান সেতু শিক্ষার জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতে পারবেন না কেন ?’ এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও দেখা গেছে জাতীয় সংসদে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সাফল্য এলেও উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয ও কারিগরী পর্যায়ে ভর্তির হার যেমনি কম, তেমনি ঝরে পড়ার হারও অনেক বেশি। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (বেনবেইস)-এর তথ্য মতে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তির হার ৪৪ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরী শিক্ষায় এই হার মাত্র ১০ শতাংশ।
শিক্ষার চালচিত্র: মৌলভীবাজার প্রেক্ষিত
মৌলভীবাজার জেলায় ১৯৮২ সালে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ২২%। ২০০১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪২.০৬%, ২০১১ সালের আদম শুমারীতে এটা বেড়ে হয় ৫১.১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, মৌলভীবাজার জেলায় বর্তমানে শিক্ষার হার ৬১.০২ শতাংশ, জাতীয় পর্যায়ে এই হার ৬৩.৬ শতাংশ।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় ১৮০টি বিদ্যালয়, ৬৯টি মাদ্রাসা, ২৫টি কলেজ এবং ১৩টি স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯৭৯ জন শিক্ষক এবং ২১৯২৫৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মৌলভীবাজার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় মোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৪৮টি, পিটিআই ও শিশু কল্যান ট্রাস্টসহ এই সংখ্যা ১০৫০। এছাড়াও কেজি স্কুল রয়েছে ৩৬৭টি, এবতেদায়ী ৭৮টি, উচ্চ মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ঠ ৭০টি, আনন্দ স্কুল ২০৮টি, এনজিও কেন্দ্র ৫৫৯টি ও এনজিও পূর্ণ স্কুল ১৩টি। নীট ভর্তির হার ৯৯.৭৬ (মেয়ে-৯৯.৭৮, ছেলে-৯৯.৭৫) শতাংশ এবং ঝরে পড়ার হার ১৪ শতাংশ। চা বাগানে ৬০টি এবং হাওরে রয়েছে ৩৪টি স্কুল। জেলায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩,৪৬৮জন। ১০০৪টি প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৬৯৯ জন প্রধান শিক্ষক এবং ৪৮১৫টি সহকারী শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪৫৩৬ জন শিক্ষক। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফ্উান্ডেশন ৭৫৪টি ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ১৯৬টি শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর ইএলসিডি প্রকল্পের আওতায় চা বাগান সমূহে রয়েছে ১২৯টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র।
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌলভীবাজারের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের পরিচালনায় রয়েছে ৩২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৫৯টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। এ ছাড়াও এফআইভিডিবি, সিডা, উন্নয়ন সহায়ক সংস্থা, আরডিআরএস, ম্যাক বাংলাদেশ, শ্রীমঙ্গল ফাউন্ডেশন, ওয়াপ, সাঁকো, প্রচেষ্টা, ভি ডি ও, মহিলা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, এমসিডাসহ আরো কযেকটি এনজিও শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করছে।
মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় মোট গ্রামের সংখ্যা ২১২৮ টি। এর মধ্যে ৬০১টি গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বর্তমানে কমপক্ষে ১৮১টি গ্রামে জরুরী ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৪ অর্জন কঠিন হয়ে যাবে।
মৌলভীবাজার জেলায় চা-বাগান রয়েছে ৯২টি, ফাঁড়ি বাগানসহ এর সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে হাওর আর খাসিয়া পুঞ্জির মতো আরো অনেক দূর্গম এলাকা। এসব এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক। হাওর, চা-বাগান ও দূর্গম এলাকার জন্যে বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণসহ এসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিশুকে উপবৃত্তির আওতাভুক্ত করতে হবে।
যেতে হবে বহু দূর:
আমাদের দেশে অনেক শিশু আছে, যাদের রাতে থাকার জায়গা নেই। এরা বিভিন্ন স্টেশনসহ যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে থাকে। দোকান, বাসা, ওয়ার্কশপ ও যানবাহনে এরা মানবেতরভাবে বেড়ে উঠে। এদের কোন লেখাপড়া নেই এবং প্রায়শই এরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এদেরকে খুঁজে বের করে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা প্রযোজন। এদের ঠিকমত বেড়ে ওঠার সুযোগ না দিলে এরা একসময় জাতির দায় হবে। বিশ্বে শতকরা ২৬ভাগ মানুষের বয়স ১৫ বছরের নিচে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই শিশু। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর কাঙ্খিত উন্নয়ন ব্যাতিরেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিডি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব।
