সৈয়দ মহসীন আলী : এক মহান নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্তসার
মাহবুবুল আলম॥ কোন কোন মানুষের অভাব মানুষ সহজেই কাটিয়ে ওঠে, আবার কারো কারো অভাব সহজেই পূরণ হবার নয়। সে’সব মানুষের দৈহিক মৃত্যু হলেও তাদের নীতি ও আদর্শের মৃত্যু হয়না কখনো। কর্মই মানুষের মাঝে তাদের চিরদিন বাঁচিয়ে রাখে। এমন মানুষ আমাদের দেশ ও সমাজে সবসময় জন্মায় না; শত বছরে একজনই জন্মে। তেমনই একজন মানুষ ছিলেন মৌলভীবাজার কৃতিসন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতা, মাটি ও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত সৈয়দ মহসীন আলী। তিনি মৌলভীবাজারের মানুষকে চোখের জলে ভাসিয়ে অকালেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর চলে যাওয়া তিন বছর হতে চললো; কিন্তু এখনো মৌলভীবাজারের মানুষ তাঁর শোক কাটিয়ে ওঠতে পারেনি পূরণ হয়নি তার শূন্যস্থান। যদিও তাঁর সহধর্মিনী সৈয়দা সায়রা মহসীন, এমপি, স্বামীর আদর্শপ্রতিষ্ঠায় জনমানুষের একজন হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তবু সৈয়দ মহসীন আলীর অভাব কোনদিনই পূরণ হবার নয়।
১৪ সেপ্টেম্বও সৈয়দ মহসীন আলীর প্রয়াণ দিবসকে সামনে রেখে আমার এই নিবন্ধের অবতারণা। সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। এ-নেতা দেশ ও দেশের মানুষকে অনেক দিয়েছেন, কিন্তু নেননি কিছুই, সে কারণে অনেকেই তাকে ‘হাজি মুহাম্মদ মহসীন’ এর সাথে তুলনা করেন। বেঁচে থেকে সে যেন হাজী মুহাম্মদ মহসীনের মতোই দানশীল ও মানবদরদী হয়। জীবনে তিনি তা-ই হয়েছিলেন। সৈয়দ মহসিন আলী আমৃত্যু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত থেকে গণমানুষের সেবাই নিজকে উৎসর্গ করেছিলেন। ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে এবং ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু মৌলভীবাজার সফরে এলে ছাত্রলীগের পক্ষে ব্যতিক্রমী তোরণ নির্মাণ করে তিনি জাতির জনকের নজর কাড়েন। সিংহ হৃদয়ের মহসীনকে চিনতে ভুল করেননি বঙ্গবন্ধু, তিনি তাকে কাছে টেনে নেন পরম মায়ায়। কোন প্রলোভন সৈয়দ মহসীন আলীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। যখন দেশের অনেক বড় বড় নেতা নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বাজারের পন্যের মতো বিক্রি হয়েছেন সে-অবস্থা ও সময়কে তিনি পায়ে মাড়াতে সাহস দেখিয়েছেন। বরং নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করে গেছেন। আজকের যুগে তাঁর মতো এমন নির্লোভ, নির্মোহ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা পাওয়া বিরল।
১৯৭১ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধকালীন সিলেট বিভাগ সি.এন.সি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে সন্মুখযুদ্ধে নিষ্ঠার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সন্মুখসমরে আহত হয়েও তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বাংলদেশকে শত্রুমুক্ত করতে সাহসী বীরের ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি সিলেট জেলা ও বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দ মহসীন আলী তিনবার মৌলভীবাজার পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন একজন খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনে বিএনপির ডাকসাইটে জনপ্রিয় নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী (প্রয়াত) সাইফুর রহমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সৈয়দ মহসীন আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং একই দিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা তথা পুরো মৌলভীবাজারের উন্নয়নে অনেক অনেক কাজ করে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর সপ্নের আলোকে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার, কিন্তু অকাল মৃত্যুর কারণে ইতি ঘটে গেল সব কিছুর।
বীর মুক্তিযোদ্ধ সৈয়দ মহসীন আলী মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে গুলিবিদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সিলেট অঞ্চলের সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবদান রেখেছেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তৎকালীন মৌলভীবাজার মুহকুমার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভায় পরপর ৩ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সৈয়দ মহসীন আলী। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে পুরস্কৃত হন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন।
সৈয়দ মহসীন আলী শুধু একজন জননেতাই ছিলেন না তিনি ছিলেন শিল্প-সাহিত্যের প্রতি বিশেষ অনুরাগী। ধ্রুপদী, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের গানই তার মুখস্ত ছিলো। তার স্মৃতিতে প্রায় ৫ হাজার গানের সংগ্রহ ছিলো। সমাজকল্যাণে তার প্রিয় সংগীত ছিলো ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ অথবা ‘আমরা করবো জয়’। এক কথায় বলতে গেলে সৈয়দ মহসীন আলী ছিলেন একজন স্বভাবশিল্পী। এ কারণেই তিনি বিভিন্ন সাহিত্য-সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নিঃসংকোচে তাঁর উদার হাত প্রসারিত রাখতেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দেশের বড় বড় সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় ছিল, যে সাংবাদিকদের তিনি সব সময় সন্মান করতেন, এবং তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতেন সেই সাংবাদিকদের একটা অংশ সমাজকল্যাণ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সৈয়দ মহসীন আলীর উদার ও সহজ-সরল জীবনের বিশেষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া বা যেততেন বিষয় নিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করেছেন। কিন্তু এসবে ভ্রুক্ষেপ না করে সৈয়দ মহসীন আলী