(ভিডিও সহ) সাজা ভোগের ১৬ মাস পর মৌলভীবাজার কারাগার থেকে ভারতীয় নাগরিক মা ও ছেলে মুক্ত

May 27, 2017,

স্টাফ রিপোর্টার॥ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সাজা ভোগের ১৬ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ভারতীয় দুই নাগরিক মা ও ছেলে। ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করার অপরাধে পুলিশ আটক করে পরদির জেল হাজতে প্রেরণ করে।

মৌলভীবাজার জেলা কারগার  সূত্রে জানাযায়, ২৭ মে শনিবার সকাল ১০ টায় জয়ন্তী বিশ্বাস ও প্রাণতুষ বিশ্বাসকে মৌলভীবাজার কারাগার থেকে পুলিশ নিয়ে যায়। বিকেল ৩টার দিকে বি-বাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফএর কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৌলভীবাজার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে মা জয়ন্তী বিশ্বাস তার মেয়ে রতœাকে জড়িয়ে  ও প্রাণতুষ বিশ্বাস বোনকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেন।

মা ও ছেলে ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা দিয়ে বিনা পাসপোর্টে প্রবেশ করে পূনরায় ভারত যাওয়ার সময় পুলিশ আটক করে জেল হাজতে ২৩ ফেব্রয়ারী প্রেরণ করে। পরে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল আদালত তাদেরকে ১ মাসের কারাদন্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরোও ১০দিনের কারাদন্ড দেয়। কিন্তু উভয় দেশের আইনী জটিলতার কারণে তাদের কারাভোগের মেয়াদ শেষ হয়ে  নির্ধারিত সময়ে তাদেরকে কারাগার থেকে বাহির করা সম্ভব হয়নি। মৌলভীবাজারের জেলা প্রসাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে চিটিপত্র আদান প্রদান শেষে প্রায় ১৬ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এবিষয়ে জেল সুপার মোহাম্মদ আনোয়ারুজ্জামান বলেন, উভয় দেশের আইনী জটিলতার কারণে তাদেরকে সময় মতো মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। দেরিতে হলেও মুক্তি পেয়ে মা ও ছেলে মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
জানাযায় ভারতীয় নাগরীক জয়ন্তী বিশ্বাসের (৫৫) ভারতের করিমগঞ্জ জেলার বাজারিছড়া থানার খাগড়াউড়া গ্রামের অজয় বিশ্বাস এর স্ত্রী। জয়ন্তী বিশ্বাস এর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে রতœা বিশ্বাসের জন্ম ভারতে হলেও বিবাহ সুত্রে তিনি এখন বাংলাদেশের নাগরীক। রতœার শ্বশুরালয় মৌলভীবাজারের ভারতের সীমান্তবর্তী জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নে। মেয়ের জামাই কিরেন্দ্র বিশ্বাস থাকেন প্রবাসে। স্কুল ও কলেজ পড়–য়া দুই ছেলে নিয়ে রতœা বিশ্বাস থাকেন জুড়ীতে। বেশ কয়েক দিন থেকে রতœা নানা কঠিন রোগে ভোগ ছিলেন। নিজের একমাত্র মেয়ের এমন অসুস্থতার খবরে তাকে একনজর দেখতে মন ছটফট করে জয়ন্তী বিশ্বাসের। তাই পাসপোর্ট আর ভিসার অপেক্ষা না করেই ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারত থেকে দালাল মারফতে সীমান্ত অতিক্রমকরে বাংলাদেশে আসেন। ফেরার পথে ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পুলিশের হাতে আটক হন জয়ন্তী বিশ্বাস ও তার পুত্র। বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আইনী প্রদক্ষেপ শেষে তারা মুক্তি পেয়ে জন্মভুমি ভারতে যান।
জানাযায় মৌলভীবাজার চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাট্রিজের উদ্দ্যোগে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গেল বছরের ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ভারত বাংলাদেশ মৈত্রি উৎসব ও ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য পর্বে বিষয়টি উঠে আসে। সাজা শেষ হওয়ার পরও ভারতীয় নাগরীক মা ছেলের হাজত বাসের মানবিক বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার সদর পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান উপস্থিত দু’দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করে বক্তব্য দেন। এই মানবিক মর্মস্পর্শী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাণিজ্য,শিক্ষা ও আইন মন্ত্রী শ্রী তপন চক্রবর্তীসহ ভারত, সম্মেলনের ভারতীয় কো-অর্ডিনেটর সাংবাদিক মোহিত পাল ও বাংলাদেশের সাংবাদিক, শিল্পী,কবি-সাহিত্যিক,ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ ও দু দেশের সরকারের জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বক্তব্যে এই বিষয়টি ইঙ্গিত করেই বলেন ভারতের নাগরীকদের বিনা কারণে একটি মুর্হুত আমরা আটক রাখতে চাইনা এবিষয়ে আমারা যথেষ্ট আন্তরিক।
মৈত্রি উৎসব ও সম্মেলন শেষে ১ জানুয়ারি ২০১৭ সাংবাদিক মোহিত পাল ও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সম্পাদক এস এম উমেদ আলী ও সাংবাদিক মু. ইমাদ উদ দীন মৌলভীবাজার জেলা কারা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই সাথে কারাগারে অবস্থানরত মা ও ছেলের সাথে দেখা করে তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোজখবর নেন। একই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলামের সাথে কয়েকবার সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগেী হলে বিষয়টি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের গোচরে নেয়া হয়।
এদিকে ভারতীয় নাগরিক সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ভারতীয় হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারী রমাকান্ত গুপ্তা ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং তারিখ ফ্যাক্স এর মাধ্যমে আসামের চীফ সেক্রেটারী সহ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নির্দ্দেশ প্রদান করেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। গত ৮ মে ২০১৭ ইং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আসে  শুধু এই দুৃজন বন্দীই নয় মোট ১২ জন বন্দী সাজা ভোগের পরও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা কারাগারে রয়েছে তাদের যেন অবিলম্বে নিজ দেশে প্রেরণ করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com