একদিকে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন, অন্যদিকে পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষার প্রবর্তন-এসব যে আমাদের কোমলমতি শিশুদের জন্যে কতটা যৌক্তিক, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। পর্যাপ্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাধ্যমে হয়তো শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়ন সম্ভব, কিন্তু অতিরিক্ত পড়াশুনা ও এতগুলো পরীক্ষা শিশুদের মধ্যে যে ভীতির সৃষ্টি করছে তা দূর হবে কি করে ? এতে করে শিশুরা সহনশীল ও সহিষ্ণু হয়ে বেড়ে উঠতে পারছে না। পরীক্ষা নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা মনে হয় বিশ্বের আর কোথাও হয়না। আমাদের পার্শ¦বর্তী ভারতে ১০ম শ্রেণির আগে সব পাবলিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিলেবাস তৈরি, কারিকুলাম প্রবর্তন এবং পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আমাদের দেশে যত অর্থ ব্যয় হয়, সে পরিমাণ অর্থ যদি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য ও ভৌত অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্যে ব্যয় করা যেত তাহলে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন আরো সহজ হতো। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের বেতন যাতে অভিভাবকদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। মানসম্মত শিক্ষার জন্যে প্রয়োজন পর্যাপ্ত মানসম্মত শিক্ষকের।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ শিক্ষাসহ ১২টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যে ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে তাতে শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার এই দেশে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি হোমওয়ার্ক করতে হয় না। ১৬ বছর বয়সে গিয়ে মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
শিক্ষা আইন খসড়া প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছিল ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এত দিনে পঞ্চাশের অধিক সভা করেও শিক্ষা আইন এখনও চুড়ান্ত করা যায়নি। সরকার দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীদের সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষার সামগ্রিক বিষয়ে একটি নির্ভুল আইন করার চেষ্টা করছে বলেই হয়তো ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে ‘শিক্ষা আইন‘ শেষ করতে এতটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে মানসম্মত শিক্ষার প্রয়োজনে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র-৪ অর্জনে আইনটি যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে আমাদের জন্যে ততই মঙ্গল।
এসডিজি অর্জনে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। টেকসই ও প্রকৃত উন্নয়ন কখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ব্যতিত অর্জন করা সম্ভব নয়। এই পরিকল্পনায় সমতা, জবাবদিহিতা ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্টান গড়ে তোলার মতো লক্ষ্যপূরণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।
চ্যালেঞ্জ যেখানে:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সার্বজনীন ও প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র সমান সুযোগের ভিত্তিতে শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকারকে স্বীকার করবে এবং এই অধিকারকে বাস্তবায়ন করবে”। এই সনদের ২৮(৩) অনুচ্ছে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রসমূহ বিশ্বব্যাপী অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা দূর করার জন্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে জোরদার ও উৎসাহিত করবে”।
এসডিজি গ্রহণের প্রায় দু’বছর আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে শতাধিক দেশের প্রায় এক হাজার ২০০ শিক্ষাবিদ, করপোরেট, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ নিয়ে কাতারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন-ওয়াইজ। আশ্চর্যজনকভাবে এসডিজি গ্রহণের আগেই কিভাবে যেন সেদিন শিক্ষার টেকসই উন্নয়নের জন্যে সামাজিক দায়বদ্ধতাও একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উচ্চারিত হয়েছিল। এই সামিটের লক্ষ্য ছিল-শিক্ষাব্যবস্থা কিভাবে সৃষ্টিশীলতা, সহযোগিতামূলক কর্মোদ্যোগও অংশীদারে রূপান্তর করা যাবে, তা খুঁজে বের করা, যাতে শিক্ষা শুধু ব্যক্তিক ও কর্মক্ষেত্রকেন্দ্রিক হবে না, হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সেদিন সামাজিক নেটওয়ার্কিংকে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
এমডিজি ছিল সহায়তানির্ভর। এসডিজিতে বাইরের অর্থায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারো সহায়তার আশায় বসে না থেকে নিজের সীমিত সম্পদ আর বিপুল কর্মক্ষম জনবলকে কাজে লাগিয়ে সকল প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কাঙ্খিত এ সাফল্য অর্জন করতে হবে। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং পরবর্তী সময়ে অষ্টম ও নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সরকার অর্থায়নকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রিজার্ভের অর্থ উন্নয়নের লক্ষ্যে কিভাবে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য ট্রিলিয়ন ডলারের প্রযোজন হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৭ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে ৪৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই লক্ষমাত্রা অর্জনে কাজ করছে। এসডিজি মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে নিজ উদ্যোগে অনলাইন টুল তৈরি করেছে। এই টুলের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের প্রতিটি কর্মকান্ড নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে।
সুশীল সমাজকে লাগাতে হবে কাজে:
সুশীল সমাজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত করা গেলে এবং পাশাপাশি শিক্ষক ও এসএমসি সদস্যদের বেশি বেশি হোম ভিজিট বাড়াতে পারলে শিক্ষা ক্ষেত্রে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জিত হবে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিগণকে স্কুলের মিড-ডে মিলের ব্যাপারে উৎসাহিত করা গেলে সবচেয়ে লাভবান হবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এবার মৌলভীবাজার জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ একটা অসাধারণ কাজ করে ফেলেছে। স্কুলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে স্কুল ভবনগুলোকে নানা রঙে সাজিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে তোলা হয়েছে। সমাজের নেতৃস্থানীয় মানুষের মাধ্যমে কাজটা আদায় করতে গিয়ে শিক্ষকদের অনেক কষ্ট হলেও শিশুদের জন্যে একটা স্বপ্নপূরী বানাতে পেরে তাঁদের আত্মতৃপ্তি। শিক্ষা ক্ষেত্রে এ রকম আরো নতুন নতুন ইনোভেশন শিক্ষাকে জনমুখী করে তুলবে। শিক্ষাই বদলে দেবে আমাদেরকে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই হয়তো একটি উন্নত দেশের অধিবাসী হিসেবে গর্ব ভরে আমরা আমাদের পরিচয় দিতে পারবো।
সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরির লক্ষ্যে এসএমসি বা স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সক্রিয় করতে হবে। তাঁদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ, শিশুদের উপস্থিতি, দরিদ্র শিশুদের জন্যে পোষাক ও আর্থিক সহায়তা, প্যারা শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি কাজগুলো আদায় করে নেয়া যেতে পারে। শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি(পিটিএ) গঠনের মাধ্যমে শিশুদেরকে আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজের অন্যান্য করপোরেট সংস্থা, সুধীজন ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্টান যদি শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা সহায়তা প্রদান করে তবে তারা উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় সম্পৃক্ত হতে পারবে।
শেষ কথা:
পরিশেষে নির্দ্বিধায় বলা যায়, এসডিজি-৪ বাস্তবায়নের জন্যে তিনটি বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হলো:   যথাযথ পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত অর্থায়নের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা এবং বিনামূল্যে মানসম্মত ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের শীর্ষে। ক্ষুদ্র দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন ও কাঙ্খিত টেকসই উন্নয়ন সরকারের পক্ষে দুরূহ হলেও তা সম্ভব- এ বিশ্বাস আমাদের সকলের। জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কারপ্রাপ্ত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে। এর জন্যে প্রয়োজন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করা। সর্বস্তরের সম্মিলিত সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এসডিজি-৪ অর্জনে সফল হবেই- এই প্রত্যাশা এবং বিশ্বাস আমাদের সকলের।
তথ্যসূত্র:
১.    ওয়েবসাইট:

  1. Global Campaign for Education

২.

  1. Monitoring the Situation of Vital Statistics, BBS, 2015

৩.    জেলা শিক্ষা অফিস, মৌলভীবাজার প্রতিবেদন, এপ্রিল ২০১৭
৪.    জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, মৌলভীবাজার প্রতিবেদন, এপ্রিল ২০১৭
৫.    বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (বেনবেইস) প্রতিবেদন ২০১৬

জসীম উদ্দীন মাসুদ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, মৌলভীবাজার:

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com