তাঁর নিজের কাজটি করে গেছেন। তাঁর সততা নিয়ে চরম শত্রুও কোনদিন কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। ব্যক্তি চরিত্রে সারল্যতা, দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে করেছিল অন্যদের চেয়ে করেছিল আলাদা। তিনি যেমন সাদাকে সাদা বলতেন তেমনি কালোকে কালো বলতে দ্বিধান্বিত ছিলেন না। ভন্ডামী, অসাধুতা, হটকারীতাকে তিনি ঘৃণা করে গেছেন আজীবন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে সৈয়দ মহসীন আলীর সমাজসেবা ও জনকল্যাণের অবদান সম্পর্কে অবহিত ছিলেন বলেই, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর পদটি তাকে উপহার দিয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগের জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কুচক্রিমহল বিশেষ করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে পদে পদে তাঁকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্নের চেষ্টা করেও সফলকাম হয়নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ ও ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীত্ব বা ক্ষমতার বলয়ে থেকে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি কালো টাকা আর্জন করে “আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ”গণমাধ্যমে প্রায়ই এ ধরনের সংবাদ বা প্রতিবেদন দেখতে পাই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বলয়ে থেকেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে চার্টার বিমান ভাড়া ও চিকিৎসার খরচ মিটাতে বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়িদের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাঁর পরিবারকে। এতেই বোঝা যায় রাজনিীতিবিদ হিসেবে তিনি কতটা সৎ ছিলেন।
সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমে সৈয়দ মহসীন আলীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত অনেক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও তাঁকে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর পদ থেকে সরাননি। বরং তাঁকে ডেকে নিয়ে তার সততা ও দেশ প্রেমের প্রশংসা করেছেন। সৈয়দ মহসীন আলীর মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে আনিত শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেত্রী শেখ হাসিনা এই মহান নেতাকে কতটুকু স্নেহ করতেন তার প্রমাণ শেখ হাসিনার অভিব্যক্তি। ইউটিউবের সেই ভাষণের ভিডিওটি বলে দেয় সৈয়দ মহসীন আলীর প্রতি শেখ হাসিনার স্নেহ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কতটা ছিল, এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, সৈয়দ মহসিন আলীর পতœীকে তার প্রয়াত স্বামীর শুন্য আসন থেকে এমপি নির্বাচিত করেন।
ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী থেকে দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কিভাবে একজন জনপ্রিয় জাতীয় নেতায় প্রতিষ্ঠিত হতে হয় তার জলন্ত উদাহরণ ছিলেন সৈয়দ মহসীন আলী। মৌলভীবাজারে অসম্ভব জনপ্রিয় মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুরোটা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও গণমানুষের কল্যাণে। গণমানুষের রাজনীতি করতে যেয়ে তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি কিছু অংশ বিক্রি করতে হয়েছে। প্রগতিশীল, সংস্কৃতিমনা ও কবিতানুরাগী এই রাজনীতিক তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের আভিজাত্য ছেড়ে প্রথাগত চিন্তা-চেতনার উর্ধে উঠে মিশতে পেরেছিলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে গরীব, দুঃখী, দুস্থ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সাক্ষাত “হাজী মহসিন”। তার কাছে সাহায্যের জন্য দ্বারস্থ হয়ে কেউ কোনদিন খালি হাতে ফিরে যায়নি। তাঁর বাসভবন ছিল সবার জন্য সবসময় উন্মুক্ত। তাঁর বাড়িতে একবেলা খায়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুঁজে মেলা ভার।
সৈয়দ মহসীন আলী তার কর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি সৈয়দ মহসিন আলীকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৪’ প্রদান করে। ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাঁকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা ২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১৬ সালে সৈয়দ মহসিন আলী দেশের সব’চে মর্যাদাশীল পদক ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত হন।
এ কথা ভাবতেই মন যেন কষ্টে কেমন কুঁকড়ে যায়; সৈয়দ মহসীন আলী আর কোন দিন ফিরে আসবেন না আমাদের মাঝে। তবু এ কষ্টকে বুকে ধারণ করে মৌলভীবাজারের হাজার হাজার মহসীন ভক্ত ও অনুরাগী তাঁর আদর্শ ধারন করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ধাবমান নৌকা, যার কান্ডারী এখন সৈয়দ মহসীন আলীর পতœী সৈয়দা সায়রা মহসীন, এমপি। তিনি তাঁর স্বামীর অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে শত শোক যাতনা ভুলে নেমে এসেছেন রাজনীতির মাঠে। ছায়া হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছেন শোকে মুহ্যমান নেতা-কর্মীদের পাশে। তবু তবু সৈয়দ মহসীন আলীর চেয়ারটি খালিই পড়ে আছে এবং খালি পড়েই থাকবে।
পরিশেষে বলতে চাই, সৈয়দ মহসীন আলী ছিলেন, মৃত্তিকার সন্তান, মাটি, মানুষের বরপুত্র ও বরেণ্য রাজনীতিক। কাজেই শারীরিক মৃত্যু হলেও তাঁর আত্মা ও আদর্শের মৃত্যু হয়নি। তাঁর আদর্শ অম্লান অমলিন। তিনি তার কর্মের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে, অন্তরের মণিকোঠায়। সৈয়দ মহসীন আলীর মহাপ্রয়াণের তিনপূর্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা কেউ ভাবতেই পারছিনা, সৈয়দ মহসিন আলী আমাদের মাঝে নেই । তবু তিনি আছেন, এবং থাকবেন আমাদের মাঝে হয়তো সশরীরে নয়, থাকবেন অন্য চেতনায়, অন্য অবয়বে।
মন্তব্য করুন