সাবরেজিস্ট্রি অফিস স্থানান্তরের প্রতিবাদে রাজনগরে ব্যবসায়ীদের প্রতিকী ধর্মঘট ও মানববন্ধন
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগরে সাবরেজিস্ট্রি অফিস স্থানান্তরের প্রতিবাদে প্রতীকি র্ধমঘট ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সর্বস্থরের মানুষ। একই সাথে এক সপ্তাহ ধরে দলিল লেখকরাও কলম বিরতি পালন করছেন। ফলে জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা ভুগান্তিতে পড়েছেন। অযৌক্তিক অজুহাত দেখিয়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিস স্থানান্তরের চেষ্টার প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে মৌলভীবাজার-বালাগঞ্জ সড়কের রাজনগর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে এ কর্মসূচী পালন করেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান রাজনগর উপজেলায় ১৯৫৩ সালে সাবরেজিস্ট্রি কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে বাজারের আশেপাশে বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া নিয়ে অফিস চলছিল। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে উপজেলা পরিষদের ভিতর আইন মন্ত্রণালয়ের ভবনের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল। ৬৯ বছরেও নিজস্ব কোনো অফিস করতে পারেনি রাজনগর সাবরেজিস্ট্রি অফিস। সম্প্রতি নানা অজুহাতে অফিস অন্যত্র স্থানান্তর করার কাজ শুরু হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মাঝে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এমনকি এ ঘটনায় গত এক সপ্তাহ ধরে দলিল লেখকরাও অনির্দিষ্টকালের জন্য কলম বিরতি পালন করছেন। দলিল লেখকদের দাবি যেখানে অফিসটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে সেখান থেকে ব্যাংক অনেক দূরে। এ কারণে জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বেন। পাশাপাশি দলিল লেখকদেরও জমি রেজিস্ট্রির ফি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। ফলে তারাও ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের আশেপাশের স্থায়ী দোকানগুলোতে দলিল কম্পোজ করা হয়। অফিসটি সরিয়ে নিলে সেখানে দক্ষ কম্পোজার না পাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই কাজে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সাবরেজিস্ট্রার নানা অজুহাত দেখিয়ে অফিস সরানোর চেষ্টা করছেন। কর্তৃপক্ষ ভাড়ায় অন্যত্র অফিস নেয়ার চেষ্টা করছে। অথচ উপজেলা পরিষদের পাশে নতুন ভবন থাকা সত্ত্বেও তিনি সেখানে যেতে চাইছেন না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এঘটনায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের আয়োজনে মঙ্গলবার একঘন্টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মানববন্ধন করা হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়ছল আহমদ, ব্যবসায়ী দেওয়ান মিছবাহুল মজিদ কালাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ ছালেক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহেদুজ্জামান আনসারী মনাই, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়েদুর রহমান ডিপলু, নিবারণ ঘোষ ভজন, রাজনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান সোহেল, আকম মিজানুল হক প্রমুখ। দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হিমাংশু শেখর চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমদ জানান, অফিসটি স্থানান্তর করা হলেও যোগাযোগ ও আমাদের গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রাজনগর বাজারের পাশে কোনো ভবনে অফিস নেয়া হোক। অন্যথায় বৃহস্পতিবার থেকে চলমান তাদের কলম বিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
রাজনগর বাজারের ব্যবসায়ী ওবায়েদুর রহমান ডিপলু বলেন, কয়েক দফা আমরা সাবরেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলেছি। তিনি নানা টালবাহানা করে অফিস স্থানান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জেনেছি। কিন্তু আমাদের কথা শুনছেন না। দাবী না মানলে প্রয়োজনে ব্যবসায়ী সহ সর্বসাধারণকে সাথে নিয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার আজমেরী নির্ঝর বলেন, অফিস স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি লিখিত আদেশ পেয়েছি। এর আলোকে আমরা রাজনগর কলেজ পয়েন্টে একটি ভবন দেখেছি। উপজেলা পরিষদের আশেপাশে উপযুক্ত ভবন না পাওয়ায় আমরা সেখানে স্থানান্তর করতে চাচ্ছি।
মন্তব্য করুন