সাপ্তাহিক তলব বন্ধ, থানায় ব্যবস্থাপকের অভিযোগ মজুরিবৃদ্ধি, ঘর মেরামতসহ নানা দাবি আদায়ে মৌলভীবাজারের চাতলাপুরের চার বাগানে শ্রমিকদের ২য় দিনে কর্মবিরতি অব্যাহত
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের ডানকান ব্রাদার্সের চাতলাপুর ও এর ফাঁড়ি তিনটি বাগানের শ্রমিকরা ২য় দিনের মতো কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। চা বাগানে পাতি উত্তোলনকৃত নারী শ্রমিকদের নির্ধারিত নিরিখ ১ম দফা পাতি ২০ কেজি ও ২য় দফা ১৬ কেজি। এর বিপরীতে শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি পান ৮৫ টাকা। নির্ধারিত পাতি উত্তোলনের পর অতিরিক্ত সময়ে কেজি প্রতি ৫ টাকা হারে প্রদান, ঘর মেরামতসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে আসছেন শ্রমিকরা। এসব দাবি বাস্তবায়নে মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি বুধবারও ২য় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। কর্মবিরতি পালন করার কারনে গত সপ্তাহে কাজের তলব (পেমেন্ট) শ্রমিকদের বুধবার প্রদান করা হয়নি। নিরাপত্তা হীনতার অভিযোগে বাগান ব্যবস্থাপক কুলাউড়া থানায় একটি অভিযোগপত্র প্রদান করেছেন। ফলে কর্মবিরতি পালনকারী শ্রমিকরা পরবর্তী কর্মসূচী অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক কমলা রানী মৃধা, বাসন্তী বাউরী, ঝরনা বাউরী বলেন, অতিরিক্ত কাজে পাতি উত্তোলনে কেজি প্রতি ৫ টাকা প্রদান, ঘর মেরামত, কাজের সময়ে সেকশনে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা, গামছা, টুকরি প্রদানসহ কয়েকটি দাবিতে ব্যবস্থাপকের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। এসব দাবি নিয়ে ২২ এপ্রিল বাগান ব্যবস্থাপক বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়। দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব প্রদান না করলে নারী শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের সাথে পঞ্চায়েতের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোন সমাধা হয়নি। ফলে চাতলাপুর ও ফাঁড়ি পালকিছড়া, তিলকপুর, চুয়াল্লিশ পাট্্রার চা বাগানে নারী শ্রমিকরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। চারটি বাগানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১৭’শ শ্রমিক রয়েছেন। পরবর্তীতে নারী শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা পোষন করে পুরুষ শ্রমিকরাও কর্মবিরতি পালন করেন।
শ্রমিকরা বলেন, ঘর মেরামত, কীটনাশক ছিটানো শ্রমিকদের যড়ঞ্জামাদি প্রদান, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, চা বাগানের বিভিন্ন সেকশন ও টিলাভূমিতে কাজ চলাকালীন সময়ে শ্রমিকদের খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা, পাহাড়ি অঞ্চলে কাজ করতে গেলে বন্যপ্রাণির আক্রমন থাকায় পাহাড়ি এলাকায় কাজ চলাকালীন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান, বিভিন্ন সময়ে চা গাছে বিষাক্ত পোকার আক্রমনে গুরুতর আহত হলে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা এসব দাবি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে নিরিখ বাড়ানোর দাবি জানালে নারী শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন।
এদিকে ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম নিজের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামসুজ্জোহা জানান, ব্যবস্থাপক একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চাতলাপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মাখন বাউরী বলেন, তিন দফা দাবি নিয়ে ব্যবস্থাপকের সাথে আলোচনা করলেও ব্যবস্থাপক অতিরিক্ত পাতি উত্তোলনে মজুরি বাড়াতে রাজি হননি। তাছাড়া বুধবার তলব প্রদান করলে বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে জানালেও ব্যবস্থাপক কর্ণপাত করেননি। ফলে ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবারও চারটি বাগানে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে চাতলাপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে (০১৭১১-৯২২৮১৩) মোবাইল ফোনে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করে কেটে দেন। তবে এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্টের অন্য কